কঙ্গোর শিশু-কিশোরদের মুখে বাংলার জয়গান
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি…, স্বাধীনতার যুদ্ধে যাব…, আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে- এমন জনপ্রিয় নানা বাংলা গান এখন আফ্রিকার দেশ কঙ্গোর অনেক শিশু-কিশোরের মুখে মুখে। তারা যে কেবল গানই গাইছে তাই নয়, কঙ্গোর এই শিশু-কিশোররা বাংলা ভাষাও চর্চা করছে।
শনিবার কঙ্গোর স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটার দিকে দেশটির সীমান্তবর্তী গোমা শহরে গেলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যানএমপি কন্টিনজেন্টের ক্যাম্পে মনোমুগ্ধকর এমনই দৃশ্য দেখা যায়। এই ব্যানএমপিতেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘বাংলা ক্লাব’। যেখানে স্থানীয় কঙ্গোর শিশু-কিশোররা বাংলা ভাষা, গান, বাঙালি সংস্কৃতি ও খেলাধুলা রপ্ত করছে। কিন্তু নিজ দেশের বাইরেও প্রায় ১০ হাজার মাইল দূরের লাল-সবুজের বাংলাদেশের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি কেনই-বা তাদের এত আগ্রহ? এসব জানতে গিয়ে বিস্ময়কর নানা তথ্য পাওয়া যায়।
এর অন্যতম কারণ হচ্ছে- বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের মানবিক কর্মকাণ্ড। বাংলাদেশ শান্তিরক্ষীরা গোলযোগপূর্ণ এই দেশে স্থানীয়দের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। বিপদে সহায়, দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় সবার আগে স্বজনের মতো পাশে দাঁড়ান বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা। গতকাল গোমা শহরসহ আশপাশের এলাকা পরিদর্শনকালেও সেসব দৃশ্য চোখে পড়েছে। গৌরবের বিষয় হচ্ছে- পথে বের হয়ে গাড়িযোগে সামনে এগোলেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষী দেখলেই কঙ্গোর ‘শিশু-কিশোররা সমস্বরে বলে ওঠে- বাংলাদেশ আমাদের ভালো বন্ধু, এরপর হাত জাগিয়ে স্যালুট। এমনকি বিভিন্ন বয়সি কঙ্গোর স্থানীয়দের মুখে মুখেও বাংলাদেশের প্রশংসা ও বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীর কৃতজ্ঞতা জানাতে দেখা যায়।
এ প্রসঙ্গে গোমার ফোর্স ব্যানএমপি-১৬-এর ডেপুটি কন্টিনজেন্ট কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সময়ের আলোকে বলেন, আমাদের সঙ্গে কঙ্গোর সাধারণ মানুষের ভাষা ও সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন সুদৃঢ় করার লক্ষ্যেই বাংলা ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এখানে কঙ্গোর ২১ শিশু-কিশোর স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাংলা ভাষা শিখছে। তিনি বলেন, একসময় হয়তো এখানে জাতিসংঘ বা শান্তিরক্ষীরা থাকবে না, কিন্তু এই বাংলা ভাষা এবং বাঙালি সংস্কৃতি এখানে থেকে যাবে। সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা। এখানে শান্তিরক্ষার পাশাপাশি আমরা এ লক্ষ্যেও কাজ করছি।
কঙ্গোর গোমা শহরের কিশোর বাসিন্দা এরিক সময়ের আলোকে বাংলা ভাষায় তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন, যা সময়ের আলোর কাছে ভিডিও সংরক্ষিত আছে। এরিক বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় বন্ধু। বাংলাদেশকে আমরা ভালোবাসি। কেননা, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা মানবিক, দক্ষ এবং বিপদে দ্রুত পাশে পাওয়া যায়। বাংলাদেশ আমাদের চিকিৎসা দিচ্ছে, শিক্ষা দিচ্ছে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু…’
কঙ্গো পরিদর্শনে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, এত দূরের একটি দেশ কঙ্গোর স্থানীয়দের মুখে বাংলা ভাষা কিংবা বাংলাদেশের প্রশংসা সত্যি গর্ব করার মতো। এর নেপথ্যের কারণ হচ্ছে, আমাদের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের পেশাদারিত্ব ও তাদের মানবিক আচরণ। এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আন্তর্জাতিক মহলেও তা প্রতিষ্ঠা করতে পারলে দেশের জন্য গুরুত্ব বহন করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।