এবারের লকডাউনে ২৩ নির্দেশনা, বন্ধ গার্মেন্ট-কারখানা
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ঈদ পরবর্তী লকডাউন কঠোর থেকে কঠোরতম হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। ২৩ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউনের আওতায় আসবে গোটা দেশ। টানা ১৪ দিন স্থায়ী হবে এই লকডাউন।
আজ শনিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত বিজিবির ৯৬তম রিক্রুট ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
আগামী ২৩ জুলাই সকাল ছয়টা থেকে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউনে গার্মেন্টসসহ সকল ধরনের শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী। গত মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে জানায়, কুরবানি ঈদকে সামনে রেখে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত সব বিধিনিষেধ শিথিল করা হলো।
তবে ঈদের ছুটির পর ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ফের শুরু হবে সর্বাত্মক লকডাউন। গেল লকডাউনে গার্মেন্ট ও শিল্পকারখানা খোলা ছিল। কিন্তু ঈদের পরের লকডাউনে গার্মেন্ট ও শিল্পকারখানা বন্ধ থাকবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়।
সরকারের এমন ঘোষণার পর শিল্পকারখানা বন্ধ রাখলে অর্থনীতিতে ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা করে উদ্যোক্তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে উদ্যোক্তারা ঈদের পর ঘোষিত বিধি-নিষেধের মধ্যে শিল্পকারখানা খোলা রাখার জোর দাবি জানান। এর মধ্যেই আজ গার্মেন্ট ও শিল্পকারখানা বন্ধের বিষয়ে সরকারের আগের সিদ্ধান্তই বহাল রাখার কথা জানালেন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
লকডাউন শিথিল করার কারণ হিসেবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বড় ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে বিধি-নিষেধ কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। তবে এ সময়ে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। বিধি-নিষেধ শেষে আগামি ২৩ জুলাই থেকে চালু হওয়া বিধি-নিষেধ হবে আরো কঠোর।’
প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ আরো বলেন, কঠোর স্বাস্থ্যবিধি না মেনে কোনো উপায় নেই। সরকার অনেক খরচ করছে। ওই টাকা দিয়ে দেশের রাস্তাঘাট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করা সম্ভব হতো। তা খরচ করতে হচ্ছে করোনা নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু মাস্ক না পরলে সব বিফলে যাবে। সকলকে মাস্ক পরতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। গত মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন ঈদ পরবর্তী কঠোর লকডাউনে ২৩টি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি:
* সকল সরকারি, আধাসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।
* সড়ক, রেল ও নৌ-পথে গণপরিবহন, অভ্যন্তরীণ বিমান ও সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
* শপিংমল মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে।
* সকল পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
* সব শিল্প-কলকারখানা বন্ধ থাকবে।
* জনসমাবেশ হয় এমন সামাজিক অনুষ্ঠান, যেমন বিয়ের অনুষ্ঠান-জন্মদিন-পিকনিক ইত্যাদি, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
* আইনশৃঙ্খলা, জরুরি পরিষেবা, খাদ্যদ্রব্য পরিবহণ ত্রাণ বিতরণ, রাজস্ব আদায়, সরকারি ও বেসরকারি টেলিফোন ও ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট কর্মীরা ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় দেখিয়ে যাতায়াত করতে পারবে।
* অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যেমন ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় কেনাকাটা, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন বা সৎকারের মত কাজ ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
* কাঁচা বাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
* খাবারের দোকান ও রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি করতে পারবে।
* বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় সেনাবাহিনী মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে।
* আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকেট দেখিয়ে গাড়ি দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে।
* পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান, কার্গো ভেসেল নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।
* বন্দরসমূহ অর্থাৎ বিমান, নৌ ও স্থল বন্দর এবং এর সাথে সম্পৃক্ত অফিস বিধিনিষেধের আওতার বাইরে থাকবে।
* টিকা কার্ড দেখিয়ে কোভিডের টিকা গ্রহণ করতে যাওয়া যাবে।
* বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতসমূহের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
* প্রত্যেক জেলার ম্যাজিস্ট্রেট নিজ জেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহলের অধিক্ষেত্র, সময় ও এলাকা নির্ধারণ করবেন।
* মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ নিশ্চিত করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়
* স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করতে পারবেন।
* ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সেবা দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ নির্দেশনা দেবে।
* বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে অর্থ বিভাগ নির্দেশনা দেবে।
* সরকারি কর্মচারীগণ নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকতে হবে, এবং দাপ্তরিক কাজসমূহ ভাচুয়ালি সম্পন্ন করতে হবে।