বঙ্গমাতার সিদ্ধান্ত স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করেছে
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে বঙ্গমাতার নেপথ্য ভূমিকা তুলে ধরে বলেছেন, প্রধান রাজনৈতিক ইস্যুতে বঙ্গমাতার সিদ্ধান্ত দেশের স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করেছে।
গতকাল সোমবার সকালে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন এবং ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক-২০২২’ প্রদান উপলক্ষে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ও ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর ক্ষেত্রে আমার মা যখন যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, সেটাই কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে সবচেয়ে সহায়ক হয়েছে; যেহেতু আমার আব্বা মনেপ্রাণে দেশের কাজ করতে পেরেছিলেন। ’
তিনি বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন, তখন বঙ্গমাতা ছয় দফা দাবির সঙ্গে আরো দুটি দফার প্রস্তাবিত অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে সাহসী পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশের অভ্যুদয় অসম্ভব ছিল।
সরকারপ্রধান বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচার চলাকালে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে মুক্তি মেনে নিতে ইচ্ছুক ছিলেন—এমন একটি ধারণার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন বঙ্গমাতা, যিনি তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি চেয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আব্বা যদি প্যারোলে চলে যান তখন আর আন্দোলন-সংগ্রামের কিছুই থাকত না। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাও প্রত্যাহার হতো না। ’শেখ হাসিনা বলেন, ‘সার্জেন্ট জহুরুল হককে হত্যা করা হয়েছিল, বাকি যে আসামি সবাইকে তারা মৃত্যুদণ্ডই দিত। কেউ আর বেঁচে থাকতে পারত না এবং বাংলাদেশও আর স্বাধীনতার মুখ দেখত না। জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ প্রদানের ক্ষেত্রেও বহু নেতার নানা মতামত উপেক্ষা করে আমার মায়ের মতামতটাই গুরুত্ব পেয়েছে। ’
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পদক বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেন এবং সভাপতিত্ব করেন। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক বঙ্গমাতার জীবনীর ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর লেখা ‘শেখ ফজিলাতুন নেছা আমার মা’ শীর্ষক একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন। তিনি ঢাকায় কর্মজীবী নারীদের জন্য ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ অত্যাধুনিক ১০ তলা হোস্টেলও উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতার জীবনীভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
শুধু স্বাধীনতাসংগ্রাম নয়, বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি কাজে তাঁকে বঙ্গমাতা সহযোগিতা করতেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গমাতার আদর্শ নিয়ে ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে বাংলাদেশের নারীসমাজ যেন মানুষের কল্যাণে কাজ করে, সেই আহ্বানও জানান।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমার বাবা রাজনীতি করতেন, অর্থাৎ রাজনীতির কাজ যেহেতু তিনি এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য, তাদের অধিকার আদায়ের জন্য করে যাচ্ছেন, সেটা উপলব্ধি করেই আমার মা সব সময় পাশে থেকে অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন। একজন স্ত্রী হিসেবে কোনো কিছু দাবি তো করতেনই না বরং আমার বাবার যা কিছু প্রয়োজন ছিল, সেট তিনিই দেখতেন। ’
দেশ পরিচালনায় জাতির পিতাকে দেওয়া সহযোগিতার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের একটা চরিত্র আছে, সরকারে কেউ থাকলে তার আশপাশে যারা থাকে, তারা দেশের সার্বিক পরিস্থিতিটা খুব সুন্দরভাবে দেখাতে চেষ্টা করে। ’
প্রধানমন্ত্রী চুয়াত্তর সালের দুর্ভিক্ষকে মনুষ্যসৃষ্ট আখ্যায়িত করে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের উল্লেখ করে সে সময়কার একটি ঘটনার উদাহরণ টানেন।
তিনি বলেন, তখন চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে। তাঁর মায়ের সবার সঙ্গে একটা যোগাযোগ ছিল। ঢাকা শহরের বা বাংলাদেশের কোথায় কী হচ্ছে সে খবরটা তিনি জানতেন। যখন চালের দাম বেড়ে গেল তাঁর মা নিজেই বাবাকে বললেন, চালের দাম কিন্তু বেড়ে যাচ্ছে। সে সময় অফিসে গিয়ে জাতির পিতা যে খবর নিলেন তাতে চালের যে দাম আসে, তা শুনে বঙ্গমাতা বললেন—জাতির পিতাকে সঠিক তথ্য দেওয়া হয়নি। তাঁর বক্তব্য প্রমাণ করার জন্য তখন বঙ্গমাতা ওই দামে এক মণ চাল কিনে দিতে বললে বাস্তবিক অর্থে সে দামে বাজারে আর চাল পাওয়া গেল না।
‘এরা সব সময় তোমাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে, তুমি এদের বিষয়ে সতর্ক থাকবে,’ এই পরামর্শ তাঁর মা বঙ্গমাতা তখন জাতির পিতাকে দিয়েছিলেন বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার আব্বার খুব সৌভাগ্য ছিল যে আমার মায়ের মতো একজন জীবনসাথি পেয়েছিলেন। ’
বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক পেলেন ৫ নারী । বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য পাঁচ বিশিষ্ট নারীকে গতকাল ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক-২০২২’ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
যে পাঁচ নারী রাষ্ট্রের এই সর্বোচ্চ সম্মাননা পেলেন তাঁরা হলেন রাজনীতির ক্ষেত্রে সৈয়দা জেবুন্নেছা হক (সিলেট), অর্থনীতিতে সেলিমা আহমাদ এমপি (কুমিল্লা), শিক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপচার্য অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ, সমাজসেবা ক্ষেত্রে মোছা. আছিয়া আলম (কিশোরগঞ্জ) এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে গোপালগঞ্জ জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আশালতা বৈদ্য (মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার)।
সম্মাননাপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ১৮ ক্যারেটের ৪০ গ্রাম ওজনের সোনার মেডেল, চার লাখ টাকার চেক এবং একটি সম্মাননা সনদ দেওয়া হয়েছে।
বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা পাঁচ বিশিষ্ট নারীকে গতকাল ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক-২০২২’ প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।