গ্রিন বন্ডে বদলে যাবে কল্যাণপুর

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : রাজধানীর জলজট নিরসন ও পরিবেশ সংরক্ষণে কল্যাণপুরে জলাধার ও ইকো পার্ক তৈরির মহাপরিকল্পনা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এ প্রকল্পে প্রয়োজনীয় প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে গ্রিন বন্ডের মাধ্যমে। জলাধার ঘিরে থাকবে ডরমেটরি, মাঠ, ফুডকোর্ট, প্রজাপতি-পাখির অভয়ারণ্য এবং চারদিক বেষ্টিত হাঁটাচলার রাস্তা।

ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘দূষণের কবলে আমাদের রাজধানী ঢাকা। দূষণ কমিয়ে সবুজায়ন বাড়াতে আমরা কল্যাণপুর ঘিরে একটি মহাপরিকল্পনা করছি। এ প্রকল্পের অর্থ সংগ্রহ করা হবে গ্রিন বন্ডের মাধ্যমে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তারাও এ ব্যাপারে ইতিবাচক। এটাতে সুদের হার অনেক কম। গ্রিন বন্ড নিয়ে আমি ৪ নভেম্বর লন্ডনে একটি প্রেজেনটেশন দিতে যাচ্ছি। গ্রিন বন্ড কিনতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করে তোলা এ উপস্থাপনার লক্ষ্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা খাল পরিষ্কার করে দূষণমুক্ত করব। এখানে প্রজাপতি পার্ক, সাঁতার শেখা ও মাছ ধরার ব্যবস্থা থাকবে। তরুণরা খেলাধুলা করবে, ক্যাম্প করবে। হাঁটার ও সাইকেল চালানোর রাস্তা থাকবে। প্রকল্পে প্রয়োজন হলে খাসজমির পাশাপাশি জমি অধিগ্রহণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে এ প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে। তিনি অনুমোদন দিলে আমরা নভেম্বরে কাজ শুরু করব।’

বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, ‘বন্ডের মাধ্যমে উন্নয়ন কাজের অর্থ সংগ্রহ নতুন উদ্যোগ। এতে সরকারের ওপর ঋণের চাপ কমবে। বৈদেশিক সাহায্যের জন্য উন্নয়ন কাজ থেমে থাকবে না। কমিশন এখন গ্রিন বন্ডের প্রচার চালাচ্ছে। আমাদের এখন আরও সহজভাবে অর্থের জোগান দেওয়ার বিষয়ে ভাবতে হবে।’ এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘আমরা চাই দেশের বন্ড মার্কেট বিকশিত হোক। বন্ডে মানুষ বিনিয়োগ করলে তাদের লভ্যাংশসহ ফেরত দিতে হবে। বন্ডের কিছু নিয়মকানুন আছে। সেসব ব্যাপারে বন্ড ইস্যু করা যায় যেখানে লাভ হবে। ডিএনসিসি যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনে বন্ডের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে সেটা অবশ্যই ভালো।’ এ প্রকল্পের পরিকল্পনা বিষয়ে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘জলজট নিরসনে জলাধার সংরক্ষণ ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার অংশ। ১৯৯৭ সালের পরিকল্পনা অনুযায়ী সরকার বেশ কয়েকটি জলাধার অধিগ্রহণ করে রেখেছিল। তার অন্যতম পশ্চিমাঞ্চলের কল্যাণপুর জলাধার। এটি সংযোজিত ছিল কল্যাণপুর ক, খ, গ, ঙ খাল এবং রামচন্দ্রপুর খাল দিয়ে।

বিভিন্ন আইনি মারপ্যাঁচ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি এবং অবহেলার কারণে এটা প্রায় বিলীন হতে বসেছে। সরকার এখন রাস্তাকে খাল না বানানোর প্রচেষ্টার পাশাপাশি খাল পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। খালের শেষ মাথায় জলাধার সক্রিয় করার চেষ্টা করছে। এই ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে অন্যতম অনুষঙ্গ পাম্প স্টেশন। কারণ আমরা বাঁধ দিয়ে নদীর সঙ্গে সংযোগ বন্ধ করে ফেলেছি। এজন্য পাম্প স্টেশন পর্যন্ত পানি নিয়ে যাওয়া এবং ছয়-সাত ঘণ্টার বৃষ্টির পানি ধারণ করার জন্য জলাধার প্রয়োজন। রাজধানীতে ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে যে পরিমাণ পানি তৈরি হয় তা ধরে রাখার জলাধার না থাকলে জলজট সৃষ্টি হয়। এজন্য ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম পরিকল্পনা করছেন জলকেন্দ্রিক ইকো পার্ক করার।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ প্রকল্পে মোট ব্যয় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মতো ধরা হচ্ছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে উপস্থাপন করা হবে। যদি অনুমোদন ও ফান্ডিং মেলে তাহলে এ শীতকালে কাজ শুরু করে দুই বছরের মধ্যে শেষ করা যাবে।’ প্রকল্প পরিকল্পনায় দেখা যায়- ১০টি জোনে ভাগ করে সাজানো হয়েছে প্রকল্প। প্রকল্পের পুব পাশে তরুণদের প্রকৃতিনির্ভর শিক্ষাঙ্গন হিসেবে বেস ক্যাম্প, খেলার মাঠ, নারী-পুরুষের আলাদা থাকার জায়গা, কালচারাল সেন্টার, খাবারের জায়গা, লাইব্রেরি, কম্পিউটার ল্যাব এসব থাকবে। সাঁতার শেখা কেন্দ্র, নৌকা, রোয়িং শেখার ব্যবস্থা থাকবে।

মাঝের দুটি দ্বীপমতোন জায়গায় পাখি সংরক্ষণ, প্রজাপতি সংরক্ষণ ও মৌমাছি চাষ করা হবে। দ্বিতীয় দ্বীপে ফুডকোর্ট বা বিভিন্ন রকমের খাবারের দোকান থাকবে। এখানে অষ্টমাসি বাঁধ থাকবে। কল্যাণপুরের চারটি খাল থেকে বছরের আট মাসে আসা দূষণযুক্ত পানিকে অষ্টমাসি বাঁধ আটকে রাখবে। প্রবল বর্ষণ না হওয়া পর্যন্ত জমে থাকা অল্প পানি পাম্প করে বের করে দেওয়া হবে। বর্ষার চার মাস এটি খালের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাবে। বছরের আট মাস পানি সোলার অ্যাকিউয়াটিক ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দ্বারা পূর্ব ও পশ্চিম পাশে পরিশোধনের ব্যবস্থা করা হবে। পানি পরিশোধন হওয়ার কারণে এটি মাছ ও জলজ উদ্ভিদের জন্য বিশুদ্ধ, দুর্গন্ধমুক্ত, পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠবে। ভবনের ছাদে থাকবে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের পেছনে ঢাকা হুইল তৈরি করা হবে, এর পাশে ফুডকোর্ট থাকবে। সেখানে ৬৪ জেলার মধ্যে পালাক্রমে ৩২ জেলার খাবার পাওয়া যাবে। গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের পুব পাশে রাস্তা থেকে সরাসরি যুক্ত হয়ে ম্যানেজমেন্ট সেন্টার থাকবে। মিরপুরের বাসিন্দাদের জন্য এক্সিবিশন সেন্টার, কালচারাল হল থাকবে। এর পাশজুড়ে ৫-১০ মিটার চওড়া হেঁটে চলার জায়গা থাকবে। তার পাশে সাইকেল চালানো ও স্কেটিং করার জন্য একই পরিমাণ রাস্তা থাকবে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.