সাতক্ষীরায় নদী গর্ভে মসজিদ, নৌকার উপর ভাসমান নুহ আলাইহিসালাম জামে মসজিদে নামাজ আাদায় করছেন মুসল্লিরা
রিজাউল করিম সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের হাওলাদার বাড়ি বায়তুন নাজাদ জামে মসজিদটি হুমকির মুখে। যে কোন মুহূর্তেই বিলীন হয়ে যাবে নদী গর্ভে। এলাকার মুসল্লিদের নামাজের ভোগান্তি চলছে টানা দুই মাস। তবে সেখানকার মুসল্লিদের নামাজের জন্য নৌকার উপর বিশেষভাবে তৈরী একটি ভাসমান নুহ আলাইহিসালাম জামে মসজিদ করে দিয়েছেন আলহাজ¦ শামসুল হক ফাউন্ডেশন।
মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে জোহরের নামাজের আদায়ের মধ্য দিয়ে ভাসমান নুহ আলাইহিসালাম জামে মসজিদটির উদ্বোধন করা হয়। হাওলাদার বাড়ি বায়তুন নাজাদ জামে মসজিদের ঈমাম ও খতিব হাফেজ মঈনুর রহমান জানান, প্রাকৃতিক দূর্যোগ আম্ফান ও ইয়াসের সময় খোলপেটুয়া নদীর বন্যতলা এলাকার বেড়ি বাঁধ ভেঙে যায়। নদী ভাঙ্গনটি ধীরে ধীরে লোকালয়ের দিকে ধেয়ে আসতে শুরু করে। আর তখন থেকে গত ১০ আগষ্ট থেকে নদীর পানি মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করে। রাস্তাটিও ধ্বসে যায় এরপর থেকে মসজিদে নামাজ আদায় ও আজান দেওয়ার জন্য সাঁতরে যেতে হতো। তবে সাম্প্রতি ঘটনাটি বিভিন্ন মিডিয়ায় ও ফেইজবুকে প্রকাশের পর আজান দেওয়ার জন্য একটি নৌকা ক্রয় করে দেন একজন হৃদয়বান ব্যক্তি।
তিনি জানান, আজ (মঙ্গলবার) এলাকার মুসল্লিদের কথা চিন্তা করে আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশন নৌকার উপর বিশেষভাবে নির্মিত একটি ভাসমান নুহ আলাইহিসালাম জামে মসজিদ উপহার হিসেবে দিয়েছেন। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নাসিরউদ্দীন সাহেব এটি তুলে দেন।
দুপুরে জোহরের নামাজের মধ্যদিয়ে মসজিদ উদ্বোধন করা হয়েছে। ভাসমান এ মসজিদটিতে একসঙ্গে ৫০-৫৫ জন নামাজ আদায় করতে পারবেন। নামাজ আদায়ের জন্য অনেক উপকার হয়েছে। মূল মসজিদটি যে কোন মুহূর্তে নদীগর্ভে চলে যাবে। এখন থেকে আযান দেওয়া ও নামাজ আদায় ভাসমান মসজিদেই করবো। এলাকার ৩০০-৪০০ পরিবার এই মসজিদে নামাজ আদায় করতেন। জুম্মার দিন শুক্রবারে এত মানুষের জায়গা এখানে হবে না। জুম্মার দিতে পার্শ্বর্তী কোন মসজিদে নামাজ আদায় করতে হবে।
ভাসমান মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৫০ ফুট, প্রস্থ ১৬ ফুট। রয়েছে আযান দেওয়ার জন্য একটি মাইকসেট, ওজুখানা, পানি ব্যবহারের জন্য চারটি ট্যাব ও একটি টয়লেট। মুসল্লিদের মসজিদে এসে তেলোওয়াত করার জন্য রয়েছে কোরআন শরীফ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত দুই বছর ধরে বিভিন্ন সময় এই অঞ্চলের মানুষ পানির নিচে তলিয়ে থাকে। এলাকার মসজিদগুলোতে নামাজের সময় পানি উঠে যায়। এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এই ভাসমান মসজিদটিতে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে পারবেন।
মসজিদ কমিটির সভাপতি মৌলভী ইবাদুল সানা জানান, গত দুই মাস ধরে আমরা নামাজ আদায় করতে পারছি না। ভাসমান মসজিদটি পেয়ে অনেক উপকার হয়েছে। যারা দিয়েছেন তাদের জন্য আমরা দোয়া করবো।
আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নাসিরউদ্দীন জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিওতে দেখেছি মসজিদের ঈমাম সাহেব সাঁতরে মসজিদে গিয়ে আযান দিচ্ছেন। সেটি দেখার পর আমরা মর্মাহত হয়েছি ও এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে এসেছি। এখানকার মানুষের নামাজের প্রতি অনেক আগ্রহ রয়েছে। সেকারণে নৌকার উপর বিশেষভাবে নির্মিত অস্থায়ী একটি ভাসমান নুহ আলাইহিসালাম মসজিদ তৈরী করে দিয়েছি। এখন থেকে পানিতে নিমজ্জিত মসজিদের মুসল্লিরা এইখানে নামাজ আদায় করতে পারবেন। ওই মসজিদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি এই ভাসমান নুহ আলাইহিসালাম জামে মসজিদের দায়িত্বপালন করবেন, এবং আগামীতে যদি আরো অবস্থা খারাপ হয় তাহলে দু্ইুটি নৌকা দিয়ে নতুুন করে মসজিদ তৈরি করে দিব।