ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে নেতা-কর্মীদের সজাগ থাকার নির্দেশ আওয়ামী লীগের
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : গুজব আর গুঞ্জনের ডালপালা ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। চারদিক থেকে নানা খবর আসছে। বেশির ভাগেরই সত্যতা নেই। তবে শঙ্কা আর সম্ভাবনা রয়েছে। এসব কারণ বিশ্লেষণ করে নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে বলে আঁচ করছে আওয়ামী লীগ।
দলের নেতারা প্রকাশ্য সভায় এ নিয়ে সতর্কবার্তা দিচ্ছেন। যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে এখন থেকেই প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সজাগ থাকতে বলছেন। যেকোনো সময় রাজনীতির মাঠে নামতে হতে পারে বলে মন্তব্য করছেন। বৃহস্পতিবার নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি ষড়যন্ত্রের কথা বলেছেন। ওইদিন তিনি বলেন, ক্ষমতায় থেকে বিএনপি দেশের অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করে সেই অর্থ দিয়ে বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে, দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে।
এ জন্য তিনি ৪টি কারণের কথা বলেছেন। এগুলো হচ্ছে- যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বাঁচানো, নির্বাচনকে বানচাল ও প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি হচ্ছে দেশের জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষা করা, কেড়ে নেয়া নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন তার বড় প্রমাণ।
বিএনপি এই নির্বাচনেও নানা খেলার চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি, ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষাসহ সবকিছু আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল।
তিনি আরও বলেন, এদের কোনো দেশপ্রেম নেই, জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তাই দেশের অগ্রযাত্রাকে বন্ধ করতে, দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে নানা চক্রান্ত করছে। সংসদে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে বিশেষ বার্তা হিসেবে দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা দলের যেকোনো অনুষ্ঠানে গিয়ে ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলছেন, সতর্ক করছেন। প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। অবশ্য জানুয়ারির শুরুর দিক থেকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ষড়যন্ত্র নিয়ে একাধিকবার বার্তা দিয়েছেন। অসুস্থ থাকার কারণে মাঝে মধ্যে তিনি রাজনৈতিক বিবৃতি দিচ্ছেন। তাতেও বিষয়টি স্পষ্ট করে তুলে ধরছেন।
গত ১৩ই জানুয়ারি দেয়া এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেতারা বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক সমাবেশের নামে সন্ত্রাস ও সহিংসতার উস্কানি দিচ্ছেন। কেউ কেউ আরেকটি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলছেন, ডাইরেক্ট অ্যাকশনের হুমকি দিচ্ছেন।
আসলে পায়ের নিচে মাটি নেই বলে এসব তাদের নিজেদের ওপর জেঁকে বসার ভয় তাড়ানোর নির্জীব হুংকার। আত্মবিশ্বাস হারানো এক ক্ষয়িষ্ণু রাজনৈতিক দলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা জানতে চাই, কাদের নিয়ে তারা যুদ্ধ করবেন? কেন যুদ্ধ করবেন? তাদের যুদ্ধ কী লুটপাট, দুর্নীতি আর অরাজকতা সৃষ্টির জন্য? আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগও প্রস্তুত।
তিনি বলেন, যারা মানুষের মৌলিক অধিকার হরণকারী, দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষক, উগ্র-সাম্প্রদায়িকতার ধারক ও বাহক হিসেবে পরিচিত এবং যারা স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতা ও স্বেচ্ছাচারিতামূলক অপরাজনীতির উত্তরাধিকার তাদেরকে জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের যেকোনো ধরনের আস্ফালনকে সর্বাত্মকভাবে প্রতিহত করা হবে।
এসব প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, একটি গোষ্ঠী পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছে। তাই আমি নেতা-কর্মীদেরকে বলবো আপনারা প্রস্তুত হন। সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। আগামী নির্বাচনের আগে সকল নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
দলের অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, যতই ষড়যন্ত্র করুক আর যতই ভয় দেখানো হোক, কোনো লাভ হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন কেউ ঠেকাতে পারবে না। টানা ১৩ বছর একটানা ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা ওয়াদা করেছিলেন, দেশে ফিরে এসে মানুষের দোরগোড়ায় গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবেন। সেই সংকল্প নিয়ে লড়াই করেছেন তিনি। বারবার ষড়যন্ত্র হয়েছে, হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে তাকে। তিনি জনগণের আস্থা অর্জন করে ক্ষমতায় এসেছেন। কারও দয়ায় তিনি ক্ষমতায় আসেননি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, তারা কীভাবে বিএনপির বন্ধু হয়? তাদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে বিশ্বাস করে! এটা কি আমাদের বিশ্বাস করতে হবে? যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিদেশে অপপ্রচার করে, অর্থ বিনিয়োগ করে, লবিস্ট নিয়োগ করে, তাদের কবর রচনা করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে এগিয়ে আসতে হবে।
এদিকে রোববার জাতীয় শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এক যুক্ত বিবৃতিতে সারা বাংলাদেশের জাতীয় শ্রমিক লীগের সকল নেতা-কর্মীকে সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা এবং বাংলাদেশবিরোধী একটি চিহ্নিত মহলের দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলার আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক বৈঠকের পর সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ওই বিবৃতি দেন।আওয়ামী লীগ অফিসের ওই বৈঠকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম এবং জাতীয় শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. নূর কুতুব আলম মান্নান ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ কে এম আযম খসরু উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে নির্বাচিত এমপি শামীম ওসমানও এ নিয়ে খোলামেলা বক্তব্য রেখেছেন। শনিবার নারায়ণগঞ্জের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমার মনে হয়, সামনে প্রচণ্ড বড় আঘাত আসছে দেশের ওপর। আমাদের অস্তিত্বের উপর। আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের উপরে। কে বাঁচাতে পারে?
উপরে সৃষ্টিকর্তা আর নিচে শেখ হাসিনা। যতো আঘাত আসছে তিনি (শেখ হাসিনা) নিজের ওপর নিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক রাজনীতি চলছে। হয়তো আগামী এক-দুই মাসে একটা আঘাত করার চেষ্টা হবে। তারা জিততে পারবে না। কারণ নেত্রীর ওপর আল্লাহর রহমত আছে।
শামীম ওসমান আরও বলেন, জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে (বৃহস্পতিবার) একটা ভাষণ দিয়েছেন। সেখানে তিনি অনেক কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছেন। আমি যা বুঝলাম সামনে আমাদের চরম কঠিন একটি পরীক্ষা অতিক্রম করতে হবে। আমাদের দায়িত্ব এই মেসেজটা সবার কাছে পৌঁছে দেয়া। তিনি আরও বলেন, যারা খেলা খেলতে চান তাদের বলি আমরাও এবার খেলব। আমরাও এইবার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা এইবার কিন্তু খেলার জবাবটা কঠিনভাবে দিবো। খুব কঠিন ভাবে দিবো। আমরা কাবাডি খেলতে জানি। খেলা হবে। খেলায় আমরা জিতবো ইনশাআল্লাহ্।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে শামীম ওসমান বলেন, আমার কথা হালকাভাবে নিবেন না। গেট প্রিপারেশন নারায়ণগঞ্জ। প্রস্তুতি নেন যাতে আমাদের নেত্রী, শেখ হাসিনার তরফ থেকে যদি কোনো ডাক আসে নারায়ণগঞ্জ থেকে যেন ভিমরুলের চাকের মতো লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মী ঢাকায় যেতে পারে। শেখ হাসিনার ওপর আঘাত এলে ঘরে বসে থাকব না।
আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা জানান, গত কয়েকদিন ধরে আমাদের নেতারা নানা ষড়যন্ত্রের বার্তা দিচ্ছেন। আমরা তাদের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। রাজপথে নামতে হলে নামবো। আন্দোলন করবো। প্রয়োজনে রক্ত দেবো।