অগণিত মানুষের ভালোবাসাই আমাকে এগিয়ে চলার শক্তি জুগিয়েছে- বিডি২৪ ভিউজ কে বিজয় সরকার
উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ বিজয় সরকার। যাঁকে ভালোবাসেন দেশে এবং দেশের বাইরে অগণিত শ্রোতা। ভক্তদের কাছে বিজয় সরকার একটা বিশ্বস্ময়কর নাম। তিনি নিজের কল্পনাকে বাস্তবরূপে প্রকাশের নিমিত্তে সংগীত করে থাকেন বলেই দেশ-বিদেশের এতো ভালোবাসায় তিনি সিক্ত হোন প্রতিনিয়ত। আজ অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডি২৪ভিউজের সাথে কথা বলেন গুণী এই সংগীত ব্যাক্তিত্ব।
সাক্ষাতকার নিয়েছেন : — জাহিদ হাসান নিশান।
প্রশ্নঃ-কত বছর বয়স থেকে গান করছেন, সংগীতে আপনার হাতে খড়ি কার কাছে?
বিজয় সরকারঃ-ছোট বেলায় আমার বয়স যখন ১২- ১৩ বছর তখন থেকে আমার স্বর্গীয়া মাতা মাধবী সরকাররের কাছে আমার প্রথম হাতে খড়ি। সেই দিক থেকে আমার প্রথম সংগীত গুরু আমার মা । খুব আদর দিয়ে আমাকে গান শেখাতেন মা।
প্রশ্নঃ- দীর্ঘ এক সংগীতজীবন আপনার। কোন শিল্পীর গান আপনাকে বেশি প্রভাবিত করেছে সংগীত জীবনে?
বিজয় সরকারঃ ছোটবেলা থেকে নিজের অজান্তে গান শুনতে শুনতে উপমহাদেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী পঙ্কজ মল্লিক, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, জগজিৎ সিং, আরিফুল ইসলাম মিঠু,নিয়াজ মাহমুদ চৌধুরী, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়,সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়,রুনা লায়লা, লতা মুঙ্গেশকর, হৈমন্তী শুক্লা অনুপ ঝালোটা প্রমুখের ভক্তে পরিণত হয়েছিলাম। তাঁদের গান এখনো আমি শুনি, তাঁদের গানই আমাকে প্রভাবিত করে প্রতিনিয়ত।
প্রশ্নঃ-সংগীতের ক্ষেত্রে কি সাধনা বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
বিজয় সরকারঃ- হ্যাঁ, একদম, । সংগীত আসলে এক ঐশ্বরিক বিষয়। ঈশ্বরের সাহায্য ছাড়া সংগীত সম্ভব নয়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় কথা হলো, ‘অনুশীলন’।অনুশীলনের কোন বিকল্প নেই। সাধনা ছাড়া ‘সংগীত’ শুধুই কল্পনামাত্র। সাধনা ও সংগীত মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। হয়তো টাকার জোড়ে প্রযুক্তির কল্যানে একজন হয়ে উঠল শিল্পী, কিন্তু সেটা খুব সীমিত সময়ের জন্য। এভাবে সে হয়তো বড়জোর এক থেকে দুই বছর চলতে পারবে এরপর হারিয়ে যেতে হবে। কেউ তাকে খুঁজবেনা। সাধনা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই সংগীতে।
প্রশ্নঃ-দেখা যায় প্রায়ই, আমাদের দেশের শিল্পীরা শেষজীবনে অর্থকষ্টে ভোগেন। এটাকে আপনি কিভাবে দেখেন?
বিজয় সরকারঃ- আমাদের নিজেদেরই সৃষ্ট সমস্যা এটা। অন্য পেশার ক্ষেত্রে খেয়াল করেন, অন্য পেশার লোক নানা উপায়ে তাদের কাজের যোগ্য পারিশ্রমিক আদায় করে নেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজের অধিকার আদায়ে তারা সংগঠিত। আমরা শিল্পীরা নিজেদের পাওনা আদায়ে মনোযোগী নই, সংগঠিত নই। নিজেদের অধিকার সম্পর্কে আমরা সচেতন নই। শিল্পীদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিজেদেরও ভাবতে হবে। পাশাপাশি দেশেরও শিল্পীদের প্রতি কিছু দায়িত্ব রয়ে যায়।
প্রশ্নঃ- নতুন যারা গান করছে তারা শো পাওয়া থেকে শুরু করে পেমেন্ট, অনেক ক্ষেত্রেই বৈষম্যের স্বীকার হন। কী বলবেন?
বিজয় সরকারঃ- সেটা তো নিশ্চয়ই হচ্ছে। যে যতো বেশি নিজেকে প্রফেশনাল করে নিতে পারবে সেই উঠে আসছে বিশ্ব দরবারে। প্রফেশনাল বলতে শিল্প বা মননের কথা নয়। এ প্রসঙ্গে বলছি আর্থিকভাবে প্রফেশনাল হয়ে ওঠার কথা। তবে সবার তো সেই আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য নেই তাই অনেক শিল্পীই হারিয়ে যাচ্ছে। তবে শিল্পসত্ত্বা বাঁচিয়ে রাখতে গেলে রিয়েলিটি শোতে যেতে হবে তার কোনো মানে নেই। কেউ পাড়ায় ভালো গান গাইলে সে পাড়ার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উচিৎ তাদের উৎসাহ দেওয়া, মঞ্চ দেওয়া,সুযোগ দেওয়া। আর সেই সাথে অবশ্যই পারিশ্রমিক দিয়ে তাদের সম্মান জানানো। সে পারিশ্রমিক যে টাকাই হতে হবে তার কোন মানে নেই। তবেই আমরা ধীরে ধীরে শিখতে পারবো যে কোনো শিল্পীর থেকে শিল্পকে বিনা পারিশ্রমিকে নিংড়ে নেওয়া উচিৎ নয়।
প্রশ্নঃ-আপনি গানের ব্যাপারেও তো খুব যত্নশীল । ভালো মানের লিরিক ছাড়া গান করেন না?
বিজয় সরকারঃ-সস্তা লিরিকে গান করার প্রস্তাবতো মাঝে মধ্যেই আসে । আমি গাইনা। আবার নিজে লিখেও গাইতে পারি, কিন্তু আমি আমার মা-র কাছে, গুরুজির কাছে যে ভাবে গান শিখেছি তার পর কোনও সস্তা শব্দের গান আমি লিখবনা গাইবোননা সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য। পারব না। যদি গাই, কিংবা লিখি আমার শিক্ষাই আমাকে প্রশ্ন করবে। আর নব্বইটা এই ধরনের নিরর্থক গান গাওয়ার চেয়ে দশটা ভাল গান গাইলেই যথেষ্ট।
প্রশ্নঃ-আপনার সংগীতে এতো প্রাপ্তি, জীবনের ব্যর্থতার কিছু নাই?
বিজয় সরকারঃ- ব্যর্থতার খোঁজ নেইনি। কর্মক্ষেত্রে দ্বায়িত্বশীল থেকেছি,সব সময় কাজের মধ্যেই থেকেছি এবং সত্যের পথে হেঁটেছি। আমি যা তাতেই আমি সুখি এবং সফল, সফলতার পাশাপাশি ব্যর্থতাটুকু আমার বলে আনন্দের সাথে গ্রহণ করেছি। কেননা, ঈশ্বর মহাপরিকল্পনাকারী।
প্রশ্নঃ- এখনো এই বয়সে এতো প্রান শক্তি কোথায় পান?
বিজয় সরকার :- সংগীতের প্রতি ভালোবাসা ছিল। তাই দিনমান গান করে গেছি। গানের সুবাদে কী পাব, কী হারাব তা নিয়ে ভাবিনি। মায়ের কাছে তালিম নেওয়া শুরু করেছিলাম। গান করতে করতে কোথা দিয়ে যে এতগুলো বছর কেটে গেল, বুঝতেই পারিনি। আমার যত অর্জন সব সঙ্গীতকে নিয়েই। দীর্ঘ সময় কয়েক শত গান লিখলাম, সুর করলাম গাইলাম । অথচ ভাবলে আবাক লাগে, গানে গানে এতগুলো বছর কাটিয়ে দিয়েছি। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, অগণিত মানুষের ভালোবাসাই আমাকে এগিয়ে চলার শক্তি জুগিয়েছে।
— জাহিদ হাসান নিশান।