জাফরুল্লা চৌধুরী অফুরন্ত প্রাণশক্তির অধিকারি এক কর্মবীর । ড. তোফায়েল আহমেদ ।
ডাঃ জাফরুল্লা চৌধুরী আমাদের কালে এই বাংলাদেশের একজন জীবন্ত কিংবদন্তি।
ডাঃ জাফরুল্লা চৌধুরী আমাদের কালে এই বাংলাদেশের একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। ডাঃ চৌধুরীর জীবন ও কর্ম নিয়ে বলার ও লেখার জন্য অনেক মানুষ দেশে বিদেশে আছেন এবং তাঁরা অনেকেই তার সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন। আজ কুমিল্লার ডাঃ Iqbal Anwar এর একটি পোস্ট পড়ার পর এ পোস্ট লিখতে মন চাইল। সাল ১৯৯৫। চট্টগ্রাম বিভাগীয় ইউনিসেফ অফিসের প্রধান জানাব মনজুরুল আলম এর সাথে অফিস সময়ের পর তারই অফিসে দীর্ঘ আড্ডা হতো। একদিন কথায় কথায় ডাঃ জাফরুল্লা চৌধূরীর “Political Economy of Drug” (UPL) শীর্ষক বইটি নিয়ে আলাপ হচ্ছিল।আলম ভাইই প্রস্তাব করলেন , বইটি নিয়ে তোমরা একটি আলোচনা কর না কেন।আমি রাজি হয়ে গেলাম।শুধু রাজি নয়, অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে লেগে পড়লাম।। চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ মিলানাতনে আলোচনা স্থল ঠিক হলো। প্রধান অতিথি প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম।জাফর ভাই এর সাথে কথা হলো , উনি অনুষ্ঠানের পূর্বদিন সন্ধ্যার আগে চট্টগ্রাম এসে পৌছাবেন জানালেন। রাতে থাকার ব্যবস্থা করতে চাইলাম, না করলেন। ভাবলাম রাতে একসাথে খাব এবং কথাবার্তা হবে।আমরা অপেক্ষা করতে থাকলাম। শুনলাম চট্টগ্রাম পৌছে গেছেন, কিন্তু কোথায়? বলা হলো , তিনি সরাসরি রাঙ্গামাটি রওয়ানা হয়ে গেছেন। রাতে আর দেখা হবে না।
সকালে ৭টার আগে কালুর ঘাটে উনার বোনের বাসায় আসলে দেখা হবে।
আমি আর এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর গেলাম কালুরঘাটের সে বাসায়। শুনলাম রাত ১টার পর এ বাসায় পৌছান। খুব সকালে উঠেই গোসল -নাস্তা এবং চট্টগ্রামের লোকাল দৈনিকগুলো পড়া শেষে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। সাথে এককাপ চা পান হলো। বিকেল তিনটায় প্রোগ্রামের দাওয়াতপত্রটা দেখালাম। প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলামের কথা শুনে খুব খুশি হলেন। আমাদের সাথে দুুুপুরে এক সাথে খাওয়ার অনুরোধ করলাম। বললেন , আমার খাওয়ার প্রোগ্রাম রক্ষা করা কঠিন হবে। আমি ৪টার মধ্যে জেলা পরিষদ হলে এসে উপস্থিত হবো। যে কথা সেই কাজ।তিনি আসলেন। প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম আসলেন। আলোচনা শুূুরু হলো।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক-ছাত্রছাত্রী এসেছিলেন। আলোচনা রাত সাড়ে নয়টা অবধি গড়াল। আমরা কোন হোটেলে এক সাথে খাব ভাবলাম। না বিধি বাম। প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম তাঁকে উনার বাসায় যাওয়ার আমন্ত্রণ দিলেন। তিনি রাজি হয়ে গেলেন। আমাকেও সাথে নিলেন। প্রফেসর ইসলামের পাহাড় চূড়ার বাসায় রাতে নান আর কাবাব খাওয়া হলো। চবির চারুকলার স্বনামধন্য শিল্পী শিক্ষক আবদুল্লাহ খালেদও ছিলেন। সেই শিল্পী আবদুল্লাহ খালেদ ও প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম দু’জনই পরলোকগত। বেশীর ভাগ আলোচনা প্ফেরসর জামাল এবং জাফর ভাইই করছিলেন। আমি আগাগোড়াই ছিলাম মুগ্ধ শ্রোতা। মিসেস জামাল নজরুল এবঙ উনাদের একমাত্র কন্যাও বৈঠকে ছিলেন । ম্যাডামের পিএইচডির কাজ তখন চলমান , সে সব বিষয়েও কথা হলো। জাফর ভাইএর মেয়ে বৃস্টি এবং জামাল নজরুল সাহেবের কন্যা দু’জন সমবয়সী এবং দু’জনেরই জম্ম ও পড়াশুনা ইংল্যান্ডে। রাত একটায় ঐ বাসা থেকে বের হলাম। আমি থাকার বিষয়ে কিছু বলতে না বলতেই তিনি তাঁর নন এসি মাইক্রো বাসে উঠেই তার মহিলা ড্রাইবারকে বললেন, চল ঢাকা। আমাকে নাসিরাবাদে বাসায় নামিয়ে দিয়ে রাত একটায় ঢাকা রওয়ানা হলেন।
ঘুম , চলতি গাড়িতে যা ঘুমানোর তা উনি ঘুমিয়ে নেন। পরদিন যথারীতি অফিস করলেন। এইই হচ্ছে অফুরান প্রাণ শক্তির অধিকারি ডাঃ জাফরুল্লা চৌধুরি। মহান আল্লার দরবারে তাঁর নেক হায়াতের জন্য মোনাজাত করছি ।
লেখক : ড.তোফায়েল আহমেদ: স্থানীয় শাসন বিশেষজ্ঞ ।
ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ।