তৃণমূল ঢেলে সাজাচ্ছে আওয়ামী লীগ
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে তৃণমূল ঢেলে সাজাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় দীর্ঘ দিন দল গোছানোর কাজ বন্ধ ছিল। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সাংগঠনিক সফর ও জেলা-উপজেলায় সম্মেলনের কাজ শুরু করেছে দলটি। নির্বাচনের আগেই তৃণমূলের বিরোধ মেটানো এবং সম্মেলনের কাজ সম্পন্ন করে ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের মূল্যায়নের মাধ্যমে দলকে মজবুত ভিতের ওপর দাঁড় করানোই মূল উদ্দেশ্য। এ লক্ষ্যে গঠিত বিভাগীয় আটটি টিম বেশ তৎপর রয়েছে।
নীতি-নির্ধারকদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, ২০২৩ সালের শেষ দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ বছরের বাকি আছে আর দুই মাস। ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সব জেলা, উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়নের সম্মেলন সম্পন্ন করে কমিটি দেয়া হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন শেষ করতে আগামী বছরের অর্ধেক চলে যেতে পারে। আর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে ২০২২ সালের পুরোটাই লেগে যেতে পারে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেভাগেই তৃণমূলকে মজবুত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে চাচ্ছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দলটির কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় তৃণমূলকে ঢেলে সাজিয়ে শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রধান।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মোট সাংগঠনিক জেলার সংখ্যা ৭৮। ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর। ওই সময় ৭৮টি জেলার মধ্যে ৫৮টির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে গত তিন বছরে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একটিমাত্র জেলা মৌলভীবাজারের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তাও ২০১৭ সালে। তিন মাস পিছিয়ে ২০১৯ সালের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের আগ মুহূর্তে আরো কয়েকটি জেলার কাউন্সিল করতে সক্ষম হয় দলটি। খুলনা মহানগরসহ কয়েকটি শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। নোয়াখালীসহ কয়েকটি জেলার আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ১৬ অক্টোবর রাজবাড়ী জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জেলা কমিটির মেয়াদ তিন বছরের। কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদও তিন বছরের। দলের জাতীয় কাউন্সিলের আগে জেলা ও অন্যান্য ইউনিটের কাউন্সিল হওয়ার নিয়ম রয়েছে। আবার জেলার কাউন্সিল করতেও উপজেলা-থানা ও ওয়ার্ডের কাউন্সিল করার নিয়ম রয়েছে। ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে অন্তত ৫০টি জেলার কাউন্সিল করতে পারেনি দলটি। যদিও সম্মেলনের পরপরই রাজশাহী মহানগরসহ দু’টি জেলার সম্মেলন করতে সক্ষম হয় দলটি। এর পরই ২০২০ সালের মার্চে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রমও গতিহীন হয়ে পড়ে।
এখন বেশির ভাগ জেলা শাখার কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। জানা গেছে, আট বিভাগে আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৪৩টি এখনো মেয়াদোত্তীর্ণ। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৫টি, চট্টগ্রামের সাতটি, ময়মনসিংহের পাঁচটি, রাজশাহীর চারটি, বরিশালের চারটি, রংপুরের তিনটি, খুলনার চারটি ও সিলেট বিভাগের একটি সংগঠনিক জেলা মেয়াদোত্তীর্ণ। অন্য দিকে সারা দেশে আওয়ামী লীগের উপজেলা, থানা ও পৌর কমিটির সংখ্যা প্রায় ৬৫০ মতো। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৬০টি, চট্টগ্রামে ১২৯টি, রাজশাহীতে ৮৩টি, খুলনায় ৭৪টি, রংপুরে ৬৬টি, বরিশালে ৫৩টি, সিলেটে ৪৯টি ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৯টির মতো কমিটি রয়েছে। জাতীয় সম্মেলনের আগে ১৩৮টির মতো উপজেলা, থানা ও পৌরসভা কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের পরও বেশ কিছু উপজেলা, থানা ও পৌরসভা কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তবে সাড়ে ৬৫০ কমিটির মধ্যে এখনো ৩৫০ অধিক কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ।
এ ছাড়া সম্মেলন হওয়া কমিটির অর্ধেকের বেশির পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। এসব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন, জেলা কমিটির বর্ধিত সভা, জেলা ও উপজেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করার ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন। এরই মধ্যে জামালপুরের কয়েকটি থানা ও উপজেলা, নওগাঁর রানীনগর, পোরশা, নিয়ামতপুর ও আত্রাই উপজেলা, জয়পুরহাটের কয়েকটি থানা ও উপজেলার সম্মেলন ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। চাঁদপুরসহ কয়েকটি জেলা ও উপজেলার বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কতগুলোর সম্মেলনের তারিখও নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এখন পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। আমাদের দলের প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূলকে শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি। তিনি বলেন, আমি রাজশাহী বিভাগে দায়িত্ব পাওয়ার পর ৩০টি উপজেলা ও তিনটি জেলা এবং একটি মহানগরের সম্মেলন করতে পেরেছি। আগামী ২০ ও ২১ নভেম্বর যথাক্রমে পাবনা ও নাটোর জেলার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করি, ডিসেম্বরের মধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলা কমিটির সম্মেলন শেষ হবে। নতুন কমিটিতে যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে।
বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা এখনো তৃণমূলের সম্মেলন শুরু করতে পারিনি। করোনার কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত ছিল। পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার পরই ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শুরু হয়েছে। এখন আমরা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত আছি। তিনি আরো বলেন, গত জাতীয় কাউন্সিলের আগে তিনটি জেলার সম্মেলন হয়েছিল। আমাদের আরো চারটি শাখার সম্মেলন করতে হবে। উপজেলা, থানা ও পৌরসভার সম্মেলন তো রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের পরই আমরা সম্মেলনের কাজ শুরু করতে পারব।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য লে. কর্নেল (অব:) মুহাম্মদ ফারুক খান নয়া দিগন্তকে বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে বৈশ্বিক মহামারী করোনায় আমরা কোনো সাংগঠনিক কাজ করতে পারেনি। আমাদের নেত্রী নতুন করে আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে এবং তৃণমূলকে শক্তিশালী করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এরই মধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। প্রতিটি পর্যায়ে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হবে। তা ছাড়া সদস্য সংগ্রহ অভিযানের কাজও শুরু হয়েছে।