বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী, মা এরও ৫০। হাসান মাহমুদ
ছবিতে আমার ডানপাশের বয়োজ্যেষ্ঠ নারীর নাম হাসিনা। তবে সামনে শেখ নেই, পেছনে আছে বানু। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যেদিন দেশ স্বাধীন হয় সেদিন বিজয়ের আনন্দ এসেছিল হাসিনা বানুর ঘরেও। যুদ্ধের পুরো সময়টা জুড়ে কত সংগ্রাম কত পথ পেরিয়ে একটি শিশুর জন্ম দেন তিনি। আর এই কারনে আমার চোখে হাসিনা বানু রত্নাগর্ভা একজন মা।
৯ মাস যুদ্ধের পর দেশে বিজয় আসে, আর দশ মাস দশ দিন পেটে থাকার পর আসে বিপ্লবী। সেদিন জন্ম নেয়া মেয়েটির ডাক নাম রাখা হয়েছিল বিপ্লবী। পুরো নাম শিরীন সুলতানা ঠিক থাকলেও দেশে ঘটে যাওয়া বিপ্লবের কারনেই এই নামকরন।
কিন্তু এই বিপ্লবী নাম যেন তার পিছু ছাড়েনি কখনো। হাসিনা বানু যেমন স্বামী মারা যাবার পর এক হাতে দুই মেয়ে আর ছোট একটি ছেলেকে মানুষ করেছিল খুব কষ্টে। বিপ্লবীর ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়।
বিয়ের পর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেলেও ছেলে যখন কিন্ডারগার্টেনে ভর্তী হয়, বিল্পবীও ভর্তী হন ক্লাস নাইনে। মা-ছেলে একসাথে যেতেন স্কুলে। শত বাধা পেরিয়ে শেষে করেছিলেন পড়াশোনাও। তিনি দুই ছেলে মেয়েকে লেখাপড়া শিখাতে গিয়ে ও সংসার সামলে এখনো করে যাচ্ছেন শিক্ষকতা।
বিপ্লবীর মেয়েটা ছোট থেকেই মেধাবী। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালো সাবজেক্টে পড়াশোনা শেষে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হলেও ছেলেটা ঠিক তা হয়নি। মানুষ হবার বদলে হয়েছে পাগল। যদি ভাবেন আমিই সেই ছেলে তবে ঠিকই ধরেছেন।
শিরীন সুলতানা বিপ্লবী আমার মা, আর হাসিনা বানু আমার নানী। আমার জীবনে যদি সামান্যতম কোন অর্জনও থাকে তা শুধু এই দুই নারীর জন্য। আমার আমিতে যাদের ভুমিকা অনস্বীকার্য।
বাংলা মায়ের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে আজ আমার মার বয়সও হলো ৫০। একই দিনে দুই মায়ের জন্মদিন। ভাবতেই ভালো লাগে তার জন্মদিনে দেশে জুড়ে চলছে বিজয়োৎসব। মাঝে মাঝে রজনীকান্তের মত তাই বলতে ইচ্ছা করে-
‘‘আমি অকৃতি অধম বলেও তো কিছু
কম করে মোরে দাওনি;
যা দিয়েছ, তারি অযোগ্য ভাবিয়া
কেড়েও তা কিছু নাওনি”
ছুটির দিনেও দিনরাত ছুটাছুটির মাঝে ১০ মিনিটের জন্য দেখা করতে গিয়েছিলাম মা আর নানীর সাথে। সাংস্কৃতিক অঙ্গন ও চাকরীর কারনে প্রতিবার না যাওয়া হলেও এবার তা হতে দেইনি। অন্তত একটা ছবিরও তো দরকার হয়, যদি লিখতে যাই-
“শুভ জন্মদিন মা”
লেখক : প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক, পাবনা।