দল-মত নির্বিশেষে সব গৃহহীনকে নতুন ঘর দেব: প্রধানমন্ত্রী

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দল-মত নির্বিশেষে দেশের সব ভূমিহীন-গৃহহীন অসহায় মানুষকে পর্যায়ক্রমে নতুন ঘর করে দেওয়া হবে। তিনি বলেছেন, ‘দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সব নাগরিকের জীবন সুন্দর করা আমার দায়িত্ব। সবাইকে ঘর করে দেব, তাদের ঠিকানা দেব, জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেব। কারণ এই বাংলাদেশে দল-মতে হয়তো ভিন্নতা থাকতে পারে- তাতে কিছু আসে-যায় না। দেশটা তো আমাদের।’

বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে ভূমিহীন-গৃহহীন আরও ২৬ হাজার ২২৯টি পরিবারকে পাঁচটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ঘরগুলো হস্তান্তরের মাধ্যমে পঞ্চগড় ও মাগুরা জেলার সব উপজেলাসহ দেশের ৫২টি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে লক্ষ্মীপুরের রামগতি, বাগেরহাটের রামপাল, ময়মনসিংহের নান্দাইল, পঞ্চগড় সদর ও মাগুরার মহম্মদপুরে সরাসরি যুক্ত হন। শেখ হাসিনা বলেন, কারও কাছে যদি খবর থাকে যে দেশের একটি মানুষ ভূমিহীন-গৃহহীন আছে অবশ্যই জানাবেন। দল-মত নির্বিশেষে যে-ই গৃহহীন থাকবে আমরা তাদেরই ঘর করে দেব।

তিনি বলেন, ‘আমি যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার মানে বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব আমারই। মতে ভিন্নতা থাকতে পারে, আদর্শে ভিন্নতা থাকতে পারে কিন্তু তার পরও মানুষ মানুষই। প্রত্যেক মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে, সেটাই আমি চাই। আমার বাবার সেটাই শিক্ষা যে, এই দেশের মানুষকে আমি সুন্দরভাবে জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়ে যেতে চাই।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী সংকটের কথা তুলে ধরে দেশবাসীকে এখন থেকেই সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো একদিকে করোনা অন্যদিকে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার যুদ্ধ। আর এই যুদ্ধের সময় আমেরিকা রাশিয়ার ওপর স্যাংশন দিয়েছে। ফলে আমাদের সার ও খাদ্য কিনতেও সমস্যা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে শুধু বাংলাদেশ না, সারা বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ম্ফীতি বেড়েছে, খাদ্যের জন্য হাহাকার। উন্নত দেশগুলোতেও হাহাকার দেখা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে এখনও ভালোভাবে পরিচালনা করা যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের এখন থেকেই সতর্ক থাকতে হবে এবং সতর্কতামূলক পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি। সবাইকে অনুরোধ করব, বিদ্যুৎ, পানি ও জ্বালানির ব্যবহার সাশ্রয় করতে হবে। এক ইঞ্চি জমিও যেন পড়ে না থাকে, খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। যে যা পারেন কিছু একটা করেন, যেন নিজের খাবারের ব্যবস্থা নিজে করতে পারেন। এতে কারও কাছে হাত পেতে চলতে হবে না।

মুজিব জন্মশতবর্ষে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প গ্রহণের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আশ্রয়ণ মানুষের ঠিকানা। জীবন-জীবিকার একটি সুযোগ, বেঁচে থাকা, স্বপ্ন দেখা এবং তা বাস্তবায়ন করার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। এ দেশের কোনো মানুষ যেন ঠিকানাবিহীন না থাকে, তাদের জীবনটা যেন অর্থহীন হয়ে না যায়, তাদের জীবনটা যেন সুন্দর হয়, সেই লক্ষ্য নিয়েই এই উদ্যোগ সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধু নিয়েছিলেন। তাঁরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাঁর হাতে গড়া দেশে প্রত্যেক মানুষের জন্য অন্তত বসবাসের একটি জায়গা করে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই এই আশ্রয়ণ। আমরা চাচ্ছি বাংলাদেশে শতভাগ ভূমিহীন, গৃহহীনের পুনর্বাসন হবে। প্রত্যেক মানুষ তার ঠিকানা পাবে।

‘সরকারপ্রান বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যে অসহায় মানুষের জন্য ঘর নির্মাণে সম্পৃক্ত থাকায় বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ছিন্নমূল মানুষের ঠিকানা হয়েছে। এটা একটা মহৎ কাজ, মহৎ উদ্যোগ। কারণ একটা ঘর পাওয়ার পর মানুষের জীবন পাল্টে যায়। মানুষের মুখে যে হাসি, এটাই সব থেকে বড় পাওয়া জীবনের। এর থেকে বড় কিছু আর হতে পারে না।

দেশের ৫২টি উপজেলাকে গৃহহীন-ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আশা করি, ঠিক এভাবে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, প্রতিটি উপজেলাকেই আমরা ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত করতে পারব। প্রতিটি জেলার মানুষ তাদের একটি ঘর থাকবে, তাদের একটা স্থায়ী ঠিকানা থাকবে, তাদের একটা সুন্দর বাসস্থান থাকবে, তারা সুন্দরভাবে বাঁচবে। ইনশাআল্লাহ আমরা তা করে ফেলতে পারব। এটা আমি বিশ্বাস করি। আশ্রয়ণ প্রকল্পে যারা ঘর পেয়েছেন তাদের জন্য স্যানিটারি ল্যাট্রিন, বিদ্যুতের ব্যবস্থাসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওপর ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করেন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম সচিব আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.