কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে ‘উন্নয়নের ১ যুগ’ চিত্র প্রদর্শনী
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : তিন দিনের এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কানাডিয়ান হাইকমিশনার বেনেইট প্রিফন্টেইন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উদযাপনে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের উদ্যোগে শুরু হয়েছে তিন দিনের বিশেষ চিত্র প্রদর্শনী। ‘বাংলাদেশ: উন্নয়নের ১ যুগ’ শিরোনামের এ প্রদর্শনীতে রয়েছে সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত এক যুগের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, বৈশ্বিক অঙ্গনে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার আলোকচিত্র। শেখ হাসিনার জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তের দুর্লভ ছবিও রয়েছে প্রদর্শনীতে।
রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের শেরাটন ঢাকা হোটেলে রোববার বেলা ১১টায় ফিতা ও কেক কেটে উদ্বোধন করা হয় তিন দিনের এই আয়োজন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এবং সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে কানাডিয়ান হাইকমিশনার বেনেইট প্রিফন্টেইন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মময় সংগ্রামী জীবন নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করায় ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত এবং কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন জানান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের উৎসব নানাভাবে পালন হচ্ছে, হবে। সারা বাংলাদেশে নানা জায়গায় পালিত হচ্ছে, দেশের বাইরেও হচ্ছে। কিন্তু আমি বলতে চাই, তার ৭৫ বছরের এই জীবনের বিভিন্ন সংগ্রাম, আন্দোলন, কর্মময় জীবনের যে ব্যাপ্তি সেটি নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার অনন্য মাধ্যম হচ্ছে এই প্রদর্শনী।’
প্রদর্শনীর আলোকচিত্র সম্পর্কে স্পিকার বলেন, ‘এখানে লক্ষ করে দেখেছি, চিত্রগুলো বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করা যায়। টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম; বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা, ভাই-বোনদের মাঝে তার বেড়ে ওঠা; শিক্ষাজীবন; সাংসারিক জীবন; পারিবারিক জীবন; সন্তানদের ছবি এখানে আছে। এরপর তিনি কীভাবে রাজনীতিতে এলেন, কীভাবে বাংলাদেশের হাল ধরলেন, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, চারবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন- তার সব কিছুই চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যারা এখানে আসবেন তারা অনেক নতুন তথ্য পাবেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জাতীয় সংসদের স্পিকার বলেন, “আমি লক্ষ করেছি, একটা জায়গাতে তার খুব পাওয়ারফুল একটি স্টেটমেন্ট আছে। সম্ভবত ১৯৮৪ সালে তিনি জাতীয় সংসদের সামনে দাঁড়িয়ে এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘এই সংসদ জনতার সংসদ’। এই যে গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস, মানুষের শক্তির প্রতি যে বিশ্বাস, মানুষের সমর্থনের প্রতি যে বিশ্বাস, সেটি তার রাজনীতির মূল চালিকাশক্তি। তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না, তখনও তার বক্তব্যে সেটির সুস্পষ্ট প্রতিফলন দেখেছি।
“আজ তিনি চারবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, তার যে ভিত, সেটা তিনি অনেক কষ্টে রচনা করেছেন। অনেক দুঃসহ পথ পাড়ি দিয়ে এই অবস্থানটি তাকে নিজের জন্য তৈরি করতে হয়েছে এবং বাংলাদেশের জন্য তৈরি করতে হয়েছে।”
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতের ঘটনা এবং এর পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতির কথা তুলে ধরে স্পিকার বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে যখন লিখতে হয় বা বলতে হয়- আমি বিশ্বাস করি ১৯৮১ সালের ১৭ মে তারিখটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি টার্নিং পয়েন্ট। কারণ সেই দিন প্রধানমন্ত্রী, তখনকার শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে স্বজনহারা বেদনা নিয়ে ফিরে এসেছিলেন। সেদিন ‘ঝড়-বৃষ্টির আঁধার রাতে আমরা আছি তোমার সাথে’ এমন স্লোগানে মুখরিত হয়েছিল বাংলার মাটি।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নকে যে পর্যায়ে নিয়ে গেছেন সেটি সত্যিই বিস্ময়কর মন্তব্য করে স্পিকার বলেন, ‘বিশ্বনেতারাও সমস্বরে বলছেন, এটি একটি উন্নয়ন বিস্ময়।
‘বিশ্বের মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে আমাদের পদ্মা সেতু। প্রধানমন্ত্রীর মতো একজন নেতা আছেন বলেই আজকে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো একটি সেতু নির্মাণ করতে পেরেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যার নেতৃত্বে পেয়েছি একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ; তার কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দর্শন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের দর্শন।’
স্পিকার তার বক্তব্যের শেষপর্যায়ে রবি ঠাকুরকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন- ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়, তোমারি হউক জয়। তিমিরবিদার উদার অভ্যুদয়, তোমারি হউক জয়।’ বিশেষ অতিথি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা উন্নয়নের কাণ্ডারি। উন্নত-সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার।
‘প্রধানমন্ত্রীর মেধা, প্রজ্ঞা, মনন ও একাগ্রতায় বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে এসডিজি অর্জনে সরকার দৃঢ়ভাবে কাজ করে চলছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের রোল মডেল।’
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ প্রশংসিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা না থাকলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের স্বপ্ন সফল হতো না। সারা বিশ্বে তিনি এখন অনুকরণীয় রাষ্ট্রনায়ক ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। শুধু দেশ ও মানুষের অধিকারের সুরক্ষায় নয়, তিনি বিশ্বের মানুষের অধিকারের সুরক্ষায় অবিরাম সংগ্রাম করে চলেছেন।’
অনুষ্ঠানের সম্মানীয় অতিথি কানাডিয়ান হাইকমিশনার বেনেইট প্রিফন্টেইন বলেন, ‘এই আয়োজনে আসতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এই প্রদর্শনী থেকে আমি প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি।‘ বাংলাদেশের সঙ্গে কানাডার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন দেশটির রাষ্ট্রদূত।
অনুষ্ঠানে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘আমাদের প্রজন্ম কেন যেন বুঝে উঠতে পারেনি যে, শেখ হাসিনা আমাদের জন্য কত বড় গিফট। আজ থেকে ১০০ বছর পর যে প্রজন্ম আসবে, তারা যখন পেছনে তাকাবে, তখন আমাদের চেয়ে অনেক বেশি বঙ্গবন্ধুকন্যাকে তারা মূল্যায়ন করতে পারবে।
‘আমি যখন ওয়াশিংটন ডিসিতে যাই তখন আব্রাহাম লিংকনের বিশাল স্ট্যাচুর সামনে দাঁড়াই। আমার কেন যেন মনে হয়, জর্জ ওয়াশিংটন আমেরিকাকে স্বাধীন করেছেন, কিন্তু আমেরিকা যখন ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছিল, আব্রাহাম লিংকন তখন তাকে আটকে ধরে ঠিক করেন। বাংলার রাজনীতিতে শেখ হাসিনা হলেন সেই আব্রাহাম লিংকন।’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানের সভাপতি কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।
তিনি বলেন, ‘এই আয়োজন করতে আমাদের এক বছর ধরে কাজ করতে হয়েছে। আসলে গত ১২ বছরে দেশে এত উন্নয়ন হয়েছে যে, মানুষ তার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সংগ্রামী জীবনের কথা ভুলে গেছেন। আমরা চেষ্টা করেছি, এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে উপস্থাপন করতে।’
ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, ‘শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবন ও উন্নয়নের চিত্র সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতেই এই প্রদর্শনীর আয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কথায় নয়, সব সময়েই কাজে বিশ্বাসী। তার অনন্য নেতৃত্বে দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন দর্শন বদলে দিয়েছে জাতির ভাগ্য। ‘মুজিব শতবর্ষে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তির পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উদযাপন হচ্ছে। এই তিনটি আনন্দের মুহূর্তকে ধারণ করেই আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ চিত্র প্রদর্শনী।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন ২০০৯ সালে। এরপর আরও দুবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন রূপকল্প ২০২১। সেই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরের গল্প শুধুই এগিয়ে যাওয়ার। একসময়ে যে বাংলাদেশ পরিচিত ছিল বন্যাকবলিত, দারিদ্র্যপীড়িত দেশ হিসেবে, সেই দেশই এখন সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার উন্নয়নদর্শন তরুণদের সামনে তুলে ধরে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতেই এ আয়োজন বলে জানিয়েছে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম, অগ্রণী ব্যাংকের এমডি ও সিইও মোহম্মদ শামস্-উল ইসলাম, পদ্মা ব্যাংকের এমডি ও সিইও এহসান খসরু, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নূর আলী ও ইউনিক গ্রুপের চেয়ারপারসন সেলিনা আলী। প্রদর্শনীটি মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক।
প্রদর্শনীর সমাপনী অনুষ্ঠান হবে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায়। শেরাটন ঢাকা হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বিশেষ অতিথি থাকবেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।