স্বপ্নের শেখ মুজিব রেল সেতুর কাজ এগিয়ে চলেছে

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : যমুনা নদীর ওপর স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় একশ’ ২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলবে। নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৩৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি এখন দৃশ্যমান। নতুন রেল সেতু নির্মাণকাজ শেষ হলে ডাবল লাইনে দ্রুতগতিতে মালবাহীসহ ৬৮টি ট্রেন চলাচল করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রেন চলাচলের আন্তঃসংযোগ সৃষ্টি হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে এ সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা রেল কর্তৃপক্ষের। এই রেল সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমাযুন কবির সেতু নির্মাণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন। দেশের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। যেটির বাস্তবায়ন এখন দৃশ্যমান।

বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলকারী বাস ও ট্রেনের যাত্রীরা চলন্ত পথে রেল সেতুর নির্মাণ কাজ প্রতিনিয়তই প্রত্যক্ষ করছেন। পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষও সেতুর পাইলিং বসানোর কাজে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক হ্যামারের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন। ইতোমধ্যেই কয়েকটি পিলারের পাইলিং কাজ শেষ হয়েছে। দিনরাত সমান তালে চলছে এই সেতু নির্মাণ কাজ। দেশের কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ লাভ করতে যাচ্ছে। এই রেল সেতুটি নির্মাণ হলে দেশের পূর্বাঞ্চলীয় ও পশ্চিমাঞ্চল রেলের যোগযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর তিনশ’ মিটার উজানে সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল সীমানায় নির্মিত হচ্ছে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। সেতুর টাঙ্গাইল প্রান্ত থেকে পাইলিং বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। দিনরাত চলছে নির্মাণ কাজ। ৪ দশমিক ৮০ কিমি দীর্ঘ ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকসহ এ রেল সেতুর মোট ৫০টি পিলারে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। জাপানী অর্থায়ন সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০২৩ সালে।

এ রেল সেতু বাস্তবায়িত হলে আন্তঃদেশীয় যাত্রী এবং মালবাহী ট্রেন সরাসরি চলাচল করতে পারবে। এতে আমদানি রফতানি খরচ কমে যাওয়াসহ বঙ্গবন্ধু সেতু ও মহাসড়কের ওপর চাপ কমবে। ঝুঁকিও হ্রাস পাবে বঙ্গবন্ধু সেতুর। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে সমান্তরালভাবে বাস-ট্রাক ও রেল চলছে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য খুবই ধীরগতিতে চলে রেল কোচ। বর্তমানে ওই সেতুতে অনুমোদিত গতিবেগ ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার। সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হলে কমে আসবে ভ্রমণ সময়ও। জ্বালানি খরচও কমবে রেল বিভাগের। একই সঙ্গে উত্তরাঞ্চল থেকে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা সহজ হবে, কমবে পণ্য পরিবহন খরচ যা এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সামাজিক জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। এটা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। রেল বিভাগের তথ্য মতে ডুয়েল গেজ ডাবল-ট্র্যাকের এ সেতুটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় রেল সেতু। এটি রাজধানীর সঙ্গে দেশের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ ও উন্নত করবে। এছাড়া ট্রেন সিডিউল বিপর্যয় কমাতেও এ সেতু সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে রেল বিভাগ।

বঙ্গবন্ধু সেতু ও রেল সেতুর পশ্চিমেই গড়ে উঠছে সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন ও বিসিক শিল্প পার্ক। এখানে দেশের ৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ইতোমধ্যে এসব অঞ্চলে শিল্প কারখানা স্থাপনে আগ্রহ দেখিয়েছে দেশী-বিদেশী শিল্প উদ্যাক্তোরা। বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণ হলে এই শিল্পাঞ্চল থেকে রেলপথ, সড়কপথ, স্থলপথ ব্যবহার করে বিশ্বের যে কোন দেশে পণ্য পরিবহন সহজ হবে। একই সঙ্গে উত্তর জনপদের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী পরিবহনও সহজ হবে মনে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মোঃ মাসুদুর রহমান জানান, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করে। নতুন রেল সেতু নির্মাণ হলে ডাবল লাইনে দ্রুতগতিতে মালবাহীসহ ৬৮টি ট্রেন চলাচল করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রেন চলাচলের আন্তঃসংযোগ সৃষ্টি হবে। ইতোমধ্যে এ রেল সেতুর ৩৫ শতাংশ কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। দ্রুতগতিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

২০২০ সালে ২৯ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সেতুটির নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। ২০২৩ সালের মধ্যে এ সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা রেল বিভাগের। এই রেল সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। সিরাজগঞ্জ রেল বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক নব কুমার কর্মকার জানান, এই জেলাটি এক সময় রেল সিটি হিসেবে খ্যাত ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পর শহর থেকে দূর দিয়ে রেল চলাচল শুরু হয়। এতে শহরের সঙ্গে রেলের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এই রেল সেতুটি চালু হলে সিরাজগঞ্জের সঙ্গে বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর রেল সংযোগ শুরু হবে। নতুন দিগন্ত শুরু হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুটি দেশের পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য আশীর্বাদ।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.