নৌবাহিনীর সক্ষমতা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা
বিডি২৪ভিইজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নত জাহাজ, যুদ্ধ সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সক্ষমতা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। গতকাল সকালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ‘মিডশিপম্যান ২০১৯ আলফা’ ও ‘ডিইও ২০২১ ব্রাভো’ ব্যাচের শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠানে ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির মূল অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী পাসিং আউট ক্যাডেটদের মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন। কুচকাওয়াজ থেকে তাঁকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৪৪ প্রশিক্ষণার্থী কমিশন্ড অফিসার হিসেবে কাজে যোগদানের সুযোগ লাভ করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নৌবাহিনীপ্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল চৌকশ ক্যাডেটদের অসামান্য সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কারে ভূষিত করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সততা, সঠিক নেতৃত্ব, আত্মত্যাগ এই ত্রিমাত্রিক মন্ত্রে বলীয়ান হয়ে সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের প্রয়োজনে নৌবাহিনীর সদস্যদেরও সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি বলেন, সাবমেরিন ও যুদ্ধ জাহাজকে পোতাশ্রয়ে নিরাপদ জেটি সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে কক্সবাজারের পেকুয়ায় আধুনিক বেসিন সুবিধা সংবলিত স্থায়ী সাবমেরিন ঘাঁটি ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ নির্মাণের কাজ চলমান। এ ছাড়া বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে উপকূলবর্তী এলাকায় নৌবাহিনীর জাহাজের অপারেশনাল ও যোগাযোগ সুবিধা বাড়ানোর জন্য ‘শেরেবাংলা ঘাঁটি’ নির্মাণের কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন নতুন জাহাজ, সমরাস্ত্র সংযোজনের পাশাপাশি এসব অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো বৃদ্ধি ও সময়োপযোগী করার ক্ষেত্রেও তাঁর সরকার কাজ করছে। তার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি নৌ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ ঢাকার পদনাম পরিবর্তন করে ‘কমান্ডার ঢাকা নৌ অঞ্চল’ করা হয়েছে। একই সঙ্গে পদবি কমোডর থেকে রিয়ার অ্যাডমিরালে উন্নীত করা হয়েছে।
নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে বর্তমান সরকারের নানা পদক্ষেপের বিস্তারিত তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, গত নভেম্বরে জার্মানি থেকে নতুন একটি এমপিএ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এভিয়েশন উইংয়ে যুক্ত হয়েছে। অপরটি ২০২২ সালের মে মাসে যুক্ত হবে। হেলিকপ্টার ও এমপিএ পরিচালনা-রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আধুনিক সব সুবিধাসংবলিত দ্বিতীয় হ্যাঙ্গারের নির্মাণকাজ চলমান। স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে নৌবাহিনীর সম্প্রসারণে জাতির জনকের ভূমিকা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করেন, যা ছিল বাংলাদেশের সমুদ্রনীতির ভিত্তি। এরই ধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যেই প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা সুনির্দিষ্টকরণ সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে তাঁর সরকার জাতির জনক প্রণীত প্রতিরক্ষানীতির আলোকে ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া শুরু করে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী আজ শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও অত্যন্ত সুশৃঙ্খল, দক্ষ ও পেশাদার বাহিনী হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনসহ সব ক্ষেত্রে তাঁদের আত্মত্যাগ-কর্তব্যনিষ্ঠা বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছে বিরল সম্মান ও মর্যাদা, যা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অত্যন্ত উজ্জ্বল করেছে।
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে যাচ্ছি : গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি আরেকটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে বঙ্গবন্ধুর এই নীতি অনুসরণ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের সরকারের আমলে দেশের আর্থ-সামাজিক খাতে যেমন উন্নয়ন হচ্ছে, তেমনি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে যাচ্ছি। তাছাড়া আমরা বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অবদান রেখে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ডিপ্লোম্যাটিক এক্সিলেন্স পুরস্কার-২০২০ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাবেক রাষ্ট্রদূত সাইদ মোহাম্মদ আল মেহরি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. খুরশেদ আলম (অব.) এবার পদক পান। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন পদক তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, কার্যনির্বাহী সদস্য ও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন সম্পাদিত ‘শেখ হাসিনা বিমুগ্ধ বিস্ময়’ নামের একটি গ্রন্থ তুলে ধরা হয়। চন্দ্রাবতী একাডেমি থেকে প্রকাশিত বইটিতে স্থান পেয়েছে ৭৫ লেখকের ৭৫টি প্রবন্ধ ও ৭৫টি দুর্লভ আলোকচিত্র।
নিজের জন্য চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার জন্য বই, আমার জন্মদিন, আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমি কোনো কিছু চাই না। আমার জন্য কিছু করা হোক, সেটাও আমার কামনা না। আমি জাতির পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই।
’৭৫-এর ১৫ আগস্টের নির্মমতার কথা স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ভারাক্রান্ত গলায় তিনি বলেন, ‘আমি তো আমার বাবা-মা সব হারিয়েছি, কিন্তু আমি একটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যত কষ্ট, যত আঘাত, বাধা আসুক; যে স্বপ্ন নিয়ে আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করেছেন, সেই স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে। বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ। দারিদ্র্য বলে, মঙ্গা বলে দেশে কিছু থাকবে না। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে, উন্নত জীবন পাবে’- এটাকেই নিজের জীবনের লক্ষ্য বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমারের নির্যাতনে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি। আমি আশা করি, বিশ্বের সব মানুষের শান্তি ও মানবাধিকার যেন রক্ষা পায়, এ ক্ষেত্রে সবাই আমাদের সহযোগিতা করবে। সরকারপ্রধান বলেন, দেশের দরিদ্র মানুষকে আর দরিদ্র থাকতে দেব না। মানুষ ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হবে। উন্নত, সমৃদ্ধ জীবন পাবে। জাতির পিতার সেই পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ফসল প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছাবে। দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান ও উন্নত জীবন পাবে। এটাই ছিল জাতির পিতার লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। তিনি বলেন, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখেও আমরা মেরিটাইম বাউন্ডারি সমস্যার সমাধান করেছি। এটা আমাদের কূটনৈতিক সাফল্য। পদক বিজয়ী দুজনকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।