রাবি’র সাবেক ছাত্র পাবনার আলোকিত একজন মানুষ অধ্যাপক শিবজিত নাগ- কামাল আহমেদ সিদ্দিকী
সারা জীবন অন্যায়ের প্রতিবাদী কন্ঠস্বর, সৎ, নীতিবান, আপোষহীন, সৃজনশীল মনের অধিকারী, পরোপকারী, এবং প্রচার বিমুখ গুনী এই শিক্ষক অধ্যাপক শিবজিত নাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যলয় থেকে ১৯৭৪ সালে গণিত বিষয়ে অনার্সসহ মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দ্বারা নির্বাচিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট সদস্য এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর এরও সিনেট সদস্য ছিলেন।
অধ্যাপক শিবজিত নাগ ১৯৫১ সালের ১৫ ডিসেম্বর পাবনার আব্দুল হামিদ রোডের (বর্তমানে নাগ মার্কেট) এক সমভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা: স্বর্গীয় মনিন্দ্রনাথ নাগ এবং মাতা: স্বর্গীয় প্রতিমা নাগ। ৫ ভাই ১ বোনের মধ্যে তিনি জ্যৈষ্ঠ সন্তান। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বর্তমানে তিনি ও তার ছোট ভাই দেবজিত নাগ জীবিত আছেন। একমাত্র বোন অকাল প্রয়াত শিবানী নাগ পাবনার মানুষের কাছে অতি পরিচিত একজন কন্ঠ শিল্পী ছিলেন।
তিনি পাবনা জেলা স্কুল থেকে ১৯৬৬ সালে এসএসসি, সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যলয় থেকে ১৯৭৪ সালে গণিত বিষয়ে অনার্সসহ মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পন্ন করে একই সনে শিক্ষগতা পেশায় যোগদান করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি ৭০’র দশমে তিনি সাংবাদিকতা শুরু করেন পাবনা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বিবৃতি ও রাজশাহী থেকে সরকারী ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত “দৈনিক বার্তা” পত্রিকায়। দৈনিক বার্তার পাবনা জেলা সংবাদদাতার পাশপাশি দৈনিক বার্তা সংবাদদাতা এ্যাসোশিয়নের সারাদেশের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন অত্যন্ত সুনামের সাথে তিনি দীর্ঘদিন।
প্রায় ৩৪ বছর কলেজে শিক্ষকতা জীবনে তিনি পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, সরকারি বুলবুল কলেজ, বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ, খুলনা বিএল কলেজ, রাজশাহী সরকারি কলেজ, জামালপুর সরকারি জাহেদা শফির মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ, অধ্যাপক ও গণিত বিভাগীয় প্রধানসহ বিভিন্ন পদে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি পাবনা সরকারি বুলবুল কলেজের অধ্যক্ষ হিসাবে অবসর গ্রহন করেন। ২০১০ সালের ২ অক্টোবরে তিনি পাবনার বেসরকারি সৃজনশীল সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাবনা কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসাবে যোগ দেন। তিনিই এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রথম অধ্যক্ষ । কলেজের শিক্ষকতা জীবনের পরে স্কুলের দায়িত্ব নিয়ে তিনি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সুন্দর জীবন গড়ে তোলার জন্য নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। স্কুলটি ২০০৯ সালে যখন যাত্রা শুরু করে তখন জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনাররা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করতেন। শিবজিত নাগের অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পর পাঠদান থেকে শুরু করে সার্বিক বিষয়ে উল্লেখযোগ্য দৃশ্য ও অদৃশ্যমান ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটির পরীক্ষার ফলাফলে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন অব্যহত রয়েছে।
স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক আর শিক্ষার্থীরা সব সময় গভীর শ্রদ্ধার চোখে দেখেন প্রফেসর শিবজিত নাগ স্যারকে। প্রফেসর শিবজিত নাগ স্কুলে যোগ দেয়ার পর থেকে নতুন এক আন্দোলন গড়ে তোলেন। তার আন্দোলন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কোচিং সেন্টারে পড়া, নোট বই, গাইড বই পড়ার বিরুদ্ধে তাঁর মুল আন্দোলন। তিনি বিশ্বাস করেন স্কুলের শিক্ষকরা আন্তরিকভাবে শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন পড়া বুঝিয়ে দিলে তাদের অন্য কোন স্থানে পড়ার আর দরকার হয়না। ক্লাসের পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য তিনি স্কুলে গড়ে তুলেছেন দারুণ এক পাঠাগার। শিক্ষার্থীরা নিজেদের আগ্রহেই সেই পাঠাগার থেকে বই সংগ্রহ করে। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সুন্দর হাতের লেখার চর্চা, কবিতা আবৃত্তি, বিতর্কসহ সকল সাংস্কুতিক অনুষ্ঠান ও খেলাধুলায় শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করে তুলেছেন তিনি।
শিক্ষকতার পাশাপাশি সাংবাদিকতা এবং অন্যান্য সামাজিক কার্যক্রমে শিবজিত নাগ নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন দীর্ঘ ৫০ বছর যাবৎ। তিনি পাবনা প্রেসক্লাবের দুই বছর মেয়াদের কার্যনির্বাহী কমিটির দু’বার সেক্রেটারি এবং তিনবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী বই মেলা উদযাপন পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন দীর্ঘদিন ধরে।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দ্বারা নির্বাচিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট সদস্য এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর এরও সিনেট সদস্য ছিলেন।
তিনি বর্তমানে পাবনা গণশিল্পী সংস্থার সভাপতি, জেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি, অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরীর কার্যনির্বাহী সদস্য , জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ এর সহ সভাপতি, শিবানী নাগ স্মৃতি কেন্দ্র পাবনার সভাপতি, বাংলাদেশ গণিত সমিতির আজীবন সদস্য, ঢাকাস্থ পাবনা সমিতি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্র সমিতির জীবন সদস্যসহ বিভিন্ন সংগঠনে সক্রিয়ভাবে অবদান রেখে চলেছেন। পাবনার সর্বস্তরের মানুষের কাছে অধ্যাপক শিবজিত নাগ সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলোকিত একজন মানুষ হিসেবে পরিচিত।
আলোর মশাল নিয়ে তিনি ৭৩ বছর বয়সেও নিরলস ভাবে নিরবে কাজ করছেন সমাজের ক্ষত দূর করে পরিচ্ছন্ন শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষাঙ্গন, প্রতিষ্ঠা ও আলোকিত প্রজন্ম জাতিকে উপহার দেওয়ার জন্য।
লেখক : সাংবাদিক ও সমাজ কর্মী, সাবেক সহ-সভাপতি- পাবনা প্রেসক্লাব।