শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী পালিত
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বিনম্র শ্রদ্ধায় শোক ও ভালোবাসায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে রবিবার (১৫ আগস্ট) পালিত হয়েছে স্বাধীনতার স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস।
জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে থাকে এ দিনটি। তবে এবার বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) কারণে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতপূর্বক স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন করা হয়।
শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের মাঝে জোরালো দাবি ছিল বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার নেপথ্যে ষড়যন্ত্রকারী ও কুশীলবদের ধরে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য গণতদন্ত কমিশন গঠন করার।
দেশজুড়ে নানা কর্মসূচিতে ছিল শোকের আবহ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ এবং ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকার ছিল মানুষের কণ্ঠে। বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের প্রেতাত্মা এবং স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গি সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করার শপথ উচ্চারণ করা হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর রাতে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপদগামী সদস্য ধানমন্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল।
পৃথিবীর এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবি ও সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রবিবার রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত তাঁর প্রতিকৃতিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে জাতির পিতাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। অনুষ্ঠানে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করেন। পরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান।
এরপর প্রধানমন্ত্রী ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়ক থেকে বনানী কবরস্থানে যান। সেখানে তিনি তাঁর পরিবারের সদস্যদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ত্যাগ করার পরপরই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের সিনিয়র নেতারা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন ও অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আসীম কুমার উকিল, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরো শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, তাঁতী লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, মোহাম্মদ নাসিম ফাউন্ডেশন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিষদ, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, শিশু একাডেমি, বাংলাদেশ বেতার, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, শেখ রাসেল শিশু সংসদ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ বিভিন্ন দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সর্বস্তরের হাজারো মানুষ।
এছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শোক দিবস উপলক্ষে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এদিকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতার ৪৬তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে সামরিক সচিব এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
রাজধানী ছাড়াও সারা দেশে এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলো বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শোক দিবস পালন করে।
শোক দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী কোরআন তেলাওয়াত, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার, বঙ্গবন্ধুর সমাধী ও প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, কালোব্যাজ ধারণ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, মিলাদ মাহফিল, রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।
ভোরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ইউনিট কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনে শোক দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা সরাসরি সম্প্রচারসহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। সকালে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ১৫ আগস্ট নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়াও জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে জাতীয় প্রেস ক্লাব, বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুস্থ ও গরিব মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়। আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণের ব্যবস্থা করে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর থানা ও ওয়ার্ড ইউনিটগুলো। এদিকে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।
এছাড়াও আওয়ামী যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধুর ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণ করে।