দুবাই এক্সপোতে নিজস্ব এসএমআর প্রযুক্তি প্রদর্শন করলো রসাটম
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি সংস্থা রসাটম গত ২০ জানুয়ারী দুবাইয়ে চলমান এক্সপো-২০২০ তে ক্ষুদ্র মডিউলার রিয়্যাক্টর (এসএমআর) দিবস উদযাপন করে। ক্ষুদ্র মডিউলার রিয়্যাক্টরের সুবিধা এবং সারা বিশ্বে এর ব্যাবহারের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে রসাটম এই আন্তর্জাতিক ফোরামটির আয়োজন করে।
ফোরামে অংশগ্রহণ করেন রসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচোভ, ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার এসোসিয়েশনের মহাপরিচালক শামা বিলবাও ওয়াই লিওনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও পার্টনার কোম্পানীর প্রতিনিধিবৃন্দ, ইউএই এটমিক এনার্জী কর্পোরেশনের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আল-হাম্মাদী এবং সংযুক্ত আরব আমীরাতের রুশ রাষ্ট্রদূত তীমুর জাবিরভ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশ্বের বিভিন্ন জলবায়ু অঞ্চলে স্থিতিশীল বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং কার্বনমূক্ত লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনে এসএমআর ভিত্তিক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রর সুবিধাগুলো নিয়ে একটি মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন প্রদান করা হয়।
রসাটম মহাপরিচালক এ উপলক্ষ্যে প্রদত্ত বক্তব্যে বলেন, “শুধুমাত্র কপ-২৬ ই নয়, বরং ২০২১ সালের যতগুলো এনার্জী ও জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে তা থেকে প্রতীয়মান হয় যে মানুষ এখন অনুধাবন করতে পারছে পরমাণু প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যাবহার ছাড়া কার্বনমুক্ত ভবিষ্যৎ পৃথিবী সম্ভব নয়”।
প্যানেল আলোচনাকালে এক প্রশ্নের জবাবে আলেক্সি লিখাচোভ উল্লেখ করেন যে, “বৃহৎ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সুবিধা সুস্পষ্ট- উন্নত অবকাঠামো এবং বিপুল এনার্জী চাহিদা রয়েছে এমন দেশগুলোতে নির্ভরযোগ্য, নিরবিচ্ছিন্ন এবং কম কার্বন নিঃসরণকারী বিদ্যুৎ উৎপাদনে এগুলো অত্যন্ত উপযোগী। এসএমআর গুলোর ক্ষেত্র কিছুটা ভিন্ন। দূরবর্তী অঞ্চলে, দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো, স্বল্প বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে এমন দেশগুলোতে এবং নির্দিষ্ট শিল্প প্রকল্পে (যেমন মাইনিং প্রকল্প) বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য এসএমআর প্রযুক্তি সর্বাধীক উপযোগী”।
তিনি আরও জানান, “এসএমআর প্রযুক্তি সুস্পষ্ট আরও কিছু সুবিধা রয়েছে যেমন চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত এর উৎপাদন কমানো বা বাড়ানো, নির্মাণে কম সময় এবং স্বল্প স্টার্টআপ ব্যয়। ভৌগলিক কারনে যেসকল এলাকায় বৃহদাকার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ আর্থিকভাবে লাভজনক নয় বা নির্মাণ করা কঠিন, সে সকল এলাকায় এসএমআর প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও তাপ সরবরাহ করা যেতে পারে। আমার মনে হয় সারা বিশ্বের মানুষের কাছে, বিশেষকরে বর্তমানে প্রায় একশ কোটির অধিক মানষের কাছে লো-কার্বন এনার্জী পৌছে দেয়ার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা চালানো উচিৎ”।
রসাটমের ফার্স্ট উপ-মহাপরিচালক কিরিল কামারভ জানান যে, “রাশিয়া শুধুমাত্র তাত্ত্বিকভাবে এই এসএমআর প্রযুক্তি অফার করছে না বরং ইতোমধ্যে এই প্রযুক্তির সাহায্যে দেশটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ করছে। উদাহরণস্বরুপ তিনি ভাসমান বিদ্যুৎকেন্দ্র একাডেমিক লামানোসভের উল্লেখ করে বলেন যে এটি ইতোমধ্যে দুই বছরের অধিক সময় যাবত রাশিয়ার চূকোতকা অঞ্চলের পেভেক শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। স্থলভাগে ইয়াকুতিয়ায় একটি এসএমআর এনপিপি নির্মানের কাজ চলছে যা ২০২৮ সালেই গ্রীডে যুক্ত হবে। কেন্দ্রটিতে আরআইটিএম-২০০এন রিয়্যাক্টর ব্যবহৃত হবে।
ফোরামে আর্মেনিয়া, করগিস্থান, ফিলিপাইনের সরকারি এবং এনার্জী কোম্পানী প্রতিনিধিবৃন্দ যেমন কীভাবে এসএমআর তাদের বিভিন্ন জাতীয় উন্নয়ন সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে সহায়তা করেছে। সেলিগডার কোম্পানীর প্রতিনিধি বলেন যে, রাশিয়ার উত্তরাঞ্চলে প্রতিষ্ঠানটির এসএমআর ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নির্ভরযোগ্যতার সঙ্গে এবং পূর্ব অনুমেয় মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হয়েছে।
এসএমআর দিবসকে কেন্দ্র করে কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তিও সম্পাদিত হয় যার মধ্যে রয়েছে কিরগিজ প্রজাতন্ত্রে এসআমআর ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে সহযোগিতা সংক্রান্ত রুশ-কিরগিজ সমঝোতা স্মারক। রুসাটম ওভারসীজ এর সঙ্গে আর্মেনীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সহযোগিতা চুক্তি এবং সেলিগডার মাইনিং কোম্পানির সঙ্গে অপর একটি সমঝোতা স্মারক।