সারাদেশে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে চালু হচ্ছে বিট পুলিশিং
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ‘সেবা নিতে জনগণকে পুলিশের কাছে যেতে হবে না, বরং পুলিশই জনগণের কাছে সেবা নিয়ে যাবে’-এ ধারণা থেকে বিট পুলিশিং কার্যক্রম শুরু করেছে পুলিশ সদর দফতর। জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিট পুলিশের সেবা। অপরাধ দমনে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে বিট পুলিশিং কার্যক্রম। বিট পুলিশিং-এর মাধ্যমে সারাদেশে গত এক বছরে ২ লাখ ৬০ হাজারের বেশি বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে। আলোচ্য সময়ে গ্রেফতার করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার অপরাধীকে। বিরোধ নিষ্পত্তি ও অপরাধী গ্রেফতার-উভয় দিকেই ব্যাপক সাফল্য অর্জন করছে বিট পুলিশ। ইভটিজিং, যৌতুক, বাল্যবিয়ে, খুন, মাদক, চোরাচালান, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির মতো গুরুতর অপরাধের ঘটনায় বিরোধ নিষ্পত্তি ও এই ধরনের অপরাধের ঘটনায় অপরাধী গ্রেফতার করে বিট পুলিশিং সেবার উন্নত মান নিশ্চিত করেছে বিট পুলিশ। বিট পুলিশের বিস্ময়কর সাফল্যে সারাদেশের ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বিট পুলিশিং সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বিট পুলিশিং সেবা ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। বিট পুলিশিংয়ের জন্য ৫ দফা নির্দেশনা দিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদ। এজন্য স্থায়ী কার্যপ্রণালী বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) তৈরির জন্য পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি কামরুল আহসানকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে একজন বিট কর্মকর্তাকে ১৩টি সুনির্দিষ্ট কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, পরবর্তীতে এর পরিধি আরও বাড়ানো হচ্ছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, বিট পুলিশিংয়ের দায়িত্বগুলোর মধ্যে রয়েছে, এলাকার মাদক বিষয়ক, ওয়ারেন্টধারী, অপরাধী, ভাড়াটিয়া ও প্রবাসীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা ও উঠান বৈঠক করা ইত্যাদি। সম্প্রসারিত বিট পুলিশিং কার্যক্রমে থানায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বিট পুলিশিং কার্যক্রমের মাধ্যমে মামলা তদন্ত, আসামি গ্রেফতার, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক তথ্য সংগ্রহ করবে। জনতা আর পুলিশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও মজবুত করাই এর লক্ষ্য। বিট পুলিশিংয়ের প্রত্যাশিত সুফল ও সুবিধা পাবে সাধারণ জনগণ। ফলে একদিকে যেমন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী উপকৃত হবে অন্যদিকে পুলিশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে। এ কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে সম্প্রসারিত বিট পুলিশিং থেকে পুলিশের সঙ্গে জনগণের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠবে, পুলিশ-জনগণের মধ্যে দূরত্ব হ্রাস পাবে, জনগণ তাদের সমস্যাবলী খুব সহজেই পুলিশকে জানাতে এবং প্রতিকার চাইতে পারবে- এই ধরনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, আদর্শ নিয়ে বিট পুলিশিং কার্যক্রম সম্প্রসারিত করা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশের গ্রামাঞ্চলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভূমির মালিকানা নিয়ে উদ্ভূত বিরোধ, হানাহানি, খুন তথা ফৌজদারি অপরাধে পর্যবসিত হয়। বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে এই সব শরিকী বিরোধ ও শত্রুতা প্রাথমিকভাবে নিষ্পত্তি করা যায়; যা গুরুতর অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কা হ্রাস করে। ইভটিজিং, যৌতুক, বাল্যবিয়ে ইত্যাদি সামাজিক সমস্যা নিরসন ও জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও সচেতন করা অত্যন্ত জরুরী। চুরি-ডাকাতি রোধ, ছিনতাই প্রতিরোধ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ইত্যাদি সমাজবিরোধী কর্মকা- প্রতিরোধসহ বিভিন্ন জনসভা, নির্বাচনী দায়িত্বে বাংলাদেশ পুলিশের অংশগ্রহণ করার কাজ তো আছেই। সম্প্রসারিত বিট পুলিশিং এমন একটি মাধ্যম যার সাহায্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এসব অপরাধ অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। আগামীর সম্ভাবনাময় উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে জনগণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় সম্প্রসারিত বিট পুলিশিং কার্যক্রম সমগ্র দেশে ছড়িয়ে দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
বিট পুলিশিং কার্যক্রমের পরিচিতি ও সাফল্যটা যেভাবে ধরা দিয়েছে পুলিশের এক প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৭ সালে সিলেট রেঞ্জের বিভিন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়নে ‘সম্প্রসারিত বিট পুলিশিং’ নাম দিয়ে কাজ শুরু করেন তখনকার সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি কামরুল আহসান। তিনি ক্রাইম নোট বুকের পরিবর্তে নির্ধারিত ছকে মাসিক প্রতিবেদন নিতেন বিট পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে। এতে অপরাধ দমনে তিনি ব্যাপক সুফল পান এবং জনগণের কাছে প্রশংসিত হয় পুলিশ। সেই সফলতার ধারণা থেকেই এখন সারাদেশে স্থায়ীভাবে বিট পুলিশিং কার্যক্রম চালু করার কাজ শুরু করেছে পুলিশ সদর দফতর।
পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে বলেছেন, এমন একটি ব্যবস্থা চালু করতে চাই, যাতে জনগণকে পুলিশের কাছে আসতে না হয়। বরং পুলিশই জনগণের কাছে সেবা নিয়ে যাবে। আর সেই ব্যবস্থা হচ্ছে বিট পুলিশিং। সারাদেশে বিট পুলিশিং ব্যবস্থা চালু করে আমরা মানুষের কাছে যেতে চাই। মানুষের হৃদয় জয় করতে চাই। করোনার সময় জনগণের কাছ থেকে পাওয়া ভালবাসা ধরে রাখতে চাই। পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদ বিট পুলিশিংয়ের জন্য যে পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন তাতে রয়েছে, পুলিশকে দুর্নীতিমুক্ত হওয়া, মানুষকে নির্যাতন করা থেকে বেরিয়ে আসা, মাদকের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখা, সারাদেশে বিট পুলিশিং চালু করা ও কর্মরত অবস্থাতেই পুলিশের কল্যাণ নিশ্চিত করা। এই পাঁচ দফা বাস্তবায়নের জন্য বিট পুলিশিং সারাদেশের ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলামের নির্দেশে রাজধানী ঢাকায় বিট পুলিশিং পদ্ধতি আরও জোরালো ও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। পুলিশের কাছে জনগণের যে আশা-আকাক্সক্ষা রয়েছে তা পূরণে বিট পুলিশিংয়ের চমৎকার পদ্ধতি প্রয়োগ করার জন্য পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তার অধিক্ষেত্রকে প্রায় ৪৮০টি বিটে ভাগ করেছেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন প্রতিষ্ঠার লগ্নেই তৎকালীন অধিক্ষেত্রকে বিটে ভাগ করা হয়েছিল। বর্তমানে তা সম্প্রসারণ করা হয়েছে মাত্র। ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের নির্দেশে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বিট পুলিশিং বাস্তবায়ন শুরু করেছে।
পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিট পুলিশের মূল কাজ হবে অপরাধীদের তথ্য সংগ্রহ করে থানা পুলিশকে সহায়তা করা। এলাকায় অপরাধী কারা, কী ধরনের অপরাধ হচ্ছে এবং জামিনে বেরিয়ে এসে অপরাধীরা আবার একই অপরাধ করে কিনা, মাদক কারবারি কিংবা জঙ্গীদের অপতৎরতাসহ নানামুখী অপরাধের দিকেও লক্ষ্য রেখে সেসব তথ্য থানাকে অবহিত করতে হবে বিট পুলিশকে। এ ছাড়া কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থাও এর মাধ্যমে শক্তিশালী করা সম্ভব হবে। গোয়েন্দা ইউনিটগুলোর পাশাপাশি অপরাধীর তথ্য সংগ্রহে বিট পুলিশিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।