মায়াজালে এখনো আমি । আনান্নিয়া আন্নি
পর্বঃ ২০
(৩০ নভেম্বর)
বড় ভাইয়া ইমাদ কে পাকা কথা জানিয়ে দিয়েছে,,
বাড়িতে চলছে স্বল্প সময়ে কারো ভালোবাসা বিলুপ্তির চেষ্টায় বিয়ে নামক একটা কুরবানির তোরজোর! সবাই কি সুন্দর স্বাভাবিক ভাবে যোগাড়যন্ত্র করে চলেছে যেনো ওদের ওপর কোনোকিছুরই কোনো প্রভাব পরেনি;
আমিও না! ওদের ওপর কেনো এর প্রভাব পরতে যাবে? আমার জীবনে ঘটে যাওয়া এই অস্বাভাবিক ঘটনা,আমার ভেতরে হওয়া এই ঝড় তুফানের কিছুই তো তারা দেখতে পায়নি, বুঝতে পারেনি,উপলব্ধি করতে পারেনি তাহলে ওদের ওপরে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রভাব পরবে কি করে?
আজকের অনুভূতি গুলো কেমন অদ্ভুত, অন্যরকম। লিখে প্রকাশ করার মতো নয়, তারপর ও আমি লিখছি, কারন ভেতরের আমি টাকে প্রকাশ করার জন্য এই ডায়েরি আর কলম ছাড়া আমার আর কেউ নেই। বাবা মা বেঁচে থাকলে হয়তো অন্যরকম হতে পারতো আমার জীবনটা, হয়তোবা এখন আমি ডায়েরিতে কলম খুঁচিয়ে নিজের ভেতরের যন্ত্রণার প্রকাশ না করে মাকে জড়িয়ে ধরে সবটা বলতে পারতাম, হতে পারতো এমনটাও কিন্তু হয়নি!
বড় ভাবির চোখে চোখ রেখে আর তাকাইনি, ইচ্ছে করেই বড় ভাইয়ার সামনে আর দাঁড় করায়নি নিজেকে। সাহস রেখেছি, আশা রেখে চলেছি এখনো অব্দি, বিয়ে পর্যন্ত টিকে থাকার লড়াই করে যাচ্ছি, দেখা যাক কি হয় শেষ পর্যন্ত!
মনের কোনে ভরসা গুলো কেমন উঁকি দিয়েই চলেছে,মন আমার বলেই চলেছে নীড় আসবে, সবকিছুর বেড়াজাল ভেঙে আমার মায়াজালে আটকাবে সে, এই বুঝি সে এসে বলবে অপ্সরা তুমি আমার, শুধুই আমার, আর তোমার জন্য আমি জীবনের সর্বস্ব দিয়ে লড়াই করতে রাজি আছি….
(২ ডিসেম্বর)
তিনদিন কেটে গেলো। কিন্তু বিপরীত দিক থেকে নীড় এর আর কোনো সাড়াশব্দ পেলামনা,একবারের জন্য সে আর আমায় ফোন ও করলোনা।আর মাত্র ক’টা দিন! তারপর সবকিছু বদলে যাবে, আমার পরিচয় বদলে যাবে,আমার সাথে গড়ে ওঠা বেশকিছু মানুষের সাথে সম্পর্কের সমীকরণ ও বদলে যাবে, শুধু সম্পর্কের সমীকরণ নয় হয়তো অনেক গুলো জীবনই পাল্টে যাবে পুরোপুরি।
(৩ ডিসেম্বর)
আজ নীড় ফোন করেছিলো আমায়, ওর ফোন পেয়ে কি যে সীমাহীন আনন্দ বুকের ভেতর নাড়া দিয়ে উঠেছিলো তা প্রকাশ করতে আমি ব্যর্থ। তবে হ্যা ওর কথাগুলো শুনে আমি যে আবার এক সীমাহীন বেদনায় মর্মাহত হয়েছি সেটা প্রকাশ করতে এই ডায়েরি কথপোকথনে একটা বৃথা চেষ্টা মাত্র!
কেমন আছো অপ্সরা?
আমি ভালো আছি, বরং একটু বেশিই ভালো আছি, বাড়িতে আমার বিয়ের তোরজোর চলছে আর আমি ভালো থাকবোনা? তুমি কেমন আছো বলো?
এই তো আছি বেশ….
তোমার নতুন জীবনে শুভকামনা জানাতে ফোন করেছি অপ্সরা, মানুষের জীবনে অনেক কিছুই পাওয়া হয়ে ওঠেনা, আবার এমন অনেক কিছুই আছে যা তারা না চাইতেই পেয়ে যায়, তবে পরিস্থিতি আর সময়ের সাথে সবটাই মানিয়ে নিতে হয়। আমাদের ক্ষেত্রেও ধরে নাও সেরকমই হয়েছে, মনে রাখতে চাইলে এটা একটা সুন্দর স্বপ্ন বলে ধরে নেবে আর ভুলে যেতে চাইলে দুঃস্বপ্ন বলে ধরে নেবে…
ব্যাস..এই সুন্দর ক’খানা কথা দিয়েই নীড় আমার পুরনো জীবনকে বিদায় জানিয়ে নতুন জীবনকে স্বাগত জানানোর পন্থা সহজ করে দিয়ে ফোন টা কেটে দিলো।আমি আবারও আবেগ অনুভূতিহীন একজন মূর্তিমান মানুষের মতো তার কথাগুলো ভাবতে ভাবতে এগোচ্ছি সেই বিয়ে নামক দিনটার দিকে!
তবে বিশ্বাস করতে পারছিনা কোনটা ঠিক হলো আর কোনটা ভুল? তাহলে কি ইমাদ এর সাথে বিচ্ছেদ করাটা
(৫ ডিসেম্বর)
কাল আমার বিয়ে……
চলবে❤️