পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখছে মৎস্য খাত

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে মৎস্য খাত। বর্তমানে দেশের মোট জিডিপির ৩.৫২ শতাংশ, কৃষিজ জিডিপির এক-চতুর্থাংশের বেশি (২৬.৩৭ শতাংশ) এবং মোট রফতানি আয়ের ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ মৎস্য খাতের অবদান। বাংলাদেশের মৎস্য উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির ধারা ৯.১ শতাংশ, যা বিশ্বের মূল উৎপদানকারী দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থান। এই করোনাকালেও মৎস্য খাতের অবদান অনেক। এক দিকে যেমন পুষ্টি চাহিদা পূরণ হচ্ছে, তেমনি হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে এই মৎস্য খাতে।

এই অবস্থায় গতকাল শনিবার থেকে শুরু হয়েছে মৎস্য সপ্তাহ ২০২১। ‘বেশি বেশি মাছ চাষ করি, বেকারত্ব দূর করি’ এই প্রতিপাদ্যে ২৮ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ পালিত হবে। গতকাল রাজধানীর মৎস্য ভবনে মৎস্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে এ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, মৎস্য খাত বাংলাদেশে একটি স্বর্ণালি অধ্যায় সৃষ্টি করছে। বলেন, করোনার কারণে বিদেশ থেকে আমাদের অনেক প্রবাসী বেকার হয়ে দেশে ফিরছেন। স্বল্পআয়ের চাকরি বা ব্যবসা যারা করতেন তারা বেকার হয়ে পড়েছেন। করোনায় সৃষ্ট বেকারদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে আমাদের মৎস্য খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মাছ চাষের মাধ্যমে বেকারত্ব লাঘব হচ্ছে, আর্থিক সচ্ছলতা বাড়ছে এবং উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। গ্রামীণ অর্থনীতি সচল হচ্ছে। আবার মাছ রফতানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আমরা দেশে আনতে সক্ষম হচ্ছি। পৃথিবীর অনেক দেশের চেয়ে আমাদের মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।

‘মৎস্য খাতে একটা আমূল পরিবর্তন এসেছে’ উল্লখ করে তিনি আরো বলেন, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে ইলিশের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে, স্বাদ-গন্ধ ফিরে এসেছে, পরিমাণ বেড়েছে। জাটকা নিধন বন্ধ করার সুফল আমাদের সামনে দৃশ্যমান। দেশের মানুষের কাছে যে মাছগুলো দুর্লভ ছিল, সেগুলো ফিরে এসেছে। বিলুপ্তপ্রায় ৩১ প্রজাতির দেশীয় মাছকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে আমরা ফিরিয়ে এনেছি এবং সেটা আমরা সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে মাছের মোট উৎপাদন হয়েছে ৪৫ লাখ তিন হাজার মেট্রিক টন। মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও স্বীকৃতি। বিশ্বে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ের মৎস্য আহরণে বাংলাদেশ তৃতীয়, বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে পঞ্চম, ইলিশ উৎপাদনে প্রথম ও তেলাপিয়া উৎপাদনে চতুর্থ।

ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষ হলেও এই মুহূর্তে বাণিজ্যিকভাবে ইলিশ রফতানির পক্ষে নন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ইলিশ হচ্ছে বাঙালির নিজস্ব শ্রেষ্ঠ স্বাদের মাছ। আমি চাই দেশের প্রতিটি গ্রামের প্রতিটি মানুষ ইলিশের স্বাদ পাক। এ জন্য আমি ওইভাবে বাণিজ্যিকভাবে রফতানির পক্ষে না। অনেক সময় রাষ্ট্রীয় আচার অনুষ্ঠান, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সৌজন্যমূলকভাবে পাঠানো হয়। যদি ব্যাপকহারে ইলিশ রফতানি করি, গ্রামের মানুষ ইলিশের স্বাদ পাবেন না।

মন্ত্রী বলেন, দেশের বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় অঞ্চল তথা হাওর অঞ্চল, পার্বত্য অঞ্চল, উপকূলীয় অঞ্চলে আমরা ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্প নিচ্ছি। মাছকে নিরাপদ রাখার জন্য আমরা অভয়াশ্রম করছি। নদীতে যাতে মাছের প্রজনন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং মাছ বেড়ে উঠতে পারে সে জন্য প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সমন্বিতভাবে কাজ করছে।

মৎস্যমন্ত্রী আরো বলেন, মৎস্য খাদ্যে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান আছে কি না তা পরীক্ষার জন্য আমরা আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষাগার করেছি। মাছ রফতানির জন্য পরীক্ষা করে ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে, যাতে বিদেশে পাঠানো মাছের চালান দেশে ফেরত না আসে। দেশের অভ্যন্তরের বাজারেও নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। এ দিকে আজ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন এবং সংসদ লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করবেন। ৩১ আগস্ট বঙ্গভবন পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করবেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ।

সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ, অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার, সুুবোল বোস মনি ও মো: তৌফিকুল আরিফ, মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক কাজী শামস আফরোজ, বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দফতরের উপপরিচালক শেফাউল করিম, নৌপুলিশের অতিরিক্ত আইজি মো: আতিকুল ইসলামসহ মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.