বদ্ধ ঘরে শিল্পপাঠ – রাকিন নাওয়ার
রাকিন নাওয়ার : কখনো বোধহয় সকল প্রতিকূলতা একসাথে হানা দেয়,তাই বলে দু:খকে আঁকড়ে ধরে বিষণ্ণতায় ডুবতে হবে তা নয়। পৃথিবী যেন আজ নিষ্প্রভ ও নিশ্চল। আমরা ভাবি বিশ্ব আজ আমাদের উপর বিমুখ হয়েছে কিন্তু আমরাই ত পৃথিবীর অপরূপ প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্যকে আঘাতের পর আঘাত করে রোগাক্রান্ত করেছি।এবার রোগাক্রান্ত হচ্ছি আমরা। যেন নিউটনের ৩য় সূত্র আবারো প্রমান হয়ে যায়। করোনা মহামারীতে আজ মানবজাতি ঘরবন্দি। কিন্তু একজন শিল্পশিক্ষার্থী হয়ে কি আর শিল্পের অন্বেষণ, শিল্পের পাঠ নেয়া কি থামিয়ে রাখা চলে?
“Learners in quarantine ” সিরিজের শিল্পকর্মগুলো একজন শিল্পছাত্রের এই বর্তমান পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করেই চিত্রায়িত।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ।পাঠদানের বিকল্প হিসেবে চলছে অনলাইন ক্লাস।এই বিকল্পব্যবস্থার মুহূর্তকে চিত্রায়িত করার প্রয়াস।আয়নার সামনে বসে নিজেকে আঁকাটা চারুশিক্ষা অঙ্গনে আসার পূর্ব থেকেই অভ্যাস,আলাদা এক তৃপ্তি নিজেকে রঙতুলির মধ্য।দিয়ে রাঙাতে।এই সিরিজের ছবিগুলোতেও এর ব্যতিক্রম নয়।প্রত্যেক ছবিতেই নিজেকে রাখার একটা প্রয়াস, কখনো সাবজেক্ট হিসেবে কখনওবা অবজেক্ট। ছবি আঁকার সব সরঞ্জাম কে নিয়ে বদ্ধঘরের পুরো পরিবেশকেই আঁকার চেস্টা, অগোছালো অবস্থায় সরঞ্জামাদি সামনে পড়ে রয়েছে।
অগোছালো এই পরিবেশ,ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রুদ্ধস্বর কম্পোজিশনের মধ্যে শিল্পের রস আরোহণের চেস্টা। ব্যাকরণগত বাস্তবানুগ চিত্র নির্মাণে সচেষ্ট। এই অনির্দিষ্টকালীন বন্ধে পরিবারের সাথে থাকার দরুণ ছোটবোনের অনলাইন ক্লাসকে কেন্দ্র করে আঁকা।সেখানেও যেন আয়নার নিজ অবয়ব এর প্রতিফলনে নিজেকে ধরে রাখার চেস্টা,এই সময়টার সাক্ষী হয়ে থাকার আবেদন। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি বলেছিলেন, ‘অনেকের মাঝে নিজেকে খুঁজে পাবে না, তাই নিজেকে আলাদা করো।’ নিজেকে আলাদা করে রঙতুলির সাথে বোঝাপড়া করে নিতে চেয়েছি বারংবার। এখনো করে চলেছি,ছুটে চলেছি শিল্পরস আহরণের খোঁজে।
লেখক : চিত্র শিল্পী ।