আদালতে ডিজিটাল তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা যাবে
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : মামলার বিচারে ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপনের সুযোগ রেখে এভিডেন্স (সংশোধন) আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে অবসরের পর প্রধান বিচারপতির জন্য মাসে ৭০ হাজার টাকা বিশেষ ভাতার বিধান রেখে একটি আইনের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এ বৈঠকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন সরকারপ্রধান। এ ছাড়া মন্ত্রীরা সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে উপস্থিত ছিলেন।
পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, কোভিডের পর থেকে অনলাইনে মামলা-মোকদ্দমা চলছিল, এর ফলে সাক্ষ্য-প্রমাণ সব অনলাইনেই আসছিল। কিন্তু আমাদের এভিডেন্স অ্যাক্টে আবার এরকম ডিজিটাল এভিডেন্সের সরাসরি কোনো বিধান ছিল না। কেউ যদি মামলায় হেরে যেত, সে যদি আপিল করত ওপরের কোর্টে, সেক্ষেত্রে আইনি কিছু জটিলতা হওয়ার সুযোগ ছিল। এটা অনেকদিন ধরেই আলোচনায় ছিল, সেজন্য আইন মন্ত্রণালয় এটা নিয়ে এসেছে। এখন থেকে ডিজিটাল যে এভিডেন্স, সেগুলোও গ্রহণ করা হবে।
সচিব বলেন, কেউ যাতে ভুয়া বা জাল সাক্ষ্য-প্রমাণ ডিজিটাল মাধ্যমে হাজির করতে না পারে, আদালত যদি মনে করেন যে কোথাও আপত্তিজনক কিছু আছে অথবা কেউ যদি আপত্তি তোলে, তা হলে ওই সাক্ষ্য-প্রমাণের ফরেনসিক পরীক্ষা করা যাবে। এটা করলে বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে যাবে। কেউ একটা ম্যানুপুলেটেড এভিডেন্স দিল, এটা কিন্তু বাঁচার কোনো উপায় নেই। কারণ ফরেনসিক করলেই ধরা পড়ে যাবে। বিশেষ করে ডকুমেন্টের ফরেনসিক কিন্তু দুই-চার মিনিটেই করা যায়। একটু সময় লাগে ভিডিওর ক্ষেত্রে, তাও খুব বেশি সময় লাগে না। আমাদের পর্যাপ্ত ল্যাবরেটরি আছে দেশে। খুব হাই-টেকনোলজি আছে। এগুলো বিভিন্ন জায়গায় সরকার সুবিধামতো ছড়িয়ে দিয়ে যে ডিজিটাল সাক্ষ্য উপস্থাপন করা হবে সেগুলো যদি কোর্ট বা কোনো পক্ষ মনে করে আপত্তি আছে, তা হলে ফরেনসিক করে নেবে। আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, টুইস্ট (ঘোর-প্যাঁচ) করার কোনো উপায় নেই। কেউ যদি এটা করে, তা হলে আমাদের দণ্ডবিধির ২১১ ধারায় মিথ্যা সাক্ষ্যের বিষয় আছে আর ডিজিটাল অ্যাক্টেরও ৫৭ ধারা আছে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের দুটি ধারায় ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের মামলায় বাদীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার যে সুযোগ রয়েছে, সংশোধনে সেখানেও পরিবর্তন আসছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, ভিকটিমকে জেরা করার ক্ষেত্রে শালীনতা বজায় রাখতে হবে। কোন জাতীয় প্রশ্ন প্রয়োজন সেটা কোর্ট ঠিক করে দেবেন। সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি যখন বলাৎকার কিংবা শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারিতে সোপর্দ হন, তখন দেখানো যেতে পারে যে অভিযোগকারিণী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা। আর ১৪৬(৩) ধারায় বলা হয়েছে, তাহার চরিত্রের প্রতি আঘাত করে তার বিশ^াসযোগ্যতা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করা যায়, যদিও এ রূপ প্রশ্নের উত্তরের দ্বারা সে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো অপরাধের সহিত জড়িত হতে পারে, কিংবা সে দণ্ডলাভের যোগ্য সাব্যস্ত হতে পারে, অথবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাহার দণ্ডলাভের যোগ্য সাব্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তথাপি অনুরূপ প্রশ্ন করা যাবে।’
বিচারকদের অবসর ভাতা : মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বৈঠকে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২২-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এটি অধ্যাদেশ আকারে ছিল, এখন আইনে পরিণত করা হচ্ছে। সে সঙ্গে দুয়েকটি বিষয়ে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। কোনো অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি তার জীবদ্দশায় গৃহসহায়ক, গাড়িচালক, নিরাপত্তা সেবা, সাচিবিক সহায়তা এবং অফিস কাম রেসিডেন্স রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে ৭০ হাজার টাকা অবসর-উত্তর বিশেষ ভাতা পাবেন।
সর্বশেষ ২০১৬ সালে বিচারকদের বেতন ও ভাতা বাড়ানো হয়। বর্তমানে প্রধান বিচারপতি ১ লাখ ১০ হাজার, আপিল বিভাগের বিচারক ১ লাখ ৫ হাজার এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক ৯৫ হাজার টাকা বেতন পান। এ ছাড়া বেতনের ৫০ শতাংশ হারে বিশেষ ভাতা পান তারা, যা গত বছর আইন সংশোধনের সময়ও বলবৎ রাখা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আরেকটা জিনিস প্রস্তাব করা হয়েছে যে, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে নিরাপত্তা দেওয়া। এটা আইনের মধ্যে থাকার দরকার নেই। এটা সরকার মনে করলে নির্বাহী আদেশ দিয়ে তাদেরকে দিতে পারবে। এটা আইনে আনা যাবে না। কারণ অন্য কোনো দেশের আইনে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে অবসরের পর নিরাপত্তা কতদিন দিতে হবে, এটা আইনে নেই। সেজন্য সরকার মনে করে যে, যদি কারও ক্ষেত্রে সেনসিটিভিটি থাকে, সেক্ষেত্রে সরকার নির্বাহী আদেশ দিয়ে তাকে একটা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত নিরাপত্তা দেবে।
আইনের সংজ্ঞায় কিছু পরিবর্তন আনার কথা জানিয়ে সচিব বলেন, পেনশনযোগ্য কর্মকাল অর্থ হবে প্রকৃত কর্মকাল। পূর্ণ বেতনে প্রত্যেক ছুটির মেয়াদ হবে ৩০ দিন অথবা প্রকৃতপক্ষে গৃহীত ছুটির পরিমাণ উভয়ের মধ্যে যেটি কম, সেটি। কোনো বিচারক পূর্ণ গড় বেতনে ছুটিতে থাকাকালে তার নির্ধারিত মাসিক বেতনের সমানহারে ছুটিকালীন বেতন প্রাপ্য হবেন। কোনো বিচারক অর্ধ গড় বেতনে ছুটিতে থাকাকালীন আমাদের যে সরকারি বিধান আছে, সে অনুযায়ী উনারা ছুটি প্রাপ্য হবেন। আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কোনো বিচারক দায়িত্ব পালনকালে আহত হয়ে অক্ষম হলে ‘বিশেষ অক্ষমতাজনিত ছুটি’ প্রাপ্য হবেন। কোনো বিচারক কোনো সহিংস ঘটনায় আহত বা নিহত হলে এ বিষয়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য যে বিধান প্রযোজ্য, তা ওই বিচারকের ক্ষেত্রেও ‘প্রয়োজনীয় পরিবর্তনসহ’ প্রযোজ্য হবে। আর কোনো বিচারক অবসরগ্রহণকালে ছুটি পাওনাসাপেক্ষে ১৮ মাসের ছুটি নগদায়নের সুবিধা পাবেন, যেটা সরকারি কর্মচারীরা পায়। এটা সুপ্রিমকোর্টের জাজদের বেলায় ছিল না। এখন যদি উনাদের ছুটি পাওনা থাকে, তা হলে উনারাও পাবেন।