পাবনায় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক – অধ্যক্ষ আব্দুল গনি। আমিরুল ইসলাম রাঙা
পাবনায় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক – অধ্যক্ষ আব্দুল গনি
। আমিরুল ইসলাম রাঙা।
মুহাম্মদ আব্দুল গনি পাবনায় যিনি গনি প্রিন্সিপাল নামে পরিচিত। ১৯৩৫ সালের ১২ মে পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের কোলচরী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ফজর উদ্দিন বিশ্বাস ছিলেন কৃষিজীবী। বাবা-মায়ের বড় সন্তান আব্দুল গনি ছোট বেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন। ছোটবেলায় মেধার কারনে অজপাড়াগাঁও থেকে পাবনা জেলা স্কুলে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ১৯৫৩ সালে পাবনা জেলা স্কুল থেকে মেট্রিক পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় তৎকালীন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন। এরপর আই,এ ক্লাসে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। এরপরের ইতিহাস সিনেমার গল্পকে হার মানায়। যে ছেলে মেট্রিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকা কলেজে ভর্তি হলেন, তাঁকেই কিনা কলেজে পড়াশুনা ইস্তফা দিয়ে বাড়ী ফিরতে হয়।
শান্ত, ভদ্র, নম্র, সুদর্শন, নির্জীব হিসেবে পরিচিত আব্দুল গনি’র শিশুকাল থেকেই মনের মধ্যে বাসা বেঁধেছিল রাজনীতি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিতে গিয়ে ১৯৫৪ সালের মে মাসে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। চৌদ্দ পুরুষের মুখে কালিমা লেপন করে ঢাকা জেলখানায় বন্দী হয়েছিলেন। এরপর জেল থেকে মুক্তি পেয়ে মেট্রিকের দ্বিতীয় স্থান অধিকারী আব্দুল গনিকে আই,এ পাশ না করেই পাবনা ফিরে আসতে হয়।
পাবনায় ফিরে স্থানীয় কালেক্টরেট অফিসে চাকুরী নিয়েছিলেন। পাশাপাশি ডিগ্রী অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে নীরবে নৈশ কলেজ থেকে আই,এ এবং বি,এ পাশ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম,এ ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর ১৯৬৮ সালে তিনি পাবনা ইসলামীয়া কলেজ ( বর্তমানে শহীদ বুলবুল কলেজ) প্রতিষ্ঠা করেন এবং উনি ঐ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন। তৎকালীন সময়ে এডওয়ার্ড কলেজের বিপরীতে আরেকটি কলেজ স্থাপন করা ছিল দুঃসাহসিক একটি কাজ। তিনি নামে ইসলামী কলেজ বানালেও মূলতঃ কলেজটি গড়ে ওঠে আওয়ামী কলেজ হিসেবে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগের প্রানকেন্দ্র ছিল ইসলামীয়া কলেজ। স্বাধীনতার আগে পাবনা জেলা ছাত্রলীগকে শক্তিশালী করা, আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করা, পাকিস্তান সামরিক শাসক বিরোধী বিগ্রেড তৈরী করা, মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার হিসেবে ইসলামীয়া কলেজ অল্পসময়ের মধ্যে একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
১৯৬৮ থেকে ১৯৭১ সাল। এই ৩ বছর হলো রাজনীতির এক মহাসময়কাল। ৬৮ থেকে ৬৯ এর গণআন্দোলন, ৭০ এর নির্বাচন এবং ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ এসব কিছুতেই পাবনার অন্যতম কট্রোল রুম ছিল পাবনা ইসলামীয়া কলেজ আর নেপথ্যে কমান্ডার ছিলেন, অধ্যক্ষ আব্দুল গনি। কলেজ প্রতিষ্ঠার পর সেই সময়ে লেখাপড়া থেকে ঝরেপড়া ছাত্র, গরীব ছাত্রদের খুঁজে বের করে তাঁর কলেজে ভর্তি করা সহ নানামুখি কর্মকান্ডে অধ্যক্ষ আব্দুল গনি শুধু পাবনা শহরেই নয় গোটা জেলায় তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়লো। তিনি গ্রাম থেকে আসা ছাত্রদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা সহ থাকা-খাওয়া, জামা-কাপড়, বই-পুস্তক পর্যন্ত ব্যবস্থা করতেন। মুক্তিযুদ্ধের আগে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুস সাত্তার লালু, সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বকুল, প্রথম ছাত্র সংসদের ভিপি আবদুল কাদের ( বর্তমান বেড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক), সামসুল আলম বুলবুল ( মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। যার নামে বুলবুল কলেজ) সহ প্রমুখ ছাত্রনেতা এই কলেজের ছাত্র।
১৯৭১ সাল মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল। ২৮/২৯ মার্চে পাবনায় প্রতিরোধ যুদ্ধ। ২৯ মার্চ পাবনার বর্তমান বাসটার্মিনালের পাশে পাকিস্তান সৈন্যদের সাথে যুদ্ধে শহীদ হলেন, পাবনা ইসলামীয়া কলেজের ছাত্র সামসুল আলম বুলবুল। ৭১ এর নয়মাসে মৃত্যু হয় ঐ কলেজের বহু ছাত্র। কলেজের সিংহভাগ ছাত্র সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা। অধ্যক্ষ আব্দুল গনি যিনি যুদ্ধের নয়মাস মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়, খাবার ব্যবস্থা করা সহ পাবনা সদরের দক্ষিণ এবং সুজানগরের একটি বৃহৎ অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। নয়মাসের যুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে যুদ্ধ পরবর্তী আরেক যুদ্ধ শুরু করেন অধ্যক্ষ আব্দুল গনি।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে পাবনা ইসলামীয়া কলেজের নাম পরিবর্তন করে শহীদ বুলবুল কলেজ নামকরণ করেন। ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত উক্ত কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে পাবনা আইন কলেজকে শহীদ আমিন উদ্দিন আইন কলেজ হিসেবে নামকরণ করেন। উনি ১৯৭৫ এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উক্ত কলেজের সম্পাদক ছিলেন। পরে উক্ত আইন কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে শহীদ সাধন সংগীত মহাবিদ্যালয় স্থাপন করেন এবং প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হন। ১৯৭০ সালের ২৭ ডিসেম্বর পাবনা শহরে শহীদ আহমেদ রফিক বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত উক্ত বিদ্যালয়ের সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭২ সালে সাঁথিয়ার জোড়গাছায় শহীদ আহমেদ রফিক উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত উক্ত স্কুলের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭২ সালে জালালপুরে শহীদ মাওলানা কসিমুদ্দিন স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত উক্ত স্কুলের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭২ সালে বালিয়াহালট আমজাদ হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত উক্ত স্কুলের সম্পাদক ছিলেন।
প্রতিষ্ঠান আর প্রতিষ্ঠাতার তালিকা আর দীর্ঘ করতে চাই না। স্বাধীনতার পর তৎকালীন পাবনার মন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী’র স্নেহভাজন এবং আশির্বাদপুষ্ট অধ্যক্ষ আব্দুল গনিকে অসীম ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছিল। পাবনা জেলায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়তে হলে অধ্যক্ষ আব্দুল গনি’র সুপারিশ লাগবে। আর ক্ষমতার গুনে উনার কাছে কারো আসার আগে উনি নিজেই বিভিন্ন এলাকায় যেয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার জন্য উৎসাহ যুগিয়েছেন। সুজানগরে শহীদ দুলাল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, কাশিনাথপুরের শহীদ নূরুল হোসেন কলেজ, আটঘরিয়া কলেজ, সাঁথিয়া কলেজ, পাবনা হোমিও কলেজ, সুজানগর কলেজ, দড়ি ভাউডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়, শালগাড়ীয়ায় শহীদ অশোক প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোপালপুর কচিকাঁচা স্কুল, আমিনা মনসুর উচ্চ বিদ্যালয়, বাঁশেরবাদা মহাবিদ্যালয় সহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, সভাপতি, সম্পাদক বা সহযোগিতাকারী ছিলেন।
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনা সদর আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। উক্ত নির্বাচনে, আব্দুর রব বগা মিয়া, মোঃ নাসিম, গোলাম আলী কাদেরী, ওয়াজি উদ্দিন, অধ্যক্ষ আব্দুল গনি প্রমুখ দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন করলে মনোনয়ন বোর্ড আব্দুর রব বগা মিয়াকে প্রার্থী ঘোষণা করেন। এরপর অধ্যক্ষ আব্দুল গনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তৎকালীন পাবনার শীর্ষ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ প্রায় সবাই অধ্যক্ষ আব্দুল গনি’র পক্ষে ছিলেন। উক্ত নির্বাচনে জাসদের মোঃ ইকবাল এবং ন্যাপের আমিনুল ইসলাম বাদশা প্রার্থী ছিলেন। সবাই নিশ্চিত ছিলেন নির্বাচন সুষ্ঠু হলে অধ্যক্ষ আব্দুল গনি’র মোমবাতি মার্কা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন। সেই সময়ে ঐ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরাট দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে ২৫ শে ফেব্রুয়ারী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুর রব বগা মিয়া সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরন করেন। ঐদিন বঙ্গবন্ধু নাটোর উত্তরা গণভবনে অবস্থান করছিলেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বঙ্গবন্ধু পাবনায় আসেন। বঙ্গবন্ধু সেদিন খুবই শোকাহত ছিলেন এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে পাবনার নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। সেই নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় পাবনার শীর্ষস্থানীয় প্রায় ১১ জন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে স্থগিত হওয়া পাবনা সদর আসনে এডভোকেট আমজাদ হোসেন মনোনয়ন পান। সেই নির্বাচনে অধ্যক্ষ আব্দুল গনি নিজে প্রার্থীতা থেকে সরে দাড়ান।
১৯৭৩ সালের ২৯ শে ডিসেম্বর পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে অধ্যক্ষ আব্দুল গনি পাবনা পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালের ১ জানুয়ারী থেকে ১৯৭৫ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সাথে পাবনা পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে নিহত হলেন। ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিহত হলেন তাঁর রাজনৈতিক অভিভাবক ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী। জীবনের ভয়াবহ প্রতিকুলতার মধ্যে পড়লেন অধ্যক্ষ আব্দুল গনি। জগতের নিষ্ঠুর পরিনতি নেমে এলো তাঁর উপর। জীবনে এত ত্যাগ – এত সততা সব বিলীন হয়ে গেলো। বিশ্বাসঘাতক খোন্দকার মোশতাকের সামরিক সরকার ১৯৭৫ সালের ২০ সেপ্টেম্বর অধ্যক্ষ আব্দুল গনিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিক্ষেপ করেন। কোন অপরাধ না করেও তাঁকে ৫৪ মাস জেলখানায় আটক রাখা হলো। এরপর ১৯৮০ সালের ২২ মার্চ তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।
১৯৭৫ থেকে ১৯৮০ সাল এই সময়কালে দেশের শ্রেষ্ঠ অপরাধীরা বাইরে ঘুরে বেড়াতে পারলেও উনাকে প্রায় প্রায় পাঁচ বছর জেলের নির্জন প্রকোষ্ঠে কাটাতে হয়েছে। ঐ সময়ে জীবনের অনেক কিছু বিসর্জন দিলেও সঞ্চয়টুকু কম নয়। পাঠকের অবগতির জন্য উনার ঐ সময়ের একটি ঘটনা উল্লেখ করছি। ঐ সময়ে পাবনা জেলে অনেক রাজনৈতিক বন্দী ছিলেন, যারা জেলখানায় থেকে পরীক্ষা দিয়ে ডিগ্রী অর্জন করেছেন। সেখানে একজন বন্দী সব ধরনের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন। অধ্যক্ষ আব্দুল গনি কারাগারে থেকে এল,এল,বি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য কারাগারে পরীক্ষার্থীরা কখনো ফেল করেনা। পাবনা জেলে সেবার বেশ কয়েকজন এল,এল,বি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তাঁদের সবাই সেই পরীক্ষায় পাশ করলেও অধ্যক্ষ আব্দুল গনি ফেল করেছিলেন। জেল ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল। কারন সেখানে কেউ ফেল করেনা। উনার ফেল করার কারন হলো উনি একমাত্র পরীক্ষার্থী ছিলেন যিনি বই দেখে বা নকল করে পরীক্ষা দিতে রাজী ছিলেন না। এই হলো অধ্যক্ষ আব্দুল গনি। যার এমন সততায় জেল কর্তৃপক্ষ অবাক নয় হতবাক হয়েছিলেন। পরের বার উনি রীতিমতো পড়াশুনা করে কৃতিত্বের সাথে এল,এল,বি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
১৯৮০ সালে জেলখানা থেকে মুক্তিলাভ করে পাবনা জজকোর্টে আইন পেশায় যোগ দেন। সামাজিক এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ডে আবার সক্রিয় হন। ১৯৮৭ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে আবার গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যান। জেল থেকে বের হয়ে আবার আইন পেশায় নিয়মিত হন। পাশাপাশি লেখালেখি ও গবেষনামূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যান। ১৯৯৮ সালে শহীদ আমিন উদ্দিন আইন কলেজ এবং ১৯৯৯ সালে শহীদ সাধন সংগীত মহাবিদ্যালয়ে অবৈতনিক অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োজিত হন। নিজের অভাব অসচ্ছলতা থাকার পরেও পাবনা জজকোর্টে আইন ব্যবসাতেও বিরল দৃষ্টান্ত রেখেছেন। তিনি ছিলেন উদার মনের নিঃস্বার্থ একজন উকিল। যেনাকে টাকা-পয়সা না দিয়েও মামলায় নিয়োজিত করা সম্ভব হতো। দলের লোক আর অভাবী হলে টাকা ছাড়াই কাজ করতেন।
রাজনৈতিক জীবনে অধ্যক্ষ আব্দুল গনি দলের প্রতি অবিচল অাস্থা এবং বিশ্বাস নিয়ে কাজ করেছেন। দল পাগল এই মানুষটি পদ প্রত্যাশী ছিলেন না। নেতার থেকে কর্মী হতে বেশী পছন্দ করতেন। ১৯৫২ ভাষা আন্দোলন থেকে ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনীতি শুরু করে জীবনের শেষ দিন বঙ্গবন্ধু আর আওয়ামী লীগের কাছ থেকে এক সেকেন্ড সময়ও দুরে থাকেন নাই। তিনি ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পাবনা জেলা কমিটির কার্যকরী সদস্য ছিলেন। ১৯৮৮ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু পরিষদের পাবনা জেলা সভাপতি ছিলেন। ১৯৯৯ সালে গঠিত শহীদ মনসুর আলী স্মৃতি পরিষদ, পাবনার সভাপতি ছিলেন।
অধ্যক্ষ আব্দুল গনি ২০০৩ সালের ২১ জানুয়ারী মাত্র ৬৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরন করেন। মৃত্যুর সময়ে স্ত্রী, তিন ছেলে, তিন মেয়ে রেখে অকালে এই পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেন। নির্লোভ এই মানুষটি দেশ এবং সমাজকে অনেক কিছু দিতে পারলেও নিজ পরিবারের জন্য কিছুই দিয়ে যেতে পারে নাই। বরং পরিবারের অনেক সম্পদ সেটাও বিনষ্ট করে গেছেন।
২১ জানুয়ারী অধ্যক্ষ আব্দুল গনি’র মৃত্যু বার্ষিকী ছিল। আমার ধারনা এই মানুষটিকে নিয়ে কোথাও স্মরণ সভা, আলোচনা সভা কিংবা দোয়া মাহফিল হয়েছে বলে জানা নাই। বিগত সময়ে তেমন কিছু হয়নি । আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত কথা আছে, শ্বশুর পেলে আমরা জন্মদাতা বাবাকে ভুলে যাই। কথাটি যদি মিথ্যা হতো তাহলে আজ বহু প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আব্দুল গনিকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হতো।এই লেখার উপর অংশে যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম লেখেছি – সেসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিবর্গ অথবা অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা কি জানে, অধ্যক্ষ আব্দুল গনি’র কথা? আমি সন্দিহান তারা হয়তো জানেনা। তবে আমি আশাবাদী এই সমাজে কখনো কখনো দেখা যায়, জীবনের কোন এক সময় সন্তানেরা হারানো বাবা-মাকে হন্য হয়ে পাগলের মতো খুঁজে বেড়ায়। কখনো যদি খুঁজে পায় তাহলে সেই বাবার মৃত্যু দিবস কেন – জন্ম দিবস সেটাও পালন করে ।
কোন একদিন দেখা যাবে আলোকিত মুখ অধ্যক্ষ আব্দুল গনিকে তাঁর মৃত্যু এবং জন্ম দিবসে পাবনাবাসী গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে !! আমার এমন আশাটা যেন – ভবিষ্যতে সত্যে পরিনত হয় –!!? ( সমাপ্ত)
লেখক-আমিরুল ইসলাম রাঙা
রাধানগর মজুমদার পাড়া
পাবনা।