বাংলাদেশ হবে বৈশ্বিক যোগাযোগের কেন্দ্র : প্রধানমন্ত্রী
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের একটা কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে চায়। কক্সবাজার বিমানবন্দর বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় রিফুয়েলিং হাব হিসেবে গড়ে উঠবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল রবিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে সমুদ্রে রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধনকালে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, কক্সবাজার হবে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সি-বিচ ও পর্যটনকেন্দ্র এবং অত্যন্ত আধুনিক শহর, যাতে আর্থিকভাবেও আমাদের দেশ অনেক বেশি লাভবান হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতে, ‘এই বিমানবন্দর সম্প্রসারিত হলে, পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্যে বা প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে যত প্লেন যাবে তাদের রিফুয়েলিংয়ের জন্য সব থেকে সুবিধাজনক জায়গা হবে এই কক্সবাজার। কারণ, একেক সময় পৃথিবীর একেকটি জায়গা উঠে আসে। একসময় হংকং, তারপর সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক; এখন দুবাই। কিন্তু আমি বলতে পারি যে, ভবিষ্যতে কক্সবাজারটাই হবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। কেননা, খুব স্বল্প সময়ে এখানে বিমান এসে নামতে এবং রিফুয়েলিং করে চলে যেতে পারবে।’
সমুদ্রতীরবর্তী জমি পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ করে নতুন ১০ হাজার ৭০০ ফুট রানওয়ে হবে—যার ফলে, আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের বোয়িং ৭৭৭ ও ৭৪-এর মতো বড় আকারের বিমানগুলো এই বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারবে এবং এখানে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করার পথ সুগম হবে। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা সরাসরিই কক্সবাজারে আসতে পারবেন।
১ হাজার ৫৬৮ দশমিক ৮৬ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি ২০২৪ সালের মে মাসে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও এর আগেই এটি সম্পন্ন করা হবে এবং নিজস্ব অর্থায়নে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর সরকার প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক এই বিমানবন্দরের রানওয়ে হবে ১০ হাজার ৭০০ ফুট, যার ১ হাজার ৩০০ ফুট থাকবে সাগরের বুকে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে কক্সবাজার বিমানবন্দর হবে বিশ্বের সাগর উপকূলে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দরগুলোর অন্যতম এবং এটিই হবে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, বাংলাদেশ থেকে যেসব আন্তর্জাতিক রুটে বিমান যাচ্ছে তার পাশাপাশি আরো কয়েকটি আন্তর্জাতিক রুট চালুর প্রচেষ্টা চলছে। সেই সঙ্গে নিউ ইয়র্ক, টরেন্টো, সিডনির মতো দূরত্বে চলার মতো আমাদের ড্রিমলাইনার ও অন্যান্য বিমান আছে। বিশেষ করে আমাদের দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়াতে হবে। আমরা শুধু পশ্চিমাদের দিকে মুখ করে থাকব না। পাশাপাশি, আমরা অন্য যেসব বন্ধুপ্রতিম দেশ আছে সেখানে আমাদের বিমান যাতে যায় ভবিষ্যতে সেই চেষ্টা করব।
বাংলাদেশকে নিয়ে জাতির পিতার যে স্বপ্ন ছিল, সেই স্বপ্ন পূরণ করার দৃঢ় প্রত্যয় প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে রূপকল্প ঘোষণা করেছিলাম ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে, সেখানে আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি। এটাকে ধরে রেখে আমাদের উন্নত দেশের পথে এগিয়ে যেতে হবে এবং ইনশাল্লাহ আমরা সেটা করতে পারব।’
বিমানের কর্মকর্তাদের কর্তব্যনিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সততার সঙ্গে, দক্ষতার সঙ্গে বিমান পরিচালনা করবেন। সিভিল এভিয়েশন নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সবকিছু যাতে আন্তর্জাতিক মানের হয় সেটা আপনারা দেখবেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত সাড়ে ১২ বছরে বোয়িং কোম্পানির ড্রিমলাইনারসহ মোট ১৬টি অত্যাধুনিক বিমান যুক্ত করেছি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চারটি বোয়িং-৭৭৭, দুটি বোয়িং-৭৩৭ ও চারটি বোয়িং-৭৮৭-৮, দুটি বোয়িং-৭৮৭-৯ ও ৪টি ড্যাশ-৮।
জাতির পিতা ১৯৭২ সালেই সকল বিমানবন্দরকে পুনর্গঠন করে চলাচলের উপযোগী করে তুলেছিলেন এবং ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস’ প্রতিষ্ঠা করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এভাবেই তিনি একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে ধ্বংস্তূপ থেকে টেনে তুলেছিলেন। একই সঙ্গে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পুনঃস্থাপিত করতে পেরেছিলেন। জাতির পিতার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে। নেদারল্যান্ড, আফগানিস্তান, রাশিয়া ও যুগোশ্লাভিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিমান চলাচল চুক্তি স্বাক্ষর করেন। দেশ পরিচালনার জন্য জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এর মধ্যেই তিনি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করেছিলেন।
এরপর ২১ বছর বাংলাদেশের কোনা উন্নতি হয়নি। কারণ, যারা ক্ষমতায় ছিল তারা নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত ছিল। জনগণের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন তারা করেনি।
বিমানের একসময়ের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আকাশপথে যেতে যেতে পানি পড়ত, এন্টারটেইনমেন্টের কোনো ব্যবস্থা ছিল না, ঝরঝরে ছিল প্লেনগুলো। এই মান্ধাতার আমলের বিমান চালাতে পারায় তিনি সে সময়কার পাইলটদের দক্ষতার কদর করে বলেন, আমি আমাদের পাইলটদের বলতাম তাদেরকে স্পেশাল পুরস্কার দেওয়া উচিত। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশের (সিএএবি) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন।