সবকিছু মোকাবেলা করে বিশ্ব শান্তিরক্ষায় কাজ করবে বাংলাদেশ

0

হীরেন পণ্ডিত : ৩৬ বছর ধরে শান্তিরক্ষা মিশনে সুনামের সঙ্গে কাজ করে আসছে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ। পেশাদার মনোভাব, অবদান ও আত্মত্যাগের ফলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে নিজের অবস্থানও সুসংহত করেছে বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী তাদের মিশন শেষ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা ও শান্তি-বিনির্মাণ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শান্তি স্থাপনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে সংশ্লিষ্ট দেশের জনগণের আস্থা অর্জন করার ফলে আমরা জাতিসংঘে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশের মর্যাদা লাভ করেছি।’ ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২৪’ উপলক্ষে এসব কথা বলেন।

‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা আমি গর্বভরে স্মরণ করেন এবং শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত বাংলাদেশের সব সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। বিশ্বশান্তির জন্য অকাতরে জীবন বিসর্জনকারী শান্তিরক্ষীদের আত্মত্যাগ গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন।

‘বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে এবং একই বছর ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলায় প্রদত্ত তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে বলেছিলেন, ‘মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শান্তি একান্ত দরকার। এই শান্তির মধ্যে সারা বিশ্বের সব নর-নারীর গভীর আশা-আকাঙ্ক্ষা মূর্ত হয়েছে রয়েছে।

ন্যায়নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত না হলে শান্তি কখনও স্থায়ী হতে পারে না।’ সাধারণ অধিবেশনে তিনি বিশ্বের সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থনের বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তখন থেকেই বাংলাদেশ বিশ্বের শান্তিপ্রিয় ও বন্ধুপ্রতীম সব রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছে এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের অধীনে পরিচালিত সব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে। বিশ্ব শান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে ‘জুলিও-কুরি শান্তি পদক’-এ ভূষিত করা হয়।’

‘জাতির পিতার দর্শন অনুসরণ করে বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তির একনিষ্ঠ প্রবক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আমরা ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ সংক্রান্ত ঘোষণা এবং কর্মসূচি রেজ্যুলেশন আকারে উত্থাপন করা হয় করি, যা ১৯৯৯ সালে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। পরবর্তীতে, জাতিসংঘ ২০০০ সালকে ‘আন্তর্জাতিক শান্তির সংস্কৃতি বর্ষ’ হিসেবে এবং ২০০১-২০১০ সময়কালকে ‘শান্তির সংস্কৃতি এবং অহিংসার দশক’ হিসেবে ঘোষণা করে। শান্তির বার্তাকে সর্বাত্মকভাবে সুসংহত করতে এবং এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়ন ‘শান্তির সংস্কৃতি’ প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য বলে বাংলাদেশ মনে করে।’

‘নারীর অধিকার ও জেন্ডার সমতা নিশ্চিতকরণে আমাদের প্রচেষ্টা ‘নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা এজেন্ডা’ বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখছে। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আমাদের নারীদের অংশগ্রহণের ফলে বাংলাদেশের সুনাম আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা যাতে আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিতে পারেন, সেজন্য আওয়ামী লীগ সরকারের সব প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।

আমি আশা করি, শান্তিরক্ষী সদস্যরা শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে তাদের বীরত্বপূর্ণ সাহস দ্বারা বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি শক্তিশালী শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবেন; সংঘাত প্র্রতিরোধ, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা, মানবাধিকার নিশ্চিত ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাবেন এবং দেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করবেন।’

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে গণতান্ত্রিক অনুশীলনের এক নতুন যাত্রা শুরু হয়। নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠিত হবার পরে নতুন প্রত্যাশা নিয়ে কাজ শুরু করে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দেখা যায় যে সরকারের উন্নয় কর্মকাণ্ড নানা ষড়যন্ত্রের একটি অশুভ ছায়া লুকিয়ে রয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে যারা দেশের উন্নয়নের গতিপথকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। এ সমস্ত দেশী ও বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের ঘৃণ্য লাভের জন্য দেশের অগ্রগতিকে বাধা দেওয়ার জন্য বদ্ধপরিকর। এই গোষ্ঠী বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী গোপন চক্রান্ত করে যাচ্ছে দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে।

একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির অনুসরণে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল এই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ না করে ভিন্নধর্মী কার্যপদ্ধতি গ্রহণ করে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এই স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী তাদের বাহ্যিক মিত্রদের দ্বারা চালিত হয় সরকারের অবস্থানকে দুর্বল করতে এবং দেশের অগ্রগতির চাকাকে বাধা দেওয়ার জন্য দেশবিরোধী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলেছে।

এই ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতা বাংলাদেশের উন্নয়নের কাঠামোর জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিদেশে বসে দেশ ও সরকার বিরোধী প্রচারণা বন্ধে এবং প্রবাসে আইনশৃঙ্খলা বিরোধী কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখা প্রবাসীদের দায়িত্ব। বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার ও বিষোদগার করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

স্বাধীনতার ৫৩ বছরে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা অর্জন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে নিজেদের শীর্ষ অবস্থানটি ধরে রাখা। পারস্পরিক যুদ্ধ-সংঘাত কখনো সুফল বয়ে আনতে পারে না। শান্তির জন্য যুদ্ধ-সংঘাত পরিহার করতে হয়। বিশ্বের সংঘাতময় অঞ্চলগুলোতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালে জন্ম হয় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের।

১৯৯৩-৯৪ সালে সবচেয়ে আলোচিত রুয়ান্ডা, সোমালিয়া ও বসনিয়া- এ তিনটি শান্তি মিশনে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আলোচনার কেন্দ্রমূলে আসে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দরিদ্র দেশের সেনাবাহিনী দক্ষতা এবং সামরিক জ্ঞানে রুয়ান্ডায় বেলজিয়ান, সোমালিয়ায় আমেরিকান ও বসনিয়ায় ফ্রান্স সেনাবাহিনীকে যে টেক্কা দিতে পারে তা জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট দেশের কর্মকর্তাদের চিন্তার বাইরে ছিল। ফলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তখন থেকে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় হতে থাকে।

তাছাড়া ১৯৯৪ সালে আফ্রিকার রুয়ান্ডার গণহত্যার সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেড গ্রæপ সেখানে নিয়োজিত ছিল। ১০০ দিনের গৃহযুদ্ধে তখন ৬ লক্ষাধিক মানুষ নিহত হয়।

স্থানীয় জনগণের আস্থা আর ভালোবাসাই জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশি সেনাদের মূলশক্তি। সব মিশনেই বাংলাদেশিদের এ দক্ষতা জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের মুগ্ধ করেছে। ব্যক্তিগত শৃঙ্খলা, প্রশাসনিক আর সামরিক দক্ষতার জন্য যে কোনো সামরিক কমান্ডারদের কাছে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা অপরিহার্য হয়ে ওঠেছে। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকান সেনাপতিরা বাংলাদেশি সামরিক কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও সাহসিকতায় মুগ্ধ ও আস্থাশীল।

‘মানবাধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি গোলযোগপূর্ণ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সেনাদের ভূমিকা সবাইকে মুগ্ধ করে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সেনাদের অংশগ্রহণে ফলে বিশ্বের বুকে বেড়েছে বাঙালি ও বাংলা ভাষার পরিচিতি। ধর্ম-বর্ণ গোত্র, রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্মীয় বিশ্বাস, আঞ্চলিক বৈষম্যকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা নিজেদের উৎসর্গ করেছেন বিশ্বমানবতার মহান সেবায়। পেশাগত দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, সততা ও মানবিক আচরণের কারণে তারা আজ সেসব দেশের মানুষের কাছে হয়ে উঠেছেন অনুকরণীয় আদর্শ।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর দুই দিনের বাংলাদেশ সফর বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিলো। সফরের নাড়ি-নক্ষত্র নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বলা হয় সফরটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বর্পর্ণ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের তৎপরতা বহুল আলোচিত। রাজনৈতিক দলগুলোর এক পক্ষ নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছিল এবং অপর পক্ষ কূটনৈতিক নিয়ম অনুসরণ করে বক্তব্য ও মন্তব্য দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে। জনগণের ইচ্ছাকে পদদলিত করে বাংলাদেশে কোনোভাবেই রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান প্রতিনিয়ত সুসংহত হচ্ছে এবং এই সুসংহত অবস্থানের কারণেই বাকি বিশ্বের নজর রয়েছে বাংলাদেশের ওপর। বাংলাদেশের সঙ্গে নানা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে উদাহরণস্বরূপ দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে সবাই ইতিবাচক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে থাকে।

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্র গৃহীত একটি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডাকে বাস্তবায়িত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ২২ মে, ২০২৪ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও র‌্যাবকে নিয়ে জার্মানির ডয়চে ভেলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। অতিসম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফর করেছেন। তার সফরে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক এক নতুন মোড় নেওয়ার আভাস পাওয়া যায়।

কিন্তু ২০ মে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমদ ও তার পরিবারের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরদিন প্রকাশিত প্রতিবেদনটি সচেতনরা বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিবেচনা করছেন। এটিকে তারা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশন থেকে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে বাদ দেওয়ার গভীর চক্রান্তের উৎস হিসেবে দেখছেন। যে তথ্যচিত্রের মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়, এটিকে অনেকেই কল্পকাহিনী হিসেবেই দেখছেন। প্রচারিত বক্তব্য ও চরিত্র প্রদর্শনে অসঙ্গতি পূর্ণ প্রামাণ্য চিত্রটিকে রহস্যজনক এবং ষড়যন্ত্রমূলক ভাবছেন।
সবাই অবগত আছেন, ১৯৮৮ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ সূচিত হওয়ার পর থেকেই এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করেছে। দেশের সামরিক বাহিনী, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্যের অন্তর্ভুক্তি এবং কার্যকলাপ দেশের ভাবমূর্তিকে শান্তি মিশনের শীর্ষ অবস্থানে উন্নীত করেছে।

এটি সর্বজনবিদিত-জঙ্গি, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মাদক, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, বিরোধ, বিচ্ছেদ, সংঘাত, সংঘর্ষ, অবৈধ ভূমি দখল, অনৈতিক প্রভাব বিস্তার ইত্যাদিকে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করার জন্য যেকোনো রাষ্ট্রকে অবশ্যই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হয়। এর ব্যত্যয় হলে সমাজে নৈরাজ্য এবং ফলস্বরূপ নানাবিধ বিশৃঙ্খলা, অসঙ্গতি, হতাশা, বিচ্যুতি, আত্মহত্যা এবং অসামাজিক কার্যকলাপ বিস্তার লাভ করে। ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অর্থ-প্রভাব-ক্ষমতালিপ্সু ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর দুর্বৃত্তায়ন রাষ্ট্রকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার নেতি-সহায়ক শক্তিরূপে আবির্ভূত হয়। এক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিক সামাজিক নিয়ন্ত্রণের নিয়ামকসমূহ অধিকতর অসহায় হয়ে পড়ে। সমাজকে পরিপূর্ণ বিধি ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং জননিরাপত্তা ও জনজীবন সুসংহত করার অতীব গুরুত্বপূর্ণ বাহন হিসেবে রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
দেশের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব সংস্থার নিরপেক্ষ কার্যক্রম সমধিক প্রশংশিত। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার আশ্রয়, পার্বত্য অঞ্চলে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা, জঙ্গি দমন থেকে শুরু করে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অতন্ত্র প্রহরী হিসেবে সব অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা রোধে এদের সামগ্রিক অভিযানের সুনাম উঁচুমার্গে অধিষ্ঠিত। সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে ইতোমধ্যেই এসব সংস্থার পারদর্শিতা, বিচক্ষণতা, সাহসিকতা সমুজ্জ্বল এবং সুদৃঢ় অবস্থান তৈরি করেছে।

সামরিক ও বেসামরিক দেশরক্ষা-অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষার যে পবিত্র দায়িত্ব তারা পালন করছে। তা শুধু দেশে নয় বিশ্বপরিমণ্ডলেও অত্যধিক খ্যাতির স্মারক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। তাদের ভূমিকাকে নানা অবাস্তব-ভিত্তিহীন-বানোয়াট এবং অসৎ উদ্দেশ্যে প্ররোচিত বলেই প্রতীয়মান হয়। এসব প্রসঙ্গ তুলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী হিসেবে অসাধারণ খ্যাতি অর্জনকারী বাহিনীকে শুধু অসম্মানিত করা হচ্ছে না, বরং বাংলাদেশকে শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বিরত রাখার অশুভ পায়তারা বলেই বিবেচনা করছে সকলেই।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে একটি বিভ্রান্তিমূলক প্রতিবেদন উপস্থাপনের প্রেক্ষিতে সেনা সদর বলেছে, শান্তিরক্ষী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘের কঠোর নির্বাচন এবং যাচাইকরণ প্রক্রিয়া অনুসরণপূর্বক সকল সময়ে সবচেয়ে যোগ্য এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাইকৃত সেনাসদস্যদের মোতায়েন নিশ্চিত করে। সর্বদা এ প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শান্তিরক্ষী নির্বাচনে উচ্চমানের আচরণবিধি এবং পেশাগত দক্ষতার দায়বদ্ধতা প্রমাণ করেছে। অথচ ওই তথ্যচিত্রে উপস্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে ডয়চে ভেলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছ থেকে কোনো মন্তব্য গ্রহণ করেনি।

পক্ষপাতমূলক ও একপেশে এ প্রতিবেদনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রশ্নবিদ্ধ। তথ্যচিত্রে অপ্রাসঙ্গিকভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে অপর একটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মানহানি করাই এর মূল অভিপ্রায় ছিল। যা তথ্যচিত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা বিনষ্ট করেছে। জাতিসংঘের কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা উচ্চপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং দক্ষতার সাথে কাজ করে। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তৃতীয় বৃহত্তম শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনতে অবদানের জন্য দেশটি বিভিন্ন সময়ে প্রশংসিত হয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিককে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিবেদনটি দেখেছি। আমাদের শান্তিরক্ষা বিভাগের সহকর্মীরা এ বিষয়ে যোগাযোগ করছেন এবং এই প্রতিবেদন সংশ্লিষ্টদের কাছে একটি বিবৃতি দিয়েছি। আমরা আবারও জোর দিয়ে বলতে চাই যে মহাসচিব এমন সব কর্মকর্তাকে শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠাতে অঙ্গীকারবদ্ধ, যারা দক্ষতা ও সততার সর্বোচ্চ মানদণ্ড মেনে চলেন।

মোহাম্মদ আলী আরাফাত, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী গাজার গণহত্যা নিয়ে ডয়চে ভেলে কে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করার আহবান জানান। তিনি বলেন গাজায় গণহত্যা নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও তা প্রচার করার জন্য জার্মানির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সম্প্রচার সংস্থা ডয়চে ভেলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ডয়চে ভেলের উচিত এর মধ্য দিয়ে মানবাধিকারের প্রতি তার অঙ্গীকার এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রমাণ দেওয়া। প্রতিমন্ত্রী বলেন, নিকট অতীতে ডয়চে ভেলে মানবাধিকার নিয়ে একটি রিপোর্ট করেছে। এতে কিছুদিন আগেও গৃহযুদ্ধ করা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করা হয়েছে, এটা মানা যায় না। মানবাধিকার নিয়ে যে কোনো সংস্থার অঙ্গীকারের আমি প্রশংসা করি। ডয়চে ভেলের যদি মানবাধিকারের প্রতি এত অঙ্গীকার থাকে, তারা সেটার প্রমাণ দিক। যদি সেটা তারা করতে না পারে, তাহলে ধরে নেব ডয়চে ভেলের প্রামাণ্যচিত্রটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একটা বিশেষ মহল বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এটি করেছে।

হীরেন পণ্ডিত: প্রাবন্ধিক, গবেষক ও কলামিস্ট

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.