নির্মাণ ও কাঠশিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বেঁধে দিল সরকার
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দেশের শহর ও গ্রামাঞ্চলের নির্মাণ ও কাঠশিল্পের জন্য শ্রমিকদের জন্য মজুরি ঠিক করে দিয়েছে সরকার। সর্বশেষ ২০১২ সালে নির্মাণ ও কাঠশিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম দৈনিক মজুরি ছিল ৩৭৫ টাকা। বর্তমানে সেটি বেড়ে হয়েছে ৬৮০ টাকা। শহরাঞ্চলের জন্য এটি প্রযোজ্য হলেও গ্রামে মজুরি হবে ৬০ টাকা কম, অর্থাৎ ৬২০ টাকা।
নির্মাণ ও কাঠশিল্পের জন্য চূড়ান্ত হওয়া ন্যূনতম মজুরির প্রজ্ঞাপনে শ্রমিকদের মজুরির এই হার নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়। খাতটির শ্রমিকদের জন্য মাসিক মজুরির পাশাপাশি দিনভিত্তিক মজুরিও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
শহরে একজন রাজমিস্ত্রির দৈনিক মজুরি হবে ৯৪০ টাকা। আর গ্রামাঞ্চলে সেই মজুরি হবে ৮৭০ টাকা। টাইলস বা মোজাইকমিস্ত্রির দৈনিক মজুরি হবে শহরে ১ হাজার ১০৫ টাকা ও গ্রামে ১ হাজার ২০ টাকা। আর সাধারণ শ্রমিক বা জোগালির দৈনিক মজুরি শহরাঞ্চলে হবে ৬৮০ টাকা। আর গ্রামে ৬২০ টাকা।
নির্মাণ ও কাঠশিল্পের নতুন মজুরিকাঠামোতে ছয়টি গ্রেড রয়েছে। সব গ্রেডেই শহরাঞ্চলে বাড়িভাড়া মূল মজুরির ৪০ শতাংশ ও গ্রামাঞ্চলে ৩০ শতাংশ। তা ছাড়া শহরাঞ্চলে চিকিৎসা ভাতা ৮০০ টাকা ও যাতায়াত ভাতা ৪০০ টাকা। গ্রামাঞ্চলে সেটি কিছুটা কম, চিকিৎসা ও যাতায়াত ভাতা যথাক্রমে ৬০০ ও ৩০০ টাকা। যদিও সব গ্রেডেই মূল মজুরি শহর ও গ্রামে একই।
নতুন মজুরিকাঠামো অনুযায়ী ৬ নম্বর গ্রেডের সাধারণ শ্রমিক বা জোগালির মাসিক মজুরি শহরাঞ্চলে হবে ১৭ হাজার ৭২০ টাকা। তার মধ্যে মূল মজুরি ১১ হাজার ৮০০ টাকা। বাড়িভাড়া মূল মজুরির ৪০ শতাংশ, অর্থাৎ ৪ হাজার ৭২০ টাকা। তার বাইরে চিকিৎসা ভাতা ৮০০ ও যাতায়াত ভাতা ৪০০ টাকা। গ্রামাঞ্চলে এই শ্রমিকদের মাসিক মজুরি হবে ১৬ হাজার ২৪০ টাকা। এ ক্ষেত্রে মূল মজুরি ঠিক থাকলেও বাড়িভাড়া ৩০ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৫৪০ টাকা। আর চিকিৎসা ও যাতায়াত ভাতা যথাক্রমে ৬০০ ও ৩০০ টাকা।
৫ নম্বর গ্রেডের সহকারী রাজমিস্ত্রি, রডমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, ইলেকট্রিকমিস্ত্রি, রংমিস্ত্রি বা পলিশমিস্ত্রির দৈনিক মজুরি শহরাঞ্চলে হবে ৭৭০ টাকা। আর মাসিক মজুরি ২০ হাজার ১০০ টাকা। তার মধ্যে মূল মজুরি সাড়ে ১৩ হাজার। গ্রামাঞ্চলে এই গ্রেডের শ্রমিকদের মাসিক মজুরি ১৮ হাজার ৪৫০ টাকা। দৈনিক মজুরি ৭১০ টাকা।
শহরাঞ্চলে ৪ নম্বর গ্রেডের সহকারী স্যানিটারিমিস্ত্রি, প্লাম্বার ও থাই অ্যালুমিনিয়ামমিস্ত্রির দৈনিক মজুরি হবে ৮৩০ টাকা। আর মাসিক মজুরি ২১ হাজার ৬৪০ টাকা। তার মধ্যে মূল মজুরি ১৪ হাজার ৬০০ টাকা। গ্রামাঞ্চলে এই শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৭৬০ টাকা। তাঁদের মাসিক মজুরি ১৯ হাজার ৮৮০ টাকা। ৩ নম্বর গ্রেডের রাজমিস্ত্রি, রডমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, ইলেকট্রিকমিস্ত্রি, রংমিস্ত্রি, সহকারী মোজাইক বা টাইলসমিস্ত্রির দৈনিক মজুরি শহরাঞ্চলে হবে ৯৪০ টাকা। গ্রামে সেটি ৮৭০ টাকা। এই শ্রমিকদের মাসিক মজুরি শহরাঞ্চলে ২৪ হাজার ৫৮০ টাকা হলেও গ্রামে ২২ হাজার ৬১০ টাকা। উভয় ক্ষেত্রেই মূল মজুরি ১৬ হাজার ৭০০ টাকা।
মজুরিকাঠামো অনুযায়ী, ২ নম্বর গ্রেডের স্যানিটারিমিস্ত্রি, প্লাম্বার ও থাই অ্যালুমিনিয়ামমিস্ত্রির দৈনিক মজুরি শহরাঞ্চলে ১ হাজার ২০ টাকা আর গ্রামে ৯৪০ টাকা হবে। শহরাঞ্চলে এই শ্রমিকদের মাসিক মজুরি ২৬ হাজার ৬৮০ টাকা হলেও গ্রামে ২৪ হাজার ৫৬০ টাকা। উভয় ক্ষেত্রেই মূল মজুরি ১৮ হাজার ২০০ টাকা। অন্যদিকে ১ নম্বর গ্রেডে থাকা মোজাইক ও টাইলসমিস্ত্রির দৈনিক মজুরি শহরাঞ্চলে ১ হাজার ১০৫ টাকা ও গ্রামে ১ হাজার ২০ টাকা হবে। এ ছাড়া শহরে মাসিক মজুরি ২৮ হাজার ৭৮০ টাকা হলেও গ্রামে সেটি কিছুটা কমে হবে ২৬ হাজার ৫১০ টাকা। উভয় ক্ষেত্রেই মূল মজুরি ১৯ হাজার ৭০০ টাকা।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, একজন শ্রমিকের শিক্ষানবিশকাল হবে তিন মাস। তবে সেটি প্রয়োজনে আরও তিন মাস বাড়াতে পারবেন নিয়োগদাতা। শিক্ষানবিশকালে মজুরি হবে মাসিক ১০ হাজার টাকা। দৈনিক ভিত্তিতে সেটি দাঁড়াবে ৫০০ টাকায়। এ ছাড়া নতুন মজুরিকাঠামো সমন্বয় করার পর একজন শ্রমিক এক বছর কাজ করলে পরবর্তী বছর তাঁর মূল মজুরি ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। পরের বছরও একই হারে বাড়বে।