পুষ্টি নিরাপত্তায় হচ্ছে পুষ্টি বাগান

0

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর সরকার এবার দেশের মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য কাজ শুরু করেছে। চাহিদার চেয়ে বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। কিন্তু পুষ্টির দিক দিয়ে দেশের মানুষ এখনও পিছিয়ে আছে। তাই পুষ্টির ঘাটতি পূরণের মাধ্যমে দেশের সব মানুষের পুষ্টি নিশ্চিত করতে চায় সরকার। সেই সঙ্গে চায় পুষ্টিমান প্রজন্ম তৈরি করতে। এজন্য কাজ শুরু করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। গ্রহণ করা হয়েছে ৪৩৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বসতবাড়ির অব্যহত জমিতে একশ’টি করে স্থাপন করা হবে ‘পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন’। এসব বাগানে উৎপাদিত হবে নিরাপদ শাক-সবজি, মসলা ও মৌসুমি ফল। যা সারা বছরের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে আয় বৃদ্ধি করবে পরিবারের।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনতে হবে। এই নির্দেশনা অনুসারে অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপনে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পুরোপুরি সরকারী অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হবে এই প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশের ইউনিয়ন ও পৌরসভার বসতবাড়ির অব্যহৃত জমিতে প্রায় ৫ লাখ পুষ্টি বাগান স্থাপন করা হবে। এজন্য ব্যয় হবে ৪৩৮ কোটি টাকা ৪৭ লাখ টাকা। পরিবারের সারা বছরের শাক-সবজি ও মসলার চাহিদা পূরণ করার জন্য সরকার এই প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে।

প্রকল্পের সার সংক্ষেপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটি ৫৩ লাখ বসতবাড়ি রয়েছে। এসকল বসতবাড়ির অধিকাংশ জায়গা অব্যবহৃত ও পতিত পড়ে থাকে। কিছু বসতবাড়িতে অপরিকল্পিতভাবে শাকসবজি আবাদ করা হয়। প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেকটি ইউনিয়ন এবং পৌরসভার বসতবাড়ির অব্যবহৃত জমিতে ১০০টি করে অর্থাৎ মোট ৪ লাখ ৮৮ হাজার সবজি, ফল ও মসলা জাতীয় ফসলের পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন করা হবে। বসতবাড়ির স্যাঁতসেঁতে জমিতে কচুজাতীয় সবজির প্রদর্শনীও স্থাপন করা হবে। এক্ষেত্রে কচু জাতীয় সবজি আবাদের জন্য ৭ হাজার ৩৮০টি প্রদর্শনী এবং বসতবাড়ির ছায়াযুক্ত স্থানে আদা, হদুল চাষের জন্য আরও ৭ হাজার ৩৮০টি বাগান করা হবে।

এছাড়া মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য একশ’টি উপজেলায় একটি করে ১০০টি কমিউনিটি বেইজড ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন পিট স্থাপন করা হবে। উৎপাদিত ভার্মিকম্পোস্ট নিরাপদ ফসল উৎপাদনে ব্যবহৃত হবে এবং গ্রামীণ কৃষক-কৃষাণীদের আয়বর্ধক কাজে সম্পৃক্ত করা সম্ভব হবে। কৃষক-কৃষাণীদের উৎপাদিত সবজি সংরক্ষণের জন্য প্রকল্পের আওতায় ক্ষুদ্র আকারে দেশজ পদ্ধতির বিদ্যুতবিহীন ১২৮টি (৬৪ জেলায় ২টি করে) কুল চেম্বার স্থাপন করা হবে।

প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষক-কৃষাণীদের প্রশিক্ষণ ও কৃষক গ্রæপ পর্যায়ে ক্ষুদ্র কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদান করা হবে। এর মধ্যে কৃষক ও কৃষাণীদের পরিকল্পিত কৃষি কাজ ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে দক্ষ করে তোলার জন্য এক লাখ ৭৭ হাজার ১২০ জন কৃষক ও কৃষাণীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। সেই সঙ্গে ৫ হাজার ৭৬০ জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকেও প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। পারিবারিক পর্যায়ে নিরাপদ নিরাপদ এবং মানসম্মত ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষক গ্রæপ গঠন করা হবে। সেই গ্রæপ পর্যায়ে ৪ হাজার ৫৫৪টি ফুট পাম্প, ৯ হাজার ১০৮টি হ্যান্ড স্প্রেয়ার, ১৩ হাজার ৬৬২টি বাডিং নাইফ এবং আরও ১৩ হাজার ৬৬২টি বুশ কাটার সরবরাহ করা হবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে পারিবারিক পর্যায় নিরাপদ মানসম্মত শাকসবজি, মসলা এবং মৌসুমি ফল উৎপাদনে সহায়ক হবে। উৎপাদিত ফসল দ্বারা পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কৃষক-কৃষাণীর আয় বৃদ্ধি পাবে। কমিউনিটি বেইজড ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষক-কৃষাণীদের আয়বর্ধক কাজে সম্পৃক্ত করা হবে। যা গ্রামীণ পর্যায়ে কৃষকদের দক্ষ জনগোষ্ঠীতে রূপান্তরে সহায়তা করবে।

‘অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৩৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এই টাকার পুরোটাই সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করবে। তিন বছর মেয়াদী এই প্রকল্পটির কাজ চলতি ২০২১ সাল থেকে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে দেশের ৮টি বিভাগের ৬৪ জেলার ৪৯২ উপজেলায়। গত ২৩ মার্চ প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন লাভ করে। আর এটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন পায় ২৫ মার্চ।

এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহামারী করোনাকালেও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনতে ‘পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সফলভাবে এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি পারিবারিক শাকসবজি ও পুষ্টিচাহিদা পূরণ হবে।

তিনি বলেন, পুষ্টি বাগান স্থাপনের কাজ এই প্রকল্প গ্রহণের আগেই শুরু করা হয়েছে। গত বছর (২০২০ সালে) দেশব্যাপী ৪ হাজার ৪৩১টি ইউনিয়নে ৩৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ১ লাখ ৪১ হাজার পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে করোনায় শুধু খাদ্যসঙ্কটই মোকাবেলা করা সম্ভব হবে, তাই নয়, গ্রামীণ অর্থনীতিও সচল হয়ে উঠবে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.