মধুমতীতে ছয় লেন কালনা সেতু উদ্বোধন সেপ্টেম্বরে
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার সড়কপথে যোগাযোগের জন্য নির্মিত কালনা সেতু আগামী সেপ্টেম্বর মাসে উদ্বোধন হতে পারে। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মধুমতী নদীতে দেশের প্রথম ছয় লেন কালনা সেতুতে রোড মার্কিংয়ের কাজ চলছে। এ মাসেই নির্মাণকাজ শেষে যানবাহন চলাচলের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করা হবে বলে জানান সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক। বদলে যাবে নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পর্যটন, কৃষি ও অর্থনীতি। নড়াইল ও গোপালগঞ্জকে বিভক্তকারী নদী মধুমতীর কালনা পয়েন্টে এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৯৫৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, সেতুতে যত ধরনের অবকাঠামো তৈরির কাজ ছিল, তার সবই করা হয়েছে। এখন ছোটখাটো যেসব কাজ রয়েছে সেগুলো করছি। রোড মার্কিং দেওয়া হচ্ছে, এটা প্রায় শেষের দিকে। ‘গতিসীমা’ সংকেত দেওয়া হচ্ছে। পেইন্টিংয়ের কাজও হয়ে গেছে। নির্মাণ-পরবর্তী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাও আমরা শুরু করে দিয়েছি। সামান্য যে কাজ বাকি আছে তা আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে যাবে। মূল সেতুর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৯৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। সেতুর মাঝখানে বসানো হয়েছে ভিয়েতনামে তৈরি বিশ্বের সর্ববৃহৎ ১৫০ মিটার দীর্ঘ নেলসন লস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) স্টিলের স্প্যান।
জাপানের নিপ্পন কোম্পানির তৈরি ধনুকের মতো বাঁকা এ স্প্যানটি ছয় লেনের এ সেতুকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে এ সেতু হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাপানের টেককেন করপোরেশন ও ওয়াইবিসি এবং বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে এ সেতুর বাস্তবায়ন করছে। সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, এ সেতু নির্মাণে ৭০ একরের বেশি জমি অধিগ্রহণের পর ২০২০ সালের ১৫ মে বাস্তবায়ন শুরু হয়। কপার ড্যাম পদ্ধতিতে নদীর তলদেশে পাইলিং করে স্থাপিত মোট ১২টি পিলারের উপরে সেতুটি দৈর্ঘ্যে ৬৯০ মিটার ও প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। ১৫০ মিটার স্টিলের ধনুকের মতো বাঁকা স্প্যানটির উভয় পাশের অন্য স্প্যানগুলো পিসি গার্ডারের (কংক্রিট)। সেতুতে মোট এবাডমেট রয়েছে দুটি, ১৩টি স্প্যান এবং ১৬০টি গার্ডার। সেতুর উভয় পাশে ৪ দশমিক ২৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৩০ দশমিক ৫০ মিটার প্রস্থ সংযোগ সড়ক রয়েছে। ছয় লেনের এ সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। সওজ বিভাগ ও পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা জানায়, এশিয়ান হাইওয়ে-১ এর অংশ ছয় লেনের দৃষ্টিনন্দন এ সেতু চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। নড়াইল, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বেনাপোল, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরবাসী মাগুরা-ফরিদপুর হয়ে যাতায়াতের পরিবর্তে সরাসরি কালনা সেতু পার হয়ে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকাগামী যানবাহন যাতায়াত সহজ ও পথ সংক্ষিপ্ত হবে। এ ছাড়া স্থলবন্দর বেনাপোলের আমদানি-রপ্তানি পণ্যাদি পরিবহণেও এই সেতু ব্যবহার করা যাবে। তখন ঢাকার সঙ্গে নড়াইলের দূরত্ব হবে মাত্র ১২৫ কিলোমিটার অর্থাৎ কমে যাবে ১৮০ কিলোমিটার। জানা গেছে, নড়াইলের কালনা এলাকায় মধুমতী নদীর তীরে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণের একটি প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন।
শিগগিরই এ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ দৃশ্যমান হবে। ফলে এখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করবেন। এদিকে কালনা সেতু চালুতে জেলার উদ্যোক্তারা আগে থেকেই বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন যাতে করে সেতু উদ্বোধনের পরপরই এর সুফল পাওয়া যায়। সম্প্রতি নড়াইল-যশোর আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে নড়াইল অংশে জমির দাম বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। ইতোমধ্যে বেঙ্গল গ্রুপ, কিষান গ্রুপসহ কয়েকটি কোম্পানি জমি কিনেছে। নড়াইল অংশে গড়ে উঠেছে কয়েকটি কলকারখানা। নড়াইল সদরের ধোপাখোলা এলাকায় মহাসড়কের পাশে ৩৫০ একর জমিতে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তুলতে অধিগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনসংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) নড়াইল জেলা কর্তৃপক্ষ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নড়াইল কার্যালয়ের উপপরিচালক (ডিডি) দীপক কুমার রায় জানান, কালনা সেতু চালু হলে কৃষি পরিবহণ ও বিপণন সহজ হবে। চাঙা হবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। এর সুফল পাবে নড়াইলের কৃষক, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, কালনা সেতু চালু হলে ঢাকা থেকে নড়াইলের দূরত্ব হবে মাত্র ১১৩ কিমি.। কালনা সেতু চালু পরবর্তী আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট রাতারাতি পরিবর্তন হবে। ফরেন ইনভেস্টমেন্ট হবে, বিশেষ করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এখানে হচ্ছে। জেলা শহরের অদূরেই বিসিক শিল্পনগরী হতে যাচ্ছে। এসবের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন হতে যাচ্ছে।