ওদের যাত্রা জীবিকার তাগিদে । আজাহার ইসলাম । ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

0
জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়। জীবনের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকা রণক্ষেত্রে টিকে থাকার চেয়েও কঠিন। ‘বহুদূর প্রসারিত এদের বিচিত্র কর্মভার/তারি ‘পরে ভর দিয়ে চলিতেছে সমস্ত সংসার।’ রবি ঠাকুরের এই কথার বাস্তব প্রতিফলন বাস্তব জীবনেও একই। জীবিকার তাগিদে মানুষ বিচিত্র পথে যাত্রা করে। আর পরিবারের চালিকা শক্তি যে থাকে তার উপার্জনেই চলে একেকটি পরিবার। বিপুলা এই পৃথীবিতে নানান শ্রেণির নানান পেশার মানুষ বসবাস করে। কেউ বড় বড় দালানের উপরতলায় বসবাস করে। কেউ ফুটপাতে ঘুমায়। কেউ পাচতারকা রেস্টুরেন্টে পেট পুরে খেয়েও অতৃপ্তিতে ভোগে। কারো কাছে ফুটপাতে বসে দুমুঠো ভাত তৃপ্তির ঢেকুর। জীবিকার তাগিদে মানুষ ভিন্ন কাজ বেছে নেয়। বিশেষ করে ছিন্নমূল, অসহায় ও যাযাবর মানুষদের জীবনযাত্রায় প্রতিনিয়ত যুদ্ধের মত। শত বাঁধা মোকাবেলা করে টিকে থাকতে হয় তাদের। তবু দিনশেষে পরিবারের জন্য জন্য দুমুঠো আহার জোগাড় করতে পারলে তাদের মুখে তৃপ্তির ছাপ দেখা যায়। বিত্তবান, ধনী, গরীব, অসহায়, যাযাবর থেকে শুরু করে সবার উদ্দেশ্য জীবনযাত্রা সচল করতে জীবিকা অর্জন। তবে পথ ও পন্থা ভিন্ন।

তেমনি নিরন্তর ছুটে চলা জীবনের এক পথিক ‘যাযাবর।’ যারা প্রকৃতির মধ্যেই জীবনের বৈচিত্র্য খুঁজে পায়। দিনশেষে কোনরকম মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলেই কাটিয়ে দিতে পারে রাত। বৃষ্টির পানি বা রোদ এড়ানোই মুখ্য। যাযাবরদের প্রথম পরিচয় তাদের নির্দিষ্ট কোনো ঠিকানা নেই। নেই জীবিকা অর্জনের জন্য সভ্য মানুষের রীতি। ধরাবাঁধা চাকরি নেই। ব্যবসা যারা করে সেটাও সাময়িক। নিরন্তর ছুটে চলা এক জীবনের পথিক। ইতিহাস বলে, বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন দেশের ও সম্প্রদায়ের মানুষ বেছে নিয়েছে এমন ছন্নছাড়া জীবনযাপন। এর মধ্যে রয়েছে আকস্মিক যুদ্ধ, খরা বা নদীভাঙ্গন।

উপায় না পেয়েই এই মানুষগুলো যাযাবর জীবনে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে। তবে দুর্গম অঞ্চলে যাযাবরদের বিচরণ বেশি দেখা মেলে। দুর্গম পাহাড়-পর্বত কিংবা গহিন অরণ্যে দলবেঁধে থাকে তারা। আবার জলের ওপর ভাসমান নৌকায়, তুষারাচ্ছন্ন পরিবেশ থেকে শুরু করে মরুভূমির মাঝেও থাকে এরা। বংশ পরম্পরায় এই যাযাবর জীবনই তাদের পরিচয় হয়ে ওঠে। তবে বর্তমানে তাদের সংখ্যা অনেকাংশেই কমে গেছে। যাযাবর বৃত্তি ছেড়ে শহুরে জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে অনেকেই।

যাযাবরদের জীবনযাপন সত্যিই রহস্যময়। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় দেখা যায় এদের। অঞ্চলভেদে একেক নাম, আর বেঁচে থাকার বিচিত্রসব পেশা। নর-নারী, শিশুর অদ্ভুত তাদের চেহারা, অদ্ভুত তাদের কথাবার্তা। যাযাবর বলেই এদের জীবন বৈচিত্র্যময়। বৈচিত্র্যময়তাই এদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন মানুষ স্বভাবতই সামাজিক জীব। কিন্তু এরা নির্দিষ্ট কোন সমাজে আবদ্ধ নয়। ঘুরে বেরায় খেয়ালখুশিমতো। এতেই তারা আনন্দ পায়। তাদের মাঝে কখনোই অসন্তুষ্টির ছাপ চোখে পড়েনা।

লেখক : সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.