প্রিমাভেরা গ্যালারি অব বিডি আর্ট: বিপাশা হায়াত এর পেইন্টিং জেকসন হাইটসের ৭৪ স্ট্রিটে
নিজস্ব প্রতিনিধি : খবরটা আশ্চর্য হওয়ার মতোই। জনপ্রিয় অভিনেত্রী এবং চিত্রশিল্পী বিপাশা হায়াতের পেইন্টিং এখন নিউইয়র্কে, এই জেকসন হাইটসে। আমাদের এত কাছে।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশীদের কাছে জনপ্রিয় যে কয়টা জায়গা আছে তার মধ্যে জেকসন হাইটস অন্যতম। তারমধ্যে ব্যাস্ততম রাস্তা হচ্ছে ৭৪ স্ট্রিট। জ্যাকসন হাইটস রুজভেল্ট এভিনিউতে ট্রেন থেকে নামলে যে রাস্তাটা চোখে পড়ে সেটাই। আশেপাশে প্যাটেল ব্রাদার্স আর আইএসপি বাদ দিলে আশেপাশে বাংলাদেশীদের আধিপত্য চোখে পড়ে বেশি। সেই ৭৪ স্ট্রিটের টিডি ব্যাংক এর উল্টোপাশে আইএসপি-র দোতলায় একটি নতুন আর্ট গ্যালারি হয়েছে প্রিমাভেরা-র উদ্দোগে। প্রিমাভেরা-গ্যালারি অব বিডি আর্ট। ফেব্রুয়ারি প্রথম দিন থেকে এই গ্যালারিতে রাখা হয়েছে বিপাশা হায়াতের আঁকা চব্বিশটি চিত্রকর্ম। ঠিকানা: ৩৭-০৭ ৭৪স্ট্রিট, দ্বিতীয় তলা, সুইট নম্বর-৩। জ্যাকসন হাইটস, এন ওয়াই-১১৩৭২। উদ্দোক্তাদের মতে, বিপাশা হায়াত এর পেইন্টিং দেখতে হলে আগে থেকে রিজার্ভেশন নিয়ে আসা ভালো। তাহলে সোসাল ডিস্টেনসিং বজায়ে রাখা যায়। রিজাভেশনের ফোন: ৬৩১-৮০৫-১০৫১।
সরাসরি কথা হল বিপাশা হায়াতের সঙ্গে।
………………………………………………………………….
আপনার চিত্রকর্ম জ্যাকসন হাইটসে। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের এত কাছাকাছি। আপনার কী মনে হচ্ছে?
: প্রথমত আমি খুবই এক্সাইটেড যে জ্যাকসন হাইটসে একটা গ্যালারি হয়েছে যেখানে বাংলাদেশি আর্টিস্টদের চিত্রকর্ম জায়গা পাবে। জ্যাকসন হাইটস বাঙালিদের প্রাণ কেন্দ্র। এরকম জায়গাতেই একটা আর্ট গ্যালারি খুব দরকার ছিল। তাই প্রিমাভেরা কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাতে চাই। দর্শকের সঙ্গে আর্টিস্টের যে কথোপকথন সেটা এখন আরও অর্থবহ হবে।
আপনার এই কাজগুলোর বৈশিষ্ট কি?
: আমার এই সিরিজের নাম রাখা হয়েছে ‘ইনসাইডার’। আমি বলব এটা প্রিমাভেরা কর্তৃপক্ষের দূরদৃষ্টির নির্দশন। আমার ভাবনার সাথেও নামটা মিলে গেছে। আমি আসলে ছবি আঁকি না ছবি প্রকাশ করি। আমি ছবির মাধ্যমে আমার ভেতরের ভাবনাগুলো দৃশ্যমান করার চেষ্টা করি। আমি মনে করি, আমরা যখন কথা বলি তারচেয়ে বেশি কথা বলি যখন কিছু বলি না। আমার কাছের মানুষেরা জানেন, আমি যখন ছবি আঁকি তখন আমাকে চোখ বন্ধ করে ভাবতে হয়। ওই মুহুর্তে আমার ভেতরে যে ভাবনা চলে সেটাকেই আমি ক্যানভাসে আনার চেষ্টা করি। তাই এবারের ছবিগুলোতে যেমন রঙ পাওয়া যাবে তেমন বৈরি সময়ের সঙ্গে যুদ্ধটাও পাওয়া যাবে।
কিছু ছবি আছে যেখানে আমি এই পৃথিবীর প্রাচীনতম মানুষগুলোর ভাষা আবিস্কারের চেষ্টা করেছি। কারন আমি মনে করি, সভ্যতার যাত্রায় প্রাচীনতম যে মানুষগুলো ছিল তাদের সাথে আমাদেও কোনো পার্থক্য নাই। তাই তাদের ভাষাগুলো বুঝতে চাই তাদেরকে বোঝার জন্য। পাশাপাশি আমাদের ভাষাগুলো আবিস্কার করতে চাই আমাদের নিজেদেরকে বোঝার জন্য।
আপনার চিত্রকর্ম দেখতে এলে আপনার সাথে কি দেখা হবে?
: হ্যাঁ অবশ্যই দেখা হবে। দুই ভাবে এই সাক্ষাৎ হতে পারে। এক, চিত্রকর্মের মাধ্যমে। ভাবনার আদান প্রদানের মাধ্যমে। দুই, সরাসরিও দেখা হতে পারে।
আপনার এখনকার ব্যস্ততা কী নিয়ে?
: এখন আমার তিনটা কাজ-নাটক লিখা, ছবি আঁকা এবং পড়ালেখা করা। রোমান এম্পায়ারের আগে পড়ে সে সভ্যতার উত্থান পতন তার সাথে ধর্মের যে প্রভাব এবং সংমিশ্রন সেটা নিয়ে পড়ার চেষ্টা করছি। এখান থেকে নিজেকে এবং নিজের কাজগুলোকে আবিস্কারের চেষ্টা করছি।
: সামনের পরিকল্পনা কী?
এখন তো আসালে বেশির ভাগ পরিকল্পনাই থাকে বাচ্চাদের কেন্দ্র করে। এনসিয়ান্ট সোসাইটির গতি প্রকৃতি কিকরে আমার কাজে আনতে পারি সেটা নিয়ে গবেষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে। আপনি চিন্তা করলে দেখবেন, যেকোনো সভ্যাতার উথানের পেছনে কিন্তু আরেকটি সভ্যতার পতনের ধারাবাহিকতা থাকে। এটা যে কত বেদনার এবং যন্ত্রনার সেটা এর মধ্যে পুরোপুরি ডুবে না গেলে বোঝা যায় না। আমি মনে করি প্রত্যেকেরই সেটা জানা খুব জরুরি। সামনের সময়টাতে এটা নিয়ে কাজ করতে চাই।
সবশেষে সবাইকে বলব, ‘প্রিমাভেরা’ নিউইয়র্কে একটি নতুন গ্যালারি। চলুন আমরা সবাই ছবি দেখতে যাই। আমাদের পরবর্তি প্রজন্মকে চিত্রকর্মে আগ্রহি করে তুলি। তাহলে তাকে ভবিষ্যৎ বিশে^র সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য উপযুক্ত করে তৈরি করা হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে বিপাশা হায়াত এর একক চিত্র প্রদর্শনী হয়েছিল ম্যানহাটানের নিউইয়র্ক ডিজাইন সেন্টারের ট্রান্সফরম গ্যালারিতে। মে ২০১৯ থেকে মে ২০২০ পর্যন্ত। বিপাশা হায়াতের চিত্রকর্ম প্রদর্শনের পর শিঘ্রই প্রিমাভেরায় আসছে ‘আইরিসিস’ এর পোষাক প্রদর্শনী।