মায়াজালে এখনো আমি । আনান্নিয়া আন্নি
পর্বঃ ১২
আমাকে দেখে নীড় অবাক হয়ে জিগ্যেস করলো অপ্সরা আপনি? আপনি হসপিটালের ঠিকানা কোথায় পেলেন? আমি ঠিক দেখছি তো?
এতো উত্তেজিত হবেননা। আপনি ঠিকই দেখছেন। হসপিটালের ঠিকানা টা আমি আপনার বন্ধু কে ফোন করে জেনে নিয়েছিলাম।
আপনি কেমন আছেন এখন সেটা বলুন?
এতক্ষণ কেমন ছিলাম সেটা জানিনা তবে এখন কিন্তু আমি আগের থেকে বেটার ফিল করছি।
কেনো বলুনতো? হঠাৎই বেটার ফিল করছেন কেনো?
এই যে সামনে আমার জীবন্ত পরী টাকে দেখেই সবকিছু কেমন বেটার থেকে বেস্ট ফিল হতে শুরু হয়েছে।
নীড় এর কথায় হালকা লজ্জা পেয়েছি বটে, ওর মুখে এই “আমার” কথাটা শুনে কেমন একটা ভিন্নরকম অনুভূতি ভেতরটা ছুয়ে গেলো।
তা আপনার বাড়ির লোকজন কেউ আসেনি? তাদের জানাননি দুর্ঘটনার কথা?
হুম আপু এসেছিলো। এই একটু আগেই চলে গেলো।
আপু বলতে? মহুয়া-র মা এর কথা বলছেন?
জ্বি…
তা কবে রিলিজ করছে আপনাকে? ডক্টর-রা বলেছেন কিছু?
বলেছে তিনদিন থাকতেই হবে।তারমধ্যে দুদিন হয়েই গেলো, বোধহয় কাল বাদে পরশু সকালেই বাড়ি যেতে পারবো।
খাওয়া দাওয়া হয়েছে? দুপুরে ঔষধ খেয়েছেন?
হ্যা খেয়েছি। আপু এসেছিলো খাবার নিয়ে আর ঔষধ টাও দিয়ে গিয়েছে।
ঠিক আছে এখন চুপ করে বসুন তো ফল খেতে হবে।
ফল? আপনি আবার কেনো কষ্ট করে এসব আনতে গিয়েছেন অপ্সরা?
বা রে… আপনি কষ্ট করে দু’সিডেন্ট করছেন আর আমি কষ্ট করে আপনার জন্য একটু ফল আনতে পারবোনা??
আমার কথা শুনে নীড় ও বেশ করে এক হাসি দিয়ে বললো, বাহ্ বেশ ভালো বলেছেন তো।
তাহলে বলুন… আমিও আপনাকে হাসাতে পারি কেমন?
হাসাতে পারেন বলছেন কেনো? আমার জীবনের হাসি-ই তো আপনি অপ্সরা।
ওর এই কথাটির অর্থ বেশ বিস্তৃত, কিন্তু তারপর ও আমি বুঝেও না বোঝার ভান করে কথা বলার টপিক চেন্জ করে ফেললাম।
ফল কেটে নীড় এর হাতে দিয়ে বললাম নিন তাড়াতাড়ি শেষ করুন আমাকে আবার সন্ধের আগেই বাসায় ফিরতে হবে।
এই তো এলেন,এখনই চলে যাবেন?
হুম এখনই চলে যেতে হবে।
মিনিট পাঁচেক মতো বসে গল্প করে যখন নীড় কে বললাম
তাহলে আজ উঠি আমি?
তখন নীড় এর চেহারায় কেমন একটা মন খারাপের ছাপ পরে গিয়েছিল। আমার দিকে তাকিয়ে বললো আবার আসবেন তো? আমি হয়তোবা পরশুদিন ই বাড়ি চলে যাবো, ভাবছি যাওয়ার পথে একটা নতুন ফোন নিয়ে নেবো, তার আগে বোধহয় আপনার সাথে আর যোগাযোগ করতে পারবোনা।
আমার সাথে যোগাযোগ করতে না পারলে এমন আহামরি কোনো ক্ষতি হয়ে যাবেনা নীড়, আপনি এখন বিশ্রাম করুন, আর হ্যা সাবধানে বাড়ি যাবেন, আমি বোধহয় আর আসবোনা। এই বলে আমি উঠে পরলাম।
আসছি তবে….
চলে আসার সময় একবারটি পেছন ফিরে দেখেছিলাম নীড় আমার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। ঐ একবার-ই পেছন ফিরে তাকিয়ে হনহন করে হেঁটে চলে এসেছি কারন ওর চোখে চোখ রেখে আমারও কেমন মনে হচ্ছিলো আর কিছুক্ষণ থেকে গেলে মন্দ হতোনা…
(৬ নভেম্বর)
আমি জানি আজ সে আর মেসেজ করবেনা,করবেনা কোনো কল, করবেই বা কি করে ফোন টা তো তার ভেঙে গিয়েছে। তারপর ও মনের মধ্যে একটা প্রত্যাশা আমার রয়েই গেলো সারাটাদিন। এখন রাত সাড়ে দশটা, সামনে ডায়েরি নিয়ে কলমে খুঁচিয়ে তার কথা ভাবছি আর সবটা উগড়ে দিচ্ছি এই ডায়েরি-র পাতায়। দুমিনিট বাদে ফোনে মেসেজের আওয়াজ হলো। নীড় তো বলেছিল আগামীকাল বাড়ি যাওয়ার সময় নতুন ফোন নেবে, আগামীকাল আসতে তো এখনো অনেকটা সময় বাকী, তাহলে কে মেসেজ করলো এই সময়? ফোনটা হাতে নিতেই চক্ষু চড়কগাছ!!
হ্যা… নীড় মেসেজ করেছে। জানিনা কেনো ওর মেসেজ পেয়ে আমার মনের মধ্যে এক আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছিলো।
………………………………………………………
দেখ ঝিলি এখানে শুধু দুটো ডটলাইন দেয়া বাকি টা আর লেখা নেই। কি কথা হলো তারপর নীড় মামার সাথে সেটা কেনো লেখেনি বলতো?
তুই না বড্ড বোকা, রাতে যখম নীড় মামা মেসেজ করেছে তখন কি কথা বলা বাদ দিয়ে ওসব লিখতে বসবে নাকি? ততক্ষণে ডটলাইন দিয়ে কথা বলতে চলে গিয়েছে। তুই পরের পাতা উল্টে দেখ বাকি লেখাটা বোধহয় ওখানেই পাবি।
চলবে…♥️