মঞ্চসারথি আতাউর রহমান: বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে নিবেদিত প্রাণ
হীরেন পণ্ডিত : বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে যে কজন মানুষ নাট্যাঙ্গনকে বিকশিত করেছেন তাঁদের অন্যতম মঞ্চসারথি আতাউর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে নাট্যচর্চাকে শাণিত করে চলেছেন নিরলসভাবে। দেশের অন্যতম নাট্য নির্দেশক, নাট্য সমালোচক, অভিনেতা, কবি, প্রাবন্ধিক ও সংগঠক তিনি।
মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনাদর্শ বুকে ধারণ করে প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে ২০০৫ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু আদর্শ ফোরাম কাজ করে যাচ্ছে। গবেষণামূলক, ঐতিহাসিক এবং বৈচিত্র্যময় কার্যক্রমের মাধ্যমে সংগঠনটির দেড় দশক অতিক্রম করেছে। বঙ্গবন্ধু আদর্শ ফোরামের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি লোক-গবেষক শামসুজ্জামান খানের প্রয়াণে তার স্থলাভিষিক্ত হন মঞ্চসারথি আতাউর রহমান।
সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বাদল চৌধুরী; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুন নিসা; সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, অধ্যাপিকা পান্না কায়সার, কবি অসীম সাহা, নাট্যব্যক্তিত্ব পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মঞ্চসারথি আতাউর রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক উপকমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সংস্কৃতি বিকাশে নাটকের এক বিশাল ভূমিকা রয়েছে। তিনি মনে করেন নাটক অত্যন্ত কঠিন, সত্যকে সে তুলে আনে। সে জন্য নাটক সময়ের থেকে এগিয়ে থাকে। নাটক কখনো বঞ্চনা করে না। নাটক জীবনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে জানে। প্রাপ্তির আশায় কাজ না করে, মনের আনন্দে কাজ করার মাঝেই প্রকৃত আনন্দকে খুঁজে পাওয়াই জীবনের অন্যতম লক্ষ্য।
মঞ্চসারথি আতাউর রহমান ১৯৪১ সালে ১৮ জুন নোয়াখালীতে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলজীবনেই সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পা রাখেন আতাউর রহমান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নটীর পূজা’ নাটক দেখে তাঁর মঞ্চপাঠ শুরু। ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে শহীদুল্লাহ হল থেকে আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তিনি প্রথম মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেন।
১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন আতাউর রহমান। ১৯৭২ সালে ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ এর মাধ্যমে তাঁর নাট্য নির্দেশনা শুরু। এরপর তিনি নির্দেশনা দেন বাদল সরকারের লেখা ‘বাকি ইতিহাস’। এর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে নাটক প্রদর্শন শুরু হয়। এরপর নিজের দলে ও অন্য দলের হয়ে অসংখ্য নাটকে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
মঞ্চ নাটকের নির্দেশনার পাশাপাশি আতাউর রহমান অভিনয়ও করছেন সমানতালে। রেডিও, টেলিভিশনেও রয়েছে তার সরব উপস্থিতি। এছাড়া নাট্য বিষয়ক বই, নাট্যসমালোচনা, উপস্থাপনা, শিক্ষকতা, টেলিভিশন নাট্যকার, প্রবন্ধকার, বক্তা সবক্ষেত্রেই রয়েছে আতাউর রহমানের সরব পদচারণা। ২০০১ সালে নাট্যক্ষেত্রে অবদানের জন্য একুশে পদক পান আতাউর রহমান।
বিনোদনের মাধ্যমে ব্যক্তি জীবনের ও সমাজের নানা বিষয় খুঁজে পাওয়া যায়। দর্শক তা মঞ্চে খুঁজে পান। আগের চেয়ে এখন মঞ্চের অবস্থা অনেক ভালো। নতুন নতুন নাটক ও নতুন দল আসছে এটা খুবই আশাপ্রদ। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটক নিয়ে কাজ করলেও লেখালেখিতেও অভ্যস্ত তিনি। এ পর্যন্ত তার ১৬টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বিদেশি নাটকের অনুবাদ করেছেন ১০টি নাটক।
তাঁর ভাষায় আমার জীবন ধন্য করেছে আমার প্রিয় মাতৃভূমি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের শুভক্ষণে এবং আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের অর্ধশত বর্ষের প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধুকন্যা, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে ধন্য করেছেন। উল্লেখ্য ২০২১ সালে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন । বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে মিশে আছে সংস্কৃতিকর্মী, নাট্যজন ও নাট্যকর্মীদের ইতিহাস। স্বাধিকারের নানা পর্যায়ে তাদের ভূমিকা অনন্য। একেবারে শূন্য থেকে বাংলাদেশের নাটক এখন বিশ্বমানে পৌঁছে গেছে গত ৫৩ বছরে।
তিনি মনে করেন, নাটক শুধু বিনোদন নয়, গণশিক্ষার মাধ্যম। নাটকের ভেতর দিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী, মৌলবাদবিরোধী আন্দোলন করেছি। নাটক সমাজের দর্পণ। যখন একটা ভালো নাটক দেখি, ভেতরে কোথায় যেন একটা টঙ্কার ওঠে। শিল্প কখনো কলকবজা খুলে বোঝা যায় না। এ আপনাকে আভাস-ইঙ্গিত দেয় শুধু। এই ইঙ্গিতটাই শিল্প। অভিনয়ের সময় মঞ্চে এমন কিছু মুহূর্ত তৈরি হয়, তখন মনে হয় এ জন্যই বেঁচে ছিলাম, আমি যেন স্বর্গকে স্পর্শ করছি। যদি এর পরমুহূর্তে মারাও যাই, কিছুই আসবে-যাবে না।
নবজাগরণ ঘুরে ঘুরে আসে। ঈশ্বরচন্দ্র্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমের সময় রেনেসাঁস স্তিমিত হয়ে পড়েছিল। পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় নবজাগরণ এলো। আমাদের দেশে ত্রিশ বছর পর হয়তো স্তিমিত হতে পারে। তারপর আবার নবজাগরণ আসবে নতুন প্রজন্মের হাতে। নাটককে পেশাদারি অর্জন করতেই হবে। আমরা সেদিকটায় ধাবিত হচ্ছি। সরকারও ভাবছে নাটকের মানুষদের ভাতা দেওয়া যায় কি না!
এক সময় ছিলো কাজের পাশাপাশি থিয়েটার করেছে নাট্যকর্মীরা। তবে এখন্ মনে হয় জীবিকার মাধ্যম যদি টেলিভিশন হতে পারে তাহলে থিয়েটার হবে না কেন! মানুষ তো একই সঙ্গে দু-তিনটি পেশার সঙ্গে জড়িত থাকেন। অনেকে আছেন সারাদিন চাকরি করে সন্ধ্যায় অন্য কাজ করছেন। ভালোবাসার সঙ্গে পেশা মিলিয়ে ফেললেই সমস্যা। এটা শুধু করপোরেট দুনিয়ায় সম্ভব।
স্বাধীনতা-পরবর্তী ৩০-৩৫ বছর নাট্যচর্চা তুঙ্গে উঠেছিল। কলকাতার লোকজন আমাদের নাটক দেখে ঈর্ষান্বিত হতো। ৫৩ বছর আগে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে এই দেশে একটি বিস্ময়কর ও গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা ঘটেছিল।
পাকিস্তানী উপনিবেশিক শাসনের নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়ে বিশ্ব-মানচিত্রে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের আত্মপ্রকাশ; যার নাম বাংলাদেশ। পিছনে ফিরে এখন মাঝে মাঝে মনে হয়, আমাদের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ, যাকে আমরা মুক্তিযুদ্ধ বলি, আসলে এটা স্বপ্ন ছিল না সত্যিই ঘটেছিল? আমাদের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে যতটুকু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের এবং তার পরবর্তী স্বাধীনতা অর্জনের আনন্দ ও দুখঃ-কষ্টের প্রতিফলন থাকার কথা ছিল ঠিক ততটা পড়েনি।
তবে এই কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে ভিত্তি করে বেশ কিছু ভাল উপন্যাস, কবিতা, ভাষ্কর্য, ছোটগল্প, অঙ্কন শিল্প এবং নাটক রচিত হয়েছে। প্রয়োগশিল্প মাধ্যমগুলো, যেমন থিয়েটার, যাত্রা, নৃত্যশিল্প, পুতুল নাচসহ অন্যান্য লোকজ অভিনয়, নৃত্য ও সঙ্গীত প্রধান মাধ্যমগুলোতে আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতিভাস পরিলক্ষিত হয়। থিয়েটার বা মঞ্চনাটককে বলা হয় মুক্তিযুদ্ধের শ্রেষ্ঠ ফসল। মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশেই দর্শনীর বিনিময়ে নিয়মিত নাট্যচর্চার সূচনা হয় যা আজ একটি ব্যাপক ও দর্শক-প্রিয় শিল্পমাধ্যমে পরিণত হয়েছে। নাট্যকলা বিষয় হিসেবে দেশের চারটি প্রধান সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। এছাড়া কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও নাট্যকলা শিক্ষা-সূচীর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
নাট্যকলা শেখানের জন্য দেশে কয়েকটি প্রাইভেট স্কুল নিয়মিতভাবে সক্রিয় রয়েছে। যথেষ্ট না হলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নাটকের মঞ্চ গড়ে উঠেছে। মঞ্চ-নাটক ভিত্তিক একাধিক সাময়িকী বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের উদ্যোগে নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়। দৈনিক পত্রিকাগুলো মঞ্চ-নাটককে গুরুত্ব দিয়ে নিয়মিতভাবে প্রতিবেদন ও খবরা-খবর পরিবেশন করে। ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে একটি বিশেষ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন দেশের নাটকের উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান। আজ যারা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে অভিনয়ের ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করেছে তাদের অনেকেই মঞ্চ-নাটকের অভিযাত্রী। টিভি চ্যানেলের বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রয়োজনীয় কারিগরী সহায়তায় এবং অংশগ্রহণেও মঞ্চ-নাটকের কর্মীরা বর্তমানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের প্রধান নাট্যকারদের লেখায় আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতিফলন ঘটেছে যথেষ্ট পরিমাণে।
আমাদের প্রধান নাট্যকারদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল-মামুনের নাটকে প্রধানত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের চিত্র রেশি ফুটে উঠেছে। সৈয়দ শামসুল হক মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে রচনা করেছেন ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নাটকটির সূচনা হয় এবং পরবর্তীতে স্বাধীনতা অর্জন, এই দুই সংঘাতময় পরিস্থিতিতে তিনি জীবনের মৌল জিজ্ঞাসার অন্তরে প্রবেশ করেছেন।
গণমাধ্যমে অন্যান্য সংবাদের পাশাপাশি নাচ-গানও থাকতে হবে। ক্ল্যাসিক্যাল ডান্স হতে পারে, মণিপুরি নৃত্য হতে পারে, ভাওয়াইয়া, আধুনিক গান হতে পারে। কবিতা আবৃত্তির একটা সেশন হতে পারে। একটা বিষয় নিয়ে তর্কবিতর্কের সেশন করতে হবে। সবকিছু মিলিয়েই সংস্কৃতি। কোনটা মানুষ গ্রহণ করবে আর কোনটা গ্রহণ করবেনা সেটা ব্যক্তির নিজস্ব বিষয়।
বাঙালির সংস্কৃতি ঔদার্য আমাদের প্রধানমন্ত্রীও স্বীকার করেন। জাতির পিতাও স্বীকার করতেন। বিদেশের যা সুন্দর, যা আমাদের কল্যাণকর সেটা আমাদের নিতে হবে। যে কারণে আমরা বহু বিদেশি নাটক অনুবাদে রূপান্তর করা হয়েছে। সংস্কৃতি একটি জাতির পরিচয় বহন করে। আজকে বঙ্গবন্ধুর কথা বারবার আসছে। কারণ, তিনি রবীন্দ্রনাথকে ভালোবাসতেন। ‘কারাগারের রোজনামচা’তে তিনি বলছেন, তিনি কত পড়াশোনা করতেন, বলতেন আজকে মনটা ভালো নেই, শরীরটা খারাপ, ঘুম হচ্ছে না কিছুতেই, তখন তিনি বলতেন যে, ঘুমানোর জন্য আমার বন্ধু শহীদুল্লা কায়সারের ‘সংশপ্তক’ বইটা হাতের কাছে ছিল— ওটা টেনে পড়েছি।
এভাবে তিনি প্রতিনিয়ত পড়তেন। তিনটা অসাধারণ বই লিখেছেন—আমার দেখা নয়া চীন, অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা। তিনি যদি সুযোগ পেতেন তিনি যদি জীবনের বেশির ভাগ সময় কারাগারে না কাটতেন, তাহলে তিনি উইনস্টন চার্চিলের মতো অনেক বই লিখতে পারতেন।
আমরা প্রায়ই বলি, ১৯৫৬ সালে ভাঙা ক্যামেরা দিয়ে সত্যজিৎ রায় ‘পথের পাঁচালী, অপুর সংসার, অপরাজিতা’ করেছিলেন সেটাকে আজ পর্যন্ত কেউ অতিক্রম করতে পারেনি। যে কাজ করছে সে মানুষটি সবচেয়ে বড়।
টেকনোলজির দরকার আছে, কিন্তু টেকনোলজি সবচেয়ে বড় নয়। সেটা মনে রেখে মানুষ তৈরি করতে হবে। স্কুল-কলেজে বেশি তাদের শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতি কবিতা পড়াতে হবে। এবং তাদের শিল্পমনস্ক করে গড়ে তুলতে হবে। সবার মাঝে যদি দেশপ্রেমকে যদি উজ্জীবিত করা যায় তাহলে শিল্প সংস্কৃতি এমনিই চলবে। আমাদের কবিতা-সাহিত্য এগিয়ে চলবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সব সময় লেখাপড়া নিয়ে থাকেন, নিজে লেখেনও। আমাদের অনেক মন্ত্রীরাও লেখাপড়া নিয়ে থাকেন। আমাদের মধ্যে আধুনিক যুগে আবদুল্লাহ আল মামুন হয়েছেন, সেলিম আল দীনের মতো নাট্যকার হয়েছেন, সৈয়দ শামসুল হকের মতো বহুপ্রভা লেখক হয়েছেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে, সুযোগ পেলেই যে ভালো হবে, এর কোনো অর্থ নেই। কারণ, মানুষের দুঃখ থেকেই কিন্তু সৃজনের সৃষ্টি। সৃজনের জন্মই দুঃখ থেকে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ট্যাংকের মধ্যে বসে একজন লিখছেন। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চিত্রকর ভিনসেন্ট ভ্যান গগ না খেয়ে প্রায় মারা যান। জীবনানন্দ দাশ ট্রামের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে না খেয়ে মারা গেছেন। দুঃখ বেদনা থেকে কবিতার জন্ম।
বিশ্বকর্মাকে পাঠাল ব্রহ্মা, তুমি এই নবরত্ন ছন্দ দিয়ে কী করবে? বলে আমি তো জানি না। বলে, রামের জীবনী লিখব। রাম সম্পর্কে ও জানে না। রবীন্দ্রনাথ বলছেন, তুমি রচিবে যাহা তাহাই সত্য বটে কবির কলমে। দুঃখ ও বেদনা ছাড়া শিল্প সৃজন হয় না।
হীরেন পণ্ডিত: প্রাবন্ধিক, গবেষক ও কলামিস্ট