তাসনিম খলিলের গুজব ও ব্যর্থতার উপাখ্যান

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সরকার, সেনাবাহিনী, র‌্যাব নিয়ে অনেকবার গুজব ছড়িয়েছে তাসনিম খলিল। এমনকি জাতিসংঘকে নিয়ে গুজব ছড়াতেও দ্বিধা করেনি সে। একই সঙ্গে নিয়মিত উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে দেশের মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদী গ্রুপগুলোকে। নিজের এসব দেশবিরোধী অপকর্ম লুকাতে এবং বৃহত্তর সাংবাদিক সমাজের শেল্টার পাওয়ার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত নিজেকে সাংবাদিক বলে দাবি করে সে। প্রোপাগান্ডা ওয়েবসাইট নেত্র নিউজের কুশীলব ডেভিড বার্গম্যান ও তাসনিম খলিলরা আসলেই কী সাংবাদিক? তাহলে তাদের সাংবাদিকতার নাম কি? নিয়মিত জঙ্গিবাদে উস্কানি দেওয়া এবং দেশের সরকার ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে মনগড়া ফেসবুক ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে গুজব ছড়ানোকেই কী তাহলে এরা দাবি করছে- অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা? আসুন একনজরে এদের গত কিছুদিনের দেশ ও জাতীয় স্বর্থ বিরোধী ষড়যন্ত্র এবং ব্যর্থতা সম্পর্কে একনজর জেনে নেই।

অল্প কিছুদিন আগের ঘটনা। নাশকতার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত একজন কয়েদির মৃত্যুর তথ্যকে টুইস্ট করে উগ্রবাদীদের উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করে তাসনিম খলিল। তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে সে লেখে: কারাবন্দি অবস্থায় হেফাজত নেতা মাওলানা ইকবাল হোসেনের মৃত্যু। এই মৃত্যুর দায় আওয়ামী রাষ্ট্রের। সকল রাজবন্দিদের মুক্ত করতে হবে। কারা নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।’

আপত দৃষ্টিতে এটিকে একটি প্রতিবাদী পোস্ট মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে আসলে কী? আমাদের মূল ধারার গণমাধ্যম থেকে জানা যায়: সুনির্দিষ্ট মামলায় আটকের পর কারাগারে যখন হেফাজত নেতা ইকবাল হোসেন অসুস্থ হয়ে যান, প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়। ১১ মে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা এই ব্যক্তি মারা যান ২০ মে। অর্থাৎ এই কয়দিন তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন এবং সেটিও নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে। সুতরাং কোনভাবেই কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়নি।

অথচ মূল তথ্য গোপন করে, ধর্মীয় ট্রাম্পকার্ড খেলার মাধ্যমে উগ্রবাদীদের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল তাসনিম খলিল। ঠিক একই রকমভাবে আল জাজিরায় কিঠু সত্যমিথ্যা মেশানো টুইস্টেট তথ্য সরবরাহ একটি থ্রিলার প্রকাশ করায় তারা। পরবর্তীতেত নিজেই ফেসবুকে স্টাটাস দেয় যে: ‘সোমবার আল-জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বেশ কিছু ঘটনা প্রকাশিত হবার পর জাতিসংঘ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুর্নীতি এবং অবৈধ কার্যাবলী নিয়ে পূর্ণ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।’ এছা[ড়াও তৎকালীন সেনাপ্রধানকে নিয়েও সে লেখে: ‘জেনারেল আজিজকে কভার করতে গিয়ে যে জাতিসংঘের সাথে ঝামেলা লাগায় দিলা সেইটা কি ভাল হল? পিস কিপিং মিশনে ইসরাইলি ইমসি ক্যাচার? এখন ঠেলা সামলাও’

কিন্তু বাস্তবতা হলো, জাতিসংঘ কখনো পাত্তাই দেয়নি আল জাজিরার উদ্দেশ্যমূলক থ্রিলার সংবাদকে (নিউজ না বলে ভিউজ বলুন)।

সেনাবাহিনী ও জাতিসংঘকে নিয়ে মিথ্যাচার: তাসনিম খলিল হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে কিনা নিজে কখনো মূলধারার সাংবাদিকতাই করেনি। অথচ সুইডেনে গিয়ে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার টাকায় একটি আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়েব পোর্টালের সম্পাদক সেজে বসে আছে। সাংবাদিকতার ছদ্মবেশে কথায় কথায় বস্তুনিষ্ঠতার বুলি কপলায় সে। অথচ বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে হেয় প্রতিপন্ন করতে প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। এমনকি দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে নিয়েও নোংরা খেলায় মেতে ওঠে সে। প্রোপাগান্ডা মেশিন নেত্র নিউজের পাশাপাশি নিজের ফেসবুক ও ইউটিউব থেকেও সেনাবাহিনী ও জাতিসংঘ মিশন নিয়েও নিয়মিত গুজব ছড়ায় সে।

জাতিসংঘ মুখপাত্রের বরাত দিয়ে তাসনিম খলিল তার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইল এবং নেত্র নিউজে লেখে যে, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুর্নীতি এবং অবৈধ কার্যাবলী নিয়ে পূর্ণ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।’ কিন্তু বাস্তব অর্থে জাতিসংঘের কোনো মুখপাত্র বিষয়টি নিয়ে কোনো কিছুই বলেনি। জাতিসংঘ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিষয়ে বা জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে কোনো তদন্তের কথা বলেননি। বরং বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে জাতিসংঘের মুখপাত্র বিষয়টিকে ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ এবং কোনো অভিযোগ থাকলে তা ‘বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদন্ত করা উচিত’ বলে মন্তব্য করেছেন।

এমনকি সেনাবাহিনীকে নিয়ে আরো বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট করেছে সে ফেসবুকে। একটি ফেসবুক পোস্টে সে লিখেছে: ‘জেনারেল আজিজকে কভার করতে গিয়ে যে জাতিসংঘের সাথে ঝামেলা লাগায় দিলা সেইটা কি ভাল হল? পিস কিপিং মিশনে ইসরাইলি ইমসি ক্যাচার? এখন ঠেলা সামলাও’।

তাসনিম খলিল যে অপকৌশলে খেলার চেষ্টা করেছে, তা হলো- সেনাবাহিনীর ভেতরেই একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করার চেষ্টা। অথচ বাংলাদেশকে নিয়ে একটা টু শব্দও করেনি জাতিসংঘ। এমনকি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও বাংলাদেশের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলছে। জাতিসংঘের পর্যবেক্ষরা আল জাজিরায় করা তাসনিম খলিলদের বানোয়াট ও আক্রোশমূলক সংবাদ সম্পর্কে ঠিকই বুঝতে পেরেছে। সে কারণেই বিষয়টি নিয়ে তারা আলোচনার প্রয়োজন অনুভব করেনি।

ফলে ব্যর্থ হয়ে বিষয়টি নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, মার্কিন সিনেট এবং আরও বেশ কিছু স্থানে নিজে থেকেই আল জাজিরার সেই থ্রিলার সরবরাহ করে সে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হালে পানি পায়নি সে। তার এই অব্যাহত অপচেষ্টার মধ্যেই মার্কিন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকে যোগ দেন জেনারেল আজিজ। ফলে সর্বক্ষেত্র দেখা যায়, আল-জাজিরার প্রতিবেদন বা নেত্র নিউজ এবং তাসনিম খলিল ও ডেভিড বার্গম্যান বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ে কোনো নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়।

র‌্যাব নিয়ে গুজব ও উস্কানি: গত বছর অক্টোবর মাসে র্যাব নিয়েও ফেসবুকে গুজব ছড়ায় তাসনিম খলিল। সে লেখে, ‘র্যাবের বর্তমান ও প্রাক্তন কমান্ডার ভাইয়েরা দোয়া-দুরুদ পড়তেছেন তো? ইউএস-এর স্যাংকশন লিস্টে নাম উঠে গেলে খবর আছে কিন্তু’। এই কথার মাধ্যমে র‍্যাব নিয়ে বিতর্কের জন্ম দেওয়াটাই ছিল তাসনিম খলিলের মূল উদ্দেশ্যে।

তবে বাস্তবতা হলো, তার এই পোস্ট দেওয়ার প্রায় এক বছর হতে যাচ্ছে। অথচ মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া দেওয়া হয়নি খলিলকে।

সাংবাদিকতার ছদ্মবেশে সরকাবিরোধী ঘৃণা ছড়ানোর মিশনে নেত্র নিউজ : বর্তমান সরকার ও সরকার প্রধানের বিরুদ্ধে তাসনিম খলিল ও ডেভিড বার্গম্যানের ব্যক্তিগত ক্ষোভ রয়েছে, যা তাদের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য ও ভাষার ব্যবহারে স্পষ্ট। সেই সঙ্গে নেত্র নিউজের অর্থের উৎস আরও স্পষ্ট করছে যে- কী কারণে এই ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা করছে তারা।

নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য তাসনিম খলিল নিজেই জানায়, আমেরিকার বেসরকারি সংস্থা ন্যাশনাল এন্ডৌমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি (এনইডি)-এর কাছ থেকে অর্থায়ন পায় নেত্র নিউজ। এটা জানানোর পর তাসনিম আরো জানায় যে, বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সেসব ইনডিপেনডেন্ট মিডিয়া আউটলেট কথা বলে, এনইডি তাদের প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়তা দেয়। তাদের অর্থেই নেত্র নিউজ ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার মিশন বাস্তবায়নে অর্থায়ন করে এনইডি। আর এনইডি-এর এজেন্ডা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখছে নেত্র নিউজ।

অন্যদিকে তাসনিম খলিলের আরেক সঙ্গী ডেভিড বার্গম্যান একসময় বাংলাদেশে ছিল। বিরোধী দলীয় জোটের নেতা ড. কামাল হোসেনের মেয়েকে বিয়ে করেছে সে। সুতরাং পারিবারিক সম্পর্কের কারণে বর্তমান সরকারের বিরোধিতা করছে বার্গম্যান। এমনকি মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও কটাক্ষ করে সে। এর আগে, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজে অবহেলা ও নৈতিক স্খলনের জন্য চাকরিচ্যুত হয় বার্গম্যান। এখন বিদেশে গিয়ে নিজেকে বাংলাদেশ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হিসেবে দাবি করে। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে লবিস্ট হিসেবে কাজ করা এই ব্যক্তি নিজেকে একদিকে ব্রিটিশ সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেয়, অন্যদিকে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের সঙ্গেও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন করে।

লক্ষ্য করে দেখুন, মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদকে কঠোর হস্তে দমনের জন্য যখন জাতিসংঘ বাংলাদেশের প্রশংসা করছে, এমন এক অবস্থায় মৌলবাদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে তাসনিম খলিল ও বার্গম্যান সরাসরি লিপ্ত হয়েছে সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্রে।

ডিসেম্বরের ৪ তারিখ এক পোস্টে তাসনিম লেখে, ‘কেউ যদি ভাস্কর্য বিরোধী মিছিল করতে চায় তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটাই পুলিশের কাজ, মিছিলে হামলা করা বা ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া নয়।’ অথচ জাতীয় স্বার্থবিরোধী যেকোনো ষড়যন্ত্র ও সমাবেশ বিশ্বব্যাপী কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তা তাসনিম খলিলরা দেখেও না দেখার ভান করছে। লন্ডনে লকডাউন বিরোধী বিক্ষোভ থেকে পুলিশ কীভাবে মানুষদের দূর করেছে বা হোয়াইট হাউজের সামনে ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডব থামাতে পুলিশের কার্যক্রম তিনি না দেখার ভান করে থাকেন। আর বাংলাদেশের মৌলবাদীদের ভাস্কর্য ভাংচুর এবং সেই ভাংচুর জারি রাখার পক্ষে আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে উস্কানি দেয়। এটি শুধু ব্যক্তি আক্রোশ থেকে সরকার বিরোধিতা নাকি মৌলবাদীদের প্রতি তার আদি টান- তাই এখন জানতে চায় মানুষ।

তাসনিম-বার্গম্যান এবং তাদের বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মওকা: এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশের বর্হিপ্রকাশ তাসনিম খলিলের পুরো ফেসবুক প্রোফাইলজুড়ে। সব পোস্টে প্রধানমন্ত্রীর নাম বিকৃত করে উপস্থাপন করে এই তথাকথিক ও স্বঘোষিত ‘বস্তুনিষ্ঠ’ সাংবাদিক।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.