মুজিববর্ষে আলোকিত করেছি প্রতিটি ঘর : প্রধানমন্ত্রী

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষে আমরা প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালাতে পারলাম, এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। আমরা আলোকিত করেছি এ দেশের মানুষের প্রত্যেকটা ঘর। তিনি বলেন, ওয়াদা করেছিলাম, প্রতিটি মানুষের ঘর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করব। প্রতিটি মানুষ আলোকিত হবে। আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছি। গতকাল দুপুরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধানখালীতে নির্মিত পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের শুভ উদ্বোধন করেন।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই ইলাহী বীরবিক্রম, ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জি মিং, বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান ও পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদ আলম।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সিনিয়র সচিববৃন্দ, পদস্থ কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ বরিশাল বিভাগের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। পরে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ’৯৬ সালে ২১ বছর পর সরকার গঠন করি। বিদ্যুতের জন্য তখন হাহাকার। গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ নাই। সামান্য কিছু লোক বিদ্যুৎ সুবিধা পেত। আমরা উদ্যোগ নিলাম বেসরকারি খাতেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করব। মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেব। সে সময় মাত্র ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম। পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হই। তিনি আরও বলেন, দুর্ভাগ্য আবার ২০০১ সালে সরকারে আসতে পারিনি। পরে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় দেখলাম ৪ হাজার ৩০০ থেকে কমে ৩ হাজার ২০০ তে নেমে আসে বিদ্যুৎ উৎপাদন। ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিল তাদের মধ্যে এ দেশকে এগিয়ে নেওয়ার কোনো আন্তরিকতা ছিল না। এটাই হচ্ছে এ দেশের মানুষের দুর্ভাগ্য।

সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ১৩ বছর একটানা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অব্যাহত রয়েছে। এর মাঝে ঝড়-ঝঞ্ঝা অনেক এসেছে। বাধা অনেক এসেছে। সে বাধা আমরা অতিক্রম করেছি বলেই আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে। ওয়াদা করেছিলাম প্রতিটি মানুষের ঘর আলোয় আলোকিত করব। প্রতিটি মানুষ আলোকিত হবে। আজকের দিনটার মধ্য দিয়ে আলোর পথে আমাদের যাত্রা শুরু। তিনি বলেন, আজ দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল আমরা করে দিচ্ছি। দক্ষিণাঞ্চল এক সময় অবহেলিত ছিল। রাস্তাঘাট স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদরাসা ব্যাপকভাবে করে দিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান সব দিকেই আমরা ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে আজকে ভূমিহীন মানুষদের আমরা ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং পায়রা বন্দর থেকে শুরু করে বিভিন্ন উন্নয়নের কাজ চলছে। দুর্গম রাঙ্গাবালীসহ যেসব এলাকায় দ্বীপাঞ্চল রয়েছে, সাবমেরিনের মাধ্যমে আমরা সেসব এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। এ ছাড়া যে কোনো উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে নৌ-পথসহ সড়ক যোগাযোগ্য ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। তিনি বলেন, স্বজন হারানোর বেদনা নিয়েও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও জনগণের ভালোবাসার শক্তি সাহসে উৎসাহিত হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। দেশের গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে নেতা-কর্মীদের সজাগ দৃষ্টি রেখে মানুষের কল্যাণে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি। এ সময় কলাপাড়ায় সবুজ বনায়ন করার জন্যও তিনি নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন। অনুষ্ঠানে তিনি দেশকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেন।

২২০ নৌকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত : সকাল ১০টা ৪২ মিনিটে দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এসে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। বেলা সোয়া ১১টায় পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটি সংলগ্ন রাবনাবাদ নদীতে ২২০টি নৌকায় জেলেরা আকর্ষণীয় ডিসপ্লে প্রদর্শন করেন। পতাকা নেড়ে অভিবাদন গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। এতে নৌকা প্রদর্শনীর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয় উপকূলের মানুষের জীবনবৈচিত্র্য। নৌকায় গান পরিবেশনসহ বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন ও স্লোগানে মুখরিত ছিল রাবনাবাদ নদী এলাকা। প্রধানমন্ত্রী হাত নেড়ে নৌকায় থাকা জেলেদের শুভেচ্ছা জানান। প্রধানমন্ত্রী মোবাইল ফোনে নৌকা প্রদর্শনীর দৃশ্য ধারণ করেন।

রাবনাবাদ নদী মোহনায় সারিবদ্ধভাবে রাখা হয় নৌকা। এর মধ্যে ১০০ নৌকা ছিল পাল তোলা, ১০০ নৌকায় ছিল প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন। আর ২০টি নৌকায় ছিল নিরাপত্তা সদস্যরা। প্রতিটি নৌকায় রংবেরঙের পোশাকে চারজন করে মোট ৮৮০ জন জেলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ নর্থওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) মধ্যে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১ হাজার একর জমির ওপর নির্মিত পরিবেশবান্ধব এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.