কাজীরহাট ফেরিঘাটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিনিধি পাবনা : পাবনার কাজীর হাট থেকে আরিচাঘাট নৌরুটে চারটি ফেরী দিয়েও যেখানে যানবাহন ও মানুষ পারাপারে দেখা দিয়েছে গাদাগাদি। সেখানে একটি ফেরী বন্ধ করে দেয়ায় যাত্রী ও পরিবহন পারাপারে দেখা দিয়েছে মারাত্মক ভোগান্তি। সেই সাথে ঘাট এলাকায় ইজারাদারের লোকজন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন বলে ভূক্তভোগীদের একাধিক অভিযোগ।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিধি আরোপের লকডাউন আর ঈদের ছুটি কাটিয়ে গ্রামে ঈদ করতে আসা চাকুরিজীবীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ নিজ কর্মস্থলে ছুঁটেছেন। গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মানুষের ঢাকা প্রবেশের এই রুট জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। তীব্র রোদ্র আর ভ্যাপসা গরম উপেক্ষা করে ফেরী পারাপারের জন্য শতশত যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন অপেক্ষা করছে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে। ফেরী ঘাটে দাঁড়ানোর সাথে সাথে মানুষের হৈহুল্লুর করে উঠতে গিয়ে কেউ কেউ দূর্ঘটনার শিকারও হচ্ছেন। কেউ বা গরমে অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন। আর গাদাগাদি করে ফেরীতে উঠার কারণে স্বাস্থ্যবিধির নেই কোন তোয়াক্কা।
এদিকে সুযোগ সন্ধানী কাজীরহাট ঘাটে ইজারাদারের নিয়োজিদ লোকজন ফেরী পারাপারের জন্য টিকিট বিক্রি করছেন। যাত্রীদের কাছ থেকে নির্ধারিত ২৫ টাকার পরিবর্তে জোরপূর্বক আদায় করা হচ্ছে ৩০ টাকা করে। টিকিট বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা ঈদের আগে থেকেই ৩০ টাকা করে আদায় করছে। টিকিটের মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে বিক্রেতারা কোন সদ্যুত্তর দিতে পারেনি।
অন্যদিকে বিআইডব্লিউটিসি কারিগরি ত্রুটির কারণে গত ১৮ মে একটি ফেরী বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের দাবী, মেরামতের জন্য ফেরীটি কারখানায় পাঠানো হয়েছে। আপাতত তিনটি ফেরী দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। যদিও চাপ বেশি থাকায় যাত্রী সেবা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে দাবী বিআইডব্লিউটিসি’র সংশ্লিষ্টদের দাবী।
শিক্ষার্থী রাশেদ হাসান জানান, ঈদের ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন তিনি। কাজীরহাট ফেরীঘাটে এসে ইজারাদারদের মনোনীত প্রতিনিধিদের বাধার মুখে পড়েছি। তাঁর কাছ থেকে ফেরিতে নদী পারাপারের টিকিটের জন্য ৩০ টাকা আদায় করা হয়। রাশেদের দাবী, নাটোর থেকে এ পর্যন্ত ভেঙ্গে ভেঙ্গে এসেছি বেশি ভাড়া দিয়ে। ইচ্ছে ছিল সরকারি ফেরীতে স্বল্প ভাড়ায় নদী পার হবো। কিন্তু সেটা আর হয়নি। বেশি টাকা দিয়েই নদী পার হতে হচ্ছে।
শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরীজীবী সাইফুল ইসলাম, শফিকুল আলম, আজম আলী, মোতালেব হোসেন, নাজমুর ইসলামসহ বেশ কয়েকজন জানান, ফেরী বাড়ানো জরুরী। তীব্র রোদ্র আর ভ্যাপসা গরমে পরিবার পরিজন নিয়ে অতিষ্ঠ। এর মধ্যে ফেরী সংট অথচ বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। যা মোটেও কাম্য নয়। বেশি ফেরী দিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করলে সেটা সহনীয় ছিল। এটা নিরসনের দাবী তাদের।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সাথে আলাপকালে তারা বলেন, বেড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও রূপপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের যোগসাজসে ইজারাদার কৌশলে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। তারা আরও বলেন, প্রতিদিন এই ঘাট দিয়ে অসংখ্য মানুষ পারাপার হচ্ছেন। প্রতিদিন তারা হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
এ ব্যাপারে বেড়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবুর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আর রুপপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেম উজ্জল বলেন, লোক মুখে আমি শুনেছি অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার কথা। জানার পর নিষেধ করে দিয়েছি। তিনি বলেন আর অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে না।
বিআইডব্লিউটিসি ফেরি সার্ভিসের টিকিট বিক্রির দায়িত্বে থাকা কাজিরহাট ঘাট এলাকার ইজারাদারের প্রতিনিধি পল্লব হোসেন বলেন, ঘাটে ১২ জন টিকিট বিক্রেতা কাজ করছে। কোন যাত্রীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে না। সরকার নির্দারিত ২৫ টাকায় টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। নগরবাড়ী নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক জাহাঙ্গীর হোসেন খান বলেন, স্থানীয়রা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে আমি জেনেছি। অভিযোগ পাওয়ার পরপরই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, যাত্রী পারাপারে স্বাস্থ্য বিধি মানার বিষয়ে পুলিশ কাজ করছে।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেন, ১৮ মে পর্যন্ত চারটি ফেরী সার্ভিস দিয়েছে পালা করে। যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়ায় একটি ফেরী কারখানায় মেরামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। যে কারণে বাকি তিনটি ফেরীর উপর চাপ পড়েছে। তিনি বলেন, মেরামতে যাওয়া ফেরীটি ঘাটে না আসা পর্যন্ত এই চাপ ও সাময়িক সমস্যা মেনে নিতে হবে। ভাড়া বেশি নেয়ার বিষয়ে জিল্লুর রহমান বলেন, আমার কাছে এমন অভিযোগ আসার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে ভাড়া অতিরিক্ত না নেয়ার জন্য নিষেধ করে দিয়েছি।