মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের কক্ষের অংশ ভেঙে জানালা নির্মাণের অভিযোগ; মিশ্র প্রতিক্রিয়া
পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার ফরিদপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের কক্ষের অংশ ভেঙে জানালা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। পক্ষে বিপক্ষে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে নেই কোনো জানালা। ভাড়া নেয়া ক্লিনিকের রোগীদের সুবিধার্থে জানালা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। তবে বিষয়টি মুল নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে দাবি করে ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন একজন স্থানীয় বাসিন্দা।
লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, সারাদেশের মতো ফরিদপুর পৌর সদরের তেতুলতলা এলাকায় নির্মাণ করা হয় তিনতলা বিশিষ্ট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স। ২০২০ সালের ১ অক্টোবর আল মদিনা ল্যাব এন্ড হসপিটাল নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালকে তিন বছরের জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় তলা ভাড়া দেয়া হয়। সম্প্রতি দ্বিতীয় তলার তিনটি কক্ষের জানালা না থাকায়, সেখানে জানালা নির্মাণের জন্য ভবনের অংশ ভেঙে ফেলা হয়। এ নিয়ে শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা। স্থানীয় বাসিন্দা ও মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
অভিযোগকারী ফরিদপুর উপজেলার খাগরবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা হাফিজ সরকার বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ক্লিনিক ভাড়া দেয়া হয়েছে। ওই ক্লিনিকের সুবিধার জন্য জাতীয় স্থাপনা ভেঙে নতুন করে জানালা নির্মাণ করা হচ্ছে। যা ভাড়া দেয়ার চুক্তিপত্র বহির্ভূত কাজ ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণের নীতিমালা পরিপন্থি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
আল মদিনা ল্যাব এন্ড হসপিটালের পরিচালক রওশন আলী বলেন, আমরা ভাড়া নিয়েছি। রোগীদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে জানালা নির্মাণের জন্য মুক্তিযোদ্ধা নেতৃবৃন্দ ও ইউএনওকে প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম। তারাই কাজ করছেন। এখানে আমাদের কোনো বিষয় নয়।
এ বিষয়ে ফরিদপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার মনজুর মোর্শেদ সেলিম বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণের নকশায় ভবনের কোনো কক্ষে জানালা বা ভেন্টিলেটর নেই। প্রচন্ড গরমে আলো বাতাস না ঢোকায় হাঁসফাঁস করতে হয়। রোগীদের সুবিধার্থে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে প্রস্তাবনা দেয় জানালা করার জন্য। আমরা বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার ইউএনওকে জানাই। তিনি আশপাশের উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন একই চিত্র। সব কমপ্লেক্সে জানালা নতুন করে নির্মাণ করে নিতে হয়েছে। সেইজন্য এখানেও জানালা নির্মাণ করা হচ্ছে। কোনো নকশা পরিবর্তন বা নীতিমালার পরিপন্থি কিছু নেই। একটি চক্র নিজেদের ক্লিনিকে রোগী না পেয়ে ঈর্ষান্বিত হয়ে ষড়যন্ত্রমুলক এসব মিথ্যা অপবাদ ছড়ানোর চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ফরিদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার জেসমিন আরার মুঠোফোন নাম্বারে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি তাঁর। অভিযোগ রয়েছে, গত তিনদিন ধরে তিনি স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীসহ কারো ফোন কল ধরছেন না।
জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, এরকম একটি খবর আমি পেয়েছি। জানার পর ফরিদপুর ইউএনওকে নির্দেশ দিয়েছি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। কারণ, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের কোনো অংশ ভাঙা বা পরিবর্তন করা যাবে না। এটি সরকারি ভবন। আর ভবন ভেঙে জানালা করার কোনো অনুমতিও নেয়া হয়নি।