বিদেশে বসে রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য ॥ পাসপোর্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত
বিদেশে থেকে অনেকেই রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এমন বক্তব্যদাতাদের তালিকা করে তাদের পাসপোর্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়া চাকরিতে নিয়োগ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিসহ সবক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট (মাদক গ্রহণ সংক্রান্ত পরীক্ষা) সংক্রান্ত একটি আইনের খসড়া মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপন করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি দেশে কিছু বিদেশী নাগরিক আছে, যাদের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তারা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তাদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে সেইফ হোম বা ডিটেনশনের মধ্যে রেখে স্বদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য অর্থ বরাদ্দে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। বুধবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন কমিটির সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
মন্ত্রী বলেন, দেখা গেছে বিদেশে থেকে অনেকে মিথ্যাচার করছে। কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করাও সঠিক নয়। তারপরও কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে করলে সেটা ওই ব্যক্তির বিষয়। কিন্তু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও যেগুলো বলছে সেটা রাষ্ট্রদ্রোহী। দুটি জিনিস আমরা সবসময়ই প্রার্থক্য করি- একজন ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে বলতেই পারে। আরেকটা হলো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বলা। এতে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রবিরোধী এসব কাজ যারা বিদেশে বসে করছেন, তাদের যাতে পাসপোর্ট বাতিল করা হয় সেজন্য আমরা পরামর্শ দিয়েছি। তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হোক, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সেগুলো কারা করছে, কী কী করছে এবং কোনটা রাষ্ট্রবিরোধী কাজ, সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যারা সক্রিয়ভাবে এবং অব্যাহতভাবে এ কাজ করে যাচ্ছে, তাদের পাসপোর্ট বাতিলের জন্য উদ্যোগ নেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা আমাদের দেশের নাগরিক নন। তাই আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী তাদের বিচার হবে না। তাই কীভাবে তাদের অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখা যায়, সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চালিয়ে যাবে, সেই নির্দেশনা তাদের দেয়া হয়েছে।
মোজাম্মেল হক জানান, যে কোন সরকারী চাকরিতে নিয়োগের আগে ডোপ টেস্ট হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির আগেও ডোপ টেস্ট করা হবে। ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার জন্য দ্রুত একটি আইন করা হবে। ডোপ টেস্ট (মাদক গ্রহণ সংক্রান্ত পরীক্ষা) সংক্রান্ত একটি আইনের খসড়া মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপন করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
তিনি বলেন, সবক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট হবে। সব সরকারী চাকরির নিয়োগে, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীর ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক। সেজন্য আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। মোজাম্মেল হক বলেন, ডোপ টেস্টের জন্য খুব দ্রুতই আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে কিছু বিদেশী নাগরিক আছে, যাদের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তারা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তাদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে সেফ হোম বা ডিটেনশনের মধ্যে রেখে স্বদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য অর্থ বরাদ্দে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি।
অনেক সময় পার্সেলের মাধ্যমে অবৈধ জিনিস প্রাচার হয় জানিয়ে মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি বলেন, সেজন্য আগে পোস্ট অফিসে এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। এ রকম তথ্য পাওয়া গেছে যে, পোস্ট অফিস থেকে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে মাঝখানে গিয়ে হয়তো আবার সেটা পরিবর্তন হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, পার্সেল কে পাঠাচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে নাম থাকত না। এখন শুধু নাম থাকলে হবে না, আইডি কার্ড বা পরিচয়পত্রের পূর্ণাঙ্গ তথ্য থাকতে হবে। একজন তো ভুয়া নামও ব্যবহার করতে পারে। আমি হয়তো ভুল ঠিকানা দিয়েও পাঠাতে পারি। সেজন্য আইডি কার্ড অনুসারে পার্সেল পাঠাতে হবে এবং তার উপস্থিত থাকতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে আসা পার্সেল আগে জিপিওতে স্ক্যানিং হতো। এখন এয়ারপোর্টে সেই প্যাকেটগুলো স্ক্যানিং হবে। এই ব্যবস্থার জন্য বলা হয়েছে। দেশের বাইরে বাংলাদেশী যারা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয় তাদের বিষয়ে দূতাবাসগুলোকে সক্রিয় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে জানিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্য সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছে। আমরা সেগুলো পর্যালোচনা করে মনে করেছি, সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণে বা কিছু ভুল তথ্যের কারণে, ইউটিউব বা ওই সমস্ত মিডিয়াতে যেসব তথ্যাবলি অহরহ প্রচারিত হয়, সেগুলো যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে, যাচাই-বাছাই না করে উনারা এ মন্তব্য করেছেন।
আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি, সঠিক তথ্যগুলো যেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, সেগুলো যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেয়া, যাতে তাদের এ ভুল ধারণা ভেঙ্গে দেয় এবং সেগুলো তারা সংশোধন করেন। আমাদের পক্ষ থেকে সেই অনুরোধ আমরা রেখেছি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আরও বলেন, মাদক ব্যবসায়ী এবং সেবনকারীদের বিষয়ে আইন সহজ থাকে। সহজে তারা জামিন পেয়ে যায়। সেজন্য আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, যাদের ধরা হয়, দেখা যায় দুদিন পরই তারা সব জামিন পেয়ে যায়। সেক্ষেত্রে আমাদের আইনে কিছু দুর্বলতা আছে। ভবিষ্যতে সে দুর্বলতাগুলোর সুযোগ নিয়ে আইনে জামিনের যে অধিকার, সেটার যাতে অপপ্রয়োগ না হয় এবং আইনের যে ত্রুটি আছে, সেগুলো দূর করার জন্য আইন কীভাবে সংশোধন করা যায়, সে ব্যাপারেও আমরা কথা বলেছি, সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, দুইটা জিনিসে আমরা অনেক সময় বিভ্রান্ত হয়ে যাই। একটা হলো- এ্যালকোহল বা মদ জাতীয় জিনিস। আরেকটা হলো- ড্রাগ। যেটা মানুষের জীবনী শক্তি নিঃশেষ করে দেয়। এ দুইটাকে আলাদা করে ড্রাগের জন্য যে কঠোর আইন আছে, সেগুলো যাতে আমলে আসে, কারণ এ্যালকোহল আর ড্রাগ এক জিনিস নয়।