প্রতিবন্ধী অরুণ দাশ একহাত দিয়ে বাঁশ শিল্পের কাজ করেই চালান ৯ জনের সংসার !
আবুল কালাম আজাদ : বর্তমান সময়ে সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ যেখানে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে মাত্র একটি হাত দিয়ে বাঁশ শিল্পের কাজ করেই ৯ জনের সংসার চালাচ্ছেন পাবনা চাটমোহরের প্রতিবন্ধি অরুন দাশ(৪৯)। অভাব আসলেও কখনো কারও কাছে মাথা নত করেননি তিনি। পুঁজি অভাবে অনেক সময় তার কাজও বন্ধ থাকে। সরকারী সহযোগিতা পেলে তিনি একটু সুখে শান্তিতে থাকতে চান।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার অমৃতকুন্ডা গ্রামের স্বর্গীয় নরেণ দাশের ছেলে অরুণ দাশ। ১৭ বছর বয়সেই এলাকার একটি রাইচ মিলে কাজ করার সময় অসাবধনতাবশত: দূর্ঘটনায় তার ডান হাতটি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এ ঘটনার পর প্রায় ৩ বছর সে নির্বাক হয়ে চুপচাপ বসে থাকতো। এরপর সে বাবা মার পরামর্শে স্বল্প পুঁজি নিয়ে এক হাত দিয়েই বাঁশ শিল্পের কাজ শুরু করেন। মুলাডুলির ললিতা রানীর সাথে বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলেই বাঁশ দিয়ে ঝুড়ি/টুপড়ি তৈরি করে সংসার চালাতেন। এক সময় সংসার ভারী হয়ে যায়। একটি ছেলের আশায় তার ৬ মেয়ে, বৃদ্ধা অসুস্থ মাসহ মোট ৯ জন সদস্য তাদের সংসারে। এই উপার্জন দিয়েই বড় তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। সংসার চালাতে গিয়ে অনেক অভাব অনটনের সম্মুখীন হতে হয় তাদের। কখনও খেয়ে না খেয়ে দিন চলে তাদের। সমিতি থেকে ঋন নিয়ে বড় তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।
এসব ঋনের কিস্তির টাকাও তার দিতে হয়। এজন্য অর্থের অভাবে ছোট মেয়েদের ঠিকমত লেখাপড়ার খরচ ও জামাকাপড় দিতে পারেন না। তারপরও কারও কাছে কখনও হাত পাতেননি অরুন দাশ। ব্যবসার পুঁজি না থাকায় ধার-দেনা করে ২টি বাঁশ কিনে দিনে ১০টি ঝুপড়ি/টুপড়ি তৈরি করেন। পাইকারদের কাছে সেই ১০টি ঝুপড়ি বিক্রি করেন ৭০০টাকায়। এতে বাঁশের দাম ৩০০টাকা বাদ দিলে তার আয় থাকে ৪০০টাকা কখনো তারও কম। ২৭ বছর ধরে একাজের মধ্যেিদয়ই দৈন্যদশার মধ্য দিয়ে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন অরুন দাশ। সরকারী সহযোগিতায় একটু ব্যবসার পুঁজি ও একটা ঘরের ব্যবস্থা করলে তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে একটু শান্তি থাকতে চান।
অরুন দাশের মেয়ে পুজা দাশ জানায় বাবার একহাত নাই। তিনি ভালোভাবে কাজ করতে পারেন না। ফলে তাদের সংসার চলে কষ্টের মধ্যে দিয়ে। জীবনে কোনদিনই তারা সখ করে একটা জামা কাপড় বা অন্য কিছু কিনতে পারেনি। অরুন দাশের স্ত্রী ললিতা রানী জানান, স্বামীর একহাত নেই। এজন্য সে সবসময় তার সাথে কাজে সহযোগিতা করেন। সরকার একটু সহযোগিতা করলে একটু বাঁচতেম বলে জানায় ললিতা।
অরুন দাশ জানান, একটা ছেলের আশায় তার ৬টা মেয়ে হয়েছে। এতবড় সংসার চালানো তার পক্ষে সম্ভব না। ঠিকমত বাচ্চাদের দুডে ভাতও দিবের পারিনে। যে জাগায় বসে কাম হরি সে জাগা তার লয়, অন্য মানসির। তারা নানা কতা কয়। খুবই কষ্টে তাকে চলতে হয়। তাই সরকারীভাবে তাকে একটু সহযোগিতা পেলে একটু শান্তি পেতেন। অরুন দাশের প্রতিবেশি মিতুন দাশ বলেন, অরুনের এক হাত না থাকায় সে খুবই কষ্টে সংসার চালায়। সরকার তাকে একটু দান অনুদান দিলে বেচারা বাঁচতো।
এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈকত ইসলাম জানান, তিনি অরুনের বিষয়টি জানার পরপরই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অরুণ দাশকে কিছুটা সহযোগিতা করেছেন। তারপরও ওই এলাকায় খাস জমি পেলে তার জন্য একটি থাকার ঘরের ব্যবস্থা করবেন। সেই সাথে তার কিছু ব্যবসার পুঁিজর চিন্তাভাবনাও করছেন তিনি। পঙ্গু অরুণ দাশকে সরকারীভাবে একটু সহযোগিতা করে তাকে মানবেতর জীবনযাপনের ব্যবস্থা করবেন প্রশাসন এমনটাই আশা এলাকাবাসির।