মৃৃৎ শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : আধুনিক প্রযুক্তির কাছে টিকতে না পারায় প্রায় বিলুপ্তির পথে মৃৎ শিল্প । টাঙ্গাইলের মৃৎ শিল্প অত্যাধুনিক প্লাস্টিক, অ্যালুমোনিয়াম ও মেলামাইনের দাপটে বাজারে হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্তমান সামাজিকতায় মৃৎ শিল্পের ব্যবহার চোখে পড়ে না, সৌখিন জিনিসপত্র এবং কুয়ার পাট তৈরিই মৃৎশিল্পীদের জীবিকার একমাত্র ভরসা। এ শিল্প প্রায় বিলুপ্ত। ফলে জেলার প্রতিভাবান মৃৎ শিল্পীরা অর্থাভাবে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। এক সময় গ্রাম্য মেলায় ও হাট-বাজারে মাটির তৈরি হাড়ি, পাতিল, কলসি, থালা(সানকি), কুয়ার পাট, নানা ধরণের খেলনা, বিভিন্ন পিঠা তৈরির খরমা(সাজ) শোভা পেত।এক্ষন স্থান দখল করে নিয়েছে অ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিক ও মেলামাইনের তৈরির পন্য। মাটির তৈরি এসব পারিবারিক বিজ্ঞানভিত্তিক স্বাস্থসম্মত ও সুস্বাদুপণ্যের আধার হিসেবে পরিগণিত। টাঙ্গাইল বিসিক সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ১৫৮টি কুমার পরিবার রয়েছে তাদের অধিকাংশই পৈত্রিক পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মৃৎ শিল্পীরা সুনিপুন শৈল্পিকতায় তৈরি করছেন পুতুল, ফুলের টব, কুয়ার পাট, হাঁড়ি-পাতিল, খেলনা, শো-পিস সহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় ও সৌখিন জিনিসপত্র। এসব পণ্য তারা শহরের দোকান এবং বাসা-বাড়িতে বিক্রি করে থাকেন। মৃৎশিল্পী বৈল্ল্যা গ্রামের রন্জিত জানায়, নানা উৎসব-পার্বণে বিভিন্ন এলাকায় আয়োজিত মেলায় আগতরা সখের বসে মাটির তৈরি ব্যাংক, পুতুল, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি, কারুকার্যকৃত ফুলদানী ইত্যাদি কিনে থাকে। করোনাকালে মেলার আয়োজনও বন্ধ থাকায় মৃৎশিল্পীরা কার্যত বেকার জীবন কাটিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। ধীরে ধীরে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও তারা ঋণের বোঝা থেকে মুক্ত হতে পারেনি।
মৃৎশিল্পী বাসাখানপুর গ্রামের ঝর্ণা রাণী বলেন, মৃৎশিল্পীদের বছরের ৩-৪মাস বেকার সময় কাটাতে হয়। বর্ষাকালে মাটির তৈরি পণ্য রোদে শুকানো যায়না ও চুলায়(পুন/মুখাই/ভাটা) আগুন দেওয়া যায়না। এ কারণে প্লাস্টিক, মেলামাইন ও অ্যালুমোনিয়ামের জিনিস সহজলভ্য। তারুটিয়ার বাদল পাল বলেন,মৃৎ শিল্পীরা তাদের বাপ-দাদার পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। পৈত্রিক পেশাকে টিকিয়ে রাখতে জড়িতরা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি করেন। টাঙ্গাইল বিসিক শিল্প নগরীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক শাহনাজ বেগম বিডি২৪ভিউজ কে বলেন, যে সব মৃৎ শিল্পীরা শো-পিস তৈরি করে তাদেরকে প্রশিক্ষণ ও ব্যাংক ঋণে সহযোগিতা করা হয়। যারা মাটির তৈরি শো-পিস তৈরি করে থাকেন মেধা বাছাই করে তাদের মধ্য থেকে মেধাবীদের শিল্পভবনে তিন মাসের একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্যবসা করার জন্য বিসিকের মাধ্যমে স্বল্পসুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা হয় ।