মোবাইল ব্যাংকিং সেবার করপোরেট ট্যাক্স কমছে
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : শিল্প খাতে কালোটাকা বিনিয়োগের ‘বিশেষ’ সুযোগ দিয়ে আজ জাতীয় সংসদে অর্থবিল পাশ হবে। শিল্পের স্বার্থে আরও বেশকিছু কর ছাড় দেওয়া হবে। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং সেবার করপোরেট কর কমানো হচ্ছে। একই সঙ্গে শিল্পের কাঁচামাল ক্রয়ে ক্রসচেকে লেনদেনের শর্ত শিথিল করা হচ্ছে।
৩ জুন ঘোষিত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করোনার প্রেক্ষাপটে শিল্প বিনিয়োগকে চাঙা করতে নানা করছাড় দেওয়া হয়। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এবং তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির করপোরেট কর হ্রাস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টার্নওভারের ওপর ন্যূনতম কর হ্রাস, এক ব্যক্তির কোম্পানির করপোরেট কর হ্রাস, আইটি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে কর অবকাশ সুবিধা এবং ভ্যাটের আগাম কর হ্রাস অন্যতম। এরই ধারাবাহিকতায় আরও বেশকিছু করছাড় দেওয়া হচ্ছে। যেমন মোবাইল ব্যাংকিং সেবার করপোরেট কর প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ করা হয়। এটি কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বাজেট ঘোষণার পর মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলো পৃথকভাবে করপোরেট কর কমানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আবেদন করে। এনবিআর প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে এ খাতে করপোরেট কর কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো লাভবান হবে। কারণ আগে তাদের ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে কর দিতে হতো। যেহেতু পুঁজিবাজারে তালিকাবহির্ভূত সাধারণ কোম্পানির করহার ৩০ শতাংশ করা হয়েছে, তাই এমএফএস প্রতিষ্ঠানকে ওই হারেই কর দিতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং (এমএফএস) কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক রকেট নামে প্রথম এই সেবা চালু করে। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিকাশ সেবা চালু করে। বর্তমানে ১৫টি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-বিকাশ, রকেট, এম ক্যাশ, শিওর ক্যাশ, ইউক্যাশ, মোবাইল মানি, নগদ ও উপায়।
এছাড়া শিল্প খাতে কালোটাকা বিনিয়োগের বিশেষ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এজন্য অর্থবিলের মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশে একটি নতুন ধারা যুক্ত করা হচ্ছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ১০ শতাংশ কর দিয়ে দেশের যে কোনো উৎপাদনশীল খাতে কালোটাকা বিনিয়োগ করা যাবে। ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এ সুবিধা বলবৎ থাকবে। এই বিনিয়োগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বা সরকারের অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না। আবাসন ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও নতুন বিধান করা হচ্ছে। পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরের ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা বিনিয়োগের বিশেষ সুবিধা বাতিল হয়ে যাচ্ছে।
এর পরিবর্তে নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ৫ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে। অর্থাৎ কর ২৫ শতাংশ হলে ৫ শতাংশ হারে এক দশমিক ২৫ শতাংশসহ ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কর দিয়ে টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা যাবে। এ নিয়ম মেনে বিনিয়োগ করলে দুদক বা অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না। ব্যাংকে রক্ষিত নগদ অর্থ ও আমানত রিটার্নে প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ আয়কর ও ৫ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে। যা চলতি বাজেটে ছিল ১০ শতাংশ। আবাসন খাতেও কালোটাকা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট বা প্লটের বর্গমিটারপ্রতি আগের নিয়মে কর দিতে হবে। এর সঙ্গে ৫ শতাংশ জরিমানার বিধান যুক্ত করা হচ্ছে, যা সংশোধিত অর্থবিলে উল্লেখ থাকবে।
এছাড়া শিল্পের কাঁচামাল ক্রয়ে ক্রসচেকের শর্ত শিথিল করা হচ্ছে। বর্তমানে ৫০ হাজার টাকার বেশি কাঁচামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে চেকে লেনদেনের বিধান চালু আছে। এটি বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করা হচ্ছে। এতে শিল্প উদ্যোক্তারা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন। পাশাপাশি কর্মীদের বেতন পরিশোধে নতুন নিয়ম আসছে। বিদ্যমান আয়কর অধ্যাদেশে কর্মীদের বেতন-ভাতা ও সম্মানির পরিমাণ ১৫ হাজার টাকার বেশি হলে তা ক্রস চেক বা ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে করার বিধান রয়েছে। তা না হলে এই খাতে ব্যয় করা অর্থ আয় হিসাবে দেখানো হয় না। আর আয় হিসাবে গণ্য করলে তা করযোগ্য হয়ে যায়। সংশোধিত অর্থবিলে এই সীমা ১৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হচ্ছে।