মাইকেল মধূসূদন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদের উপর নির্মিত বাঁশের সাঁকোটি এখন মরন ফাঁদ
জীবনের ঝুকি নিয়ে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ, দাবী সেতু নির্মানের
রিজাউল করিম, সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি : মাইকেল মধূসূদন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদের উপর নির্মিত বাঁশের সাঁকোটি এখন মরন ফাঁদ। আর এই কপোতাক্ষ নদের ধারেই যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাড়ি গ্রামে মাইকেলের জন্মস্থান। মাইকেলের জন্মস্থানকে ঘিরে এখানে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের পর্যটন কেন্দ্র। যা থেকে সরকার মোটা অংকের টাকা রাজস্ব আদায় করে থাকেন। মাইকেলের জন্মস্থানকে দেখার জন্য প্রতিদিন দেশ বিদেশের/ বিভিন্ন জেলার হাজার হাজার পর্যটক এখানে প্রতিদিন ভিড় জমায়।
তারা এক নজর দেখতে আসেন সনেট কবি মাইকেলে জন্মস্থান ও তার স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদ। উপভোগ করেন নদের অপরুপ প্রকৃতিক সৌন্দর্য। আর এই কপোতাক্ষ নদের এক পাড়ে সাতক্ষীর জেলার তালা উপজেলার শার্শা গ্রাম ও বিপরীত পাড়ে যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাড়ি গ্রাম। অথচ দুই জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই কপোতাক্ষ নদের উপর নির্মিত একটি বাঁশের শাকো দিয়ে প্রতিদিন জীবনের ঝুকি নিয়ে স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। সরকারের কাছে স্থানীয়দের দাবী এই নদের উপর দ্রুত একটি সেতু নির্মান করে সাধারন মানুষের কষ্ট লাঘব করা।
শত বছর পেরিয়ে গেলেও দুই জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই কপোতাক্ষ নদের উপর নির্মিত হয়নি কোনো সংযোগ সেতু। ফলে দুই জেলার হাজার হাজার মানুষের দীর্ঘদিন ধরে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নদী পারপারে স্থাণীয় এলাকাবাসী জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় সেখানে ২৭৫ ফুট দীর্ঘ একটি বাঁশের সাঁকো নির্মান করে করে তার উপর দিয়ে রোদ বৃষ্টিতে জীবনের ঝুকি নিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। এই সাঁকো যেন এখন মরণ ফাঁদ হয়ে দাড়িয়েছে। প্রতিদিন দুই জেলার হাজার হাজার মানুষসহ দেশ বিদেশের পর্যটকরা এই নদের উপর নির্মিত বাঁশের সাকো জীবনের ঝুকি নিয়ে পার হয়ে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন, অপরদিকে তারা তাদের দৈনন্দিন ব্যবসা বাণিজ্যসহ নানা কাজে এই সাকো পারাপার হচ্ছেন। এই অবস্থায় মাইকেল মধুসুদন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত এই কপোতাক্ষ নদের ওপর একটি পাকা সেতু নির্মানের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, বর্তমান সরকার প্রান্তিক পর্যায়ে রুট লেবেলে ব্যাপক উন্নায়ন করছে, মাইকেল মধুসুদন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত এই কপোতাক্ষ নদের ওপর একটি পাকা সেতু নির্মানের জন্য দ্রুত সরকারের নজরে আনার ব্যবস্থাসহ দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হবে। দৃষ্টি আকর্ষন : কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে ১৮২৪ সালের ২৪ জানুয়ারী এক ধনার্ঢ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশবও এখানেই কাটে। এখানে রয়েছে তার ব্যবহার করা কয়েকটি ভবন, পুকুরঘাট এবং কবির নানা স্মৃতিবিজড়িত জিনিসপত্র যা নিয়ে বর্তমানে একটি জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে। যশোর শহর থেকে মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৪৫ কিলোমিটার। ১৮৩০ সালে এই বাড়ী ছেড়ে কলকাতার খিদিরপুর চলে যান কবি।
১৮৬২ সালে কলকাতায় থাকাকালীন সময়ে তার মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে স্ত্রী-পুত্র, কন্যাকে নিয়ে নদীপথে তিনি আবারো চলে আসেন সাগরদাঁড়িতে। যখন তিনি সপরিবারে এখানে এসেছিলেন তখন ধর্ম পরিবর্তনের কারণে তার জ্ঞাতিরা তাকে এই বাড়িতে উঠতে দেননি। পরে তিনি কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী এক কাঠবাদাম গাছের তলায় তাঁবু খাটিয়ে ১৪ দিন ধরে অবস্থান করেছিলেন। কবি এ সময় কপোতাক্ষ নদের পাড়ে বসে লিখেছিলেন তার জীবনের অনেক কবিতা। এর পর বিফল মনে সেখান থেকেই কলকাতায় চলে যান। এর পর কোনোদিন তিনি আর এ বাড়িতে ফিরে আসেননি।