পুলিশ বাহিনী নিয়ে প্রথম জাদুঘর
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দেশে প্রথমবারের মতো লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা থানা চত্বরে গতকাল যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ পুলিশ জাদুঘর।লালমনিরহাট জেলার তিস্তাঘেঁষা হাতীবান্ধা উপজেলায় যাত্রা শুরু করল পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে দেশের প্রথম জাদুঘর। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশ পুলিশ জাদুঘর’। লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের পাশে হাতীবান্ধা থানা চত্বরে ১৯১৬ সালে নির্মিত ঐতিহাসিক পুরনো থানা ভবনটিকেই রূপ দেওয়া হয়েছে জাদুঘরে। সেখানে নতুন থানা ভবন হলেও ভেঙে ফেলা হয়নি পুরনো ভবনটিকে।
সেটিকেই ঐতিহ্য হিসেবে রক্ষার পাশাপাশি রূপান্তরিত করা হয়েছে জাদুঘরে। জাদুঘরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। তিনি ফিতা কেটে ও ফলক উন্মোচন করে উদ্বোধনের পর জাদুঘরটি ঘুরে দেখেন। আইজিপি পরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘যাঁরা গবেষক, যাঁরা বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করেন বা যাঁরা ভবিষ্যতে পুলিশ বাহিনীতে কাজ করবেন, তাঁদের অন্যতম আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হবে এই জাদুঘর। ’
বাংলাদেশ পুলিশ জাদুঘরে রয়েছে মোট সাতটি গ্যালারি। ভবনে প্রবেশের মুখেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। জাদুঘরে বিভিন্ন যুগের পুলিশ বাহিনীর নানা স্মারক ও তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। গ্যালারিগুলোতে সুলতানি আমল থেকে শুরু করে মোগল আমল, ব্রিটিশ আমল ও তার পরবর্তী পর্বে ভারতীয় উপমহাদেশে পুলিশ বাহিনীর ক্রমবিকাশের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
১ নম্বর গ্যালারিতে রয়েছে সুলতানি ও মোগল আমল; ২ নম্বরে ব্রিটিশ আমল; ৩ নম্বর গ্যালারিতে রয়েছে স্বাধীনতাযুদ্ধ, ভারতীয় উপমহাদেশ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে পুলিশের অবদান; ৪ নম্বর গ্যালারিতে ডার্করুম; ৫ নম্বর গ্যালারিতে রয়েছে মুক্তাঞ্চলে মুক্তি পুলিশ; ৬ নম্বর গ্যালারিতে আছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী এবং ৭ নম্বর গ্যালারিতে রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ গ্যালারি ও পুলিশের আধুনিক কাল।
জাদুঘরের মূল ভবনের সঙ্গে রয়েছে পুলিশের ব্যবহৃত বিভিন্ন সময়ের যানবাহন। আর জাদুঘর চত্বরের অপর একটি টিনশেড ভবনে স্থাপন করা হয়েছে শিশু কর্নার। তাতে তুলে ধরা হয়েছে শিশুবান্ধব পুলিশিং বিষয়টি। জাদুঘরে সুলতানি আমলের পুলিশপ্রধান ‘মোহতাসিব’ থেকে শুরু করে বর্তমান পুলিশের বিভিন্ন পদ ভাস্কর্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। রয়েছে ব্রিটিশ আমলের পুলিশের ঢাল-বল্লম থেকে যুগে যুগে পুলিশ বাহিনীর ব্যবহৃত নানা অস্ত্র-সরঞ্জাম। জানা গেছে, নামমাত্র দর্শনীর বিনিময়ে এ জাদুঘর সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
সীমান্তবর্তী হাতীবান্ধা উপজেলায় দেশের প্রথম পুলিশকেন্দ্রিক জাদুঘর চালু হওয়ায় খুশি স্থানীয় অধিবাসীরা।
স্কুল শিক্ষক ও হাতীবান্ধা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের আহ্বায়ক রোকনুজ্জামান সোহেল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলে তৈরি ভবনটি ভেঙে না ফেলে সেখানে পুলিশ জাদুঘর স্থাপন সত্যিই আমাদের জন্য গর্বের। এতে মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতার অবদানসহ পুলিশ বাহিনীর বীরত্বের কথা সহজেই জানতে পারবে আগামী প্রজন্ম। ’ কলেজ শিক্ষার্থী সিহাব ইসলাম বলেন, ‘এই জাদুঘর থেকে আমরা পুলিশের অতীত ইতিহাস থেকে শুরু করে বর্তমানের নানা তথ্য জানতে পারব খুব সহজেই। ’
ভিন্নধর্মী এই জাদুঘরের পেছনে যাঁর ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ তিনি লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) আবিদা সুলতানা। সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। রাজধানী ঢাকার রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্যসচিব ছিলেন তিনি। সে সূত্রে এই কাজের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সালে ওই জাদুঘরের পরিচালকের দায়িত্বও নেন। ২০২০ সালে লালমনিরহাটের এসপি হিসেবে যোগ দেন তিনি। এখানে শতবর্ষ পুরনো একটি থানা ভবনকে ঘিরে তাঁর মাথায় আরেকটি জাদুঘর স্থাপনের চিন্তা দানা বাঁধে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে সেই চিন্তারই সফল বাস্তবায়ন হলো গতকাল বুধবার।
কালের কণ্ঠকে আবিদা সুলতানা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় পুলিশের অনেক বড় ভূমিকা ছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে রাজারবাগে পুলিশই প্রথম বুলেট ছুড়েছিল। এসব প্রেরণা থেকেই পুলিশ জাদুঘর স্থাপনের কাজ শুরু করেছিলাম। রাজারবাগে পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের কাজে যেহেতু আমি সম্পৃক্ত ছিলাম, তাই এ কাজ করতে অনেক সুবিধা হয়েছে। ’
রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদকসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত আবিদা সুলতানা আরো বলেন, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী হাসর উদ্দিন বিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের ৬ নম্বর সেক্টরের হেডকোয়ার্টার ছিল। সে সময় প্রয়াত সংসদ সদস্য আবেদ আলীর নেতৃত্বে পাটগ্রামের পুলিশ মুক্তি পুলিশ হিসেবে কাজ করেছে। তাই নতুন প্রজন্মের জন্য এ জেলায়ই জাদুঘর নির্মাণ খুব জরুরি বলে মনে করেছিলেন তিনি।