১৫০ কোটি ডলার দেশে নিয়ে আসার নির্দেশ
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বৈদেশিক মুদ্রাবাজার তথা ডলার সংকট কাটাতে দেশের বাইরে আটকে থাকা ১৫০ কোটি ডলারের অপ্রত্যাবাসিত রপ্তানি আয় এবং ৮৮০ কোটি কোটি ডলারের আমদানি পণ্য দ্রুত দেশে আনার জন্য ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের নির্দেশনা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। এ ছাড়া প্রবাসী আয় বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে উদ্যোগ নেওয়ারও নির্দেশনা দেন তিনি। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে দেশের সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের বৈঠকে এসব নির্দেশ দেন তিনি।
প্রতি তিন মাস পরপর এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যা ব্যাংকার্স সভা নামে পরিচিত। নতুন গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর এটি ছিল আবদুুর রউফ তালুকদারের প্রথম ব্যাংকার্স সভা।
নতুন গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর এটি ছিল আবদুর রউফ তালুকদারের প্রথম ব্যাংকার্স সভা। সভায় চারটি বিষয় গুরুত্ব পায়। এগুলো হলো- বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সম্প্রতি সময়ে নেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পদক্ষেপ ও চলমান অস্থিরতা রোধে করণীয়, সিএমএসএমই ও ভোক্তা ঋণের সুদহারের সীমা, খেলাপিদের গণছাড় নিয়ে জারি করা ঋণ পুনঃতফসিলের মাস্টার সার্কুলার এবং কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতের জন্য চালু করা স্বল্প সুদের ২৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ডলার সাশ্রয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। ডলার সাশ্রয়ে আর কী পদক্ষেপ সেটি ব্যাংকারদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। এ সময় ব্যাংকারদের পক্ষ থেকেও ডলার সংকটের কথা তুলে ধরা হয়। তখন প্রত্যাবাসিত না হওয়া রপ্তানি বিলের ১৫০ কোটি ডলার দ্রুত দেশে আনার ওপর জোর দেন গভর্নর। অন্যদিকে ৮৮০ কোটি ডলারের আমদানি দায় পরিশোধ হলেও এখনো দেশে আসেনি। পণ্য সরবরাহ বাড়াতে এই পণ্য দ্রুত দেশে আনারও নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আমাদের আয়নার মতো। রিজার্ভকে একেবারে কমিয়ে ফেলা যাবে না। তাই ব্যাংকের এমডিদের আমরা বলেছি, রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রে আপনারা যেভাবে সহযোগিতা করবেন ঠিক একইভাবে অপ্রত্যাবাসিত রপ্তানি আয়ের অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে একই রকম সহযোগিতা করবেন। রেমিট্যান্স বাড়াতে আরও উদ্যোগ নিতে হবে।
গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণখেলাপিদের গণছাড় দিয়ে একটি নীতিমালা জারি করে। ওই নীতিমালায় বলা হয়, খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে আড়াই থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ অর্থ জমা দিলেই চলবে, আগে যা ছিল ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। এসব ঋণ পরিশোধ করা যাবে ৫ থেকে ৮ বছরে। আগে এ ধরনের ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ দুই বছর সময় দেওয়া হতো। বৈঠকে এই সার্কুলার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ব্যাংকাররা এর পক্ষে-বিপক্ষে মত তুলে ধরেন।
এই সার্কুলারের বিষয়ে মুখপাত্র বলেন, কোন গ্রাহককে পুনঃতফসিল সুবিধা দেওয়া হবে এবং কাকে দেওয়া হবে না এটার পুরোপুরি দায়িত্ব এখন ব্যাংকের ওপর। কোনো দায়িত্ব এখন আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক নেবে না। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে যদি কোনো অনিয়ম ধরা পড়ে, তাহলে কোনোরকম ছাড় দেওয়া হবে না বলে ব্যাংকারদের জানানো হয়েছে।
বৈঠক শেষে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আরএফ হোসেন বলেন, আগের পদ্ধতির চেয়ে নতুন নীতিমালা অনেক ভালো। কারণ নতুন নীতিমালার মাধ্যমে ঋণ পুনঃতফসিলের পুরো দায় দায়িত্ব ব্যাংকের ওপর দেওয়া হয়েছে। ফলে খেলাপি ঋণের সব দায়ও ব্যাংকের ওপরই বর্তাবে। এই সার্কুলারের মাধ্যমে ঋণ পুনঃতফসিল প্রক্রিয়া আরও সুষ্ঠু হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বৈঠকে ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে সিএমএসএমই ও ভোক্তা ঋণের সুদহারের সীমা তুলে দেওয়ার দাবি জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, এখনই ঋণের সীমা তুলে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে না। এজন্য সিএমএসএমই খাতে আরও স্বল্প সুদে ২৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল দেওয়া হয়েছে।