ডলার সঙ্কটে বিশেষ ছাড় ব্যবসায়ীদের জন্য
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বৈদেশিক মুদ্রা নীতিমালা শিথিল: রফতানি আয় হাতে রাখার সময় বৃদ্ধি আমদানি দায় পরিশোধে আন্তঃব্যাংক লেনদেনের অনুমোদন । ডলারের আন্তঃপ্রবাহের তুলনায় বহিঃপ্রবাহ বেশি হওয়ায় বেশির ভাগ ব্যাংকের ডলার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আর এ কারণে গ্রাহকের আমদানি দায় যথাসময়ে পরিশোধ করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। আবার অনেক বেশি দামে ডলার কিনে কম দামে বিক্রি করে মুদ্রার বিনিময়জনিত লোকসানও গুনতে হচ্ছে কিছু কিছু ব্যাংকের। শুধু ব্যাংকই নয়, গ্রাহকও বিশেষ করে রফতানিকারকরা রফতানির আয়ের মাধ্যমে অর্জিত বিদেশী মুদ্রা কম দামে বিক্রি করে পণ্য আমদানি ব্যয় মেটাতে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এতেও লোকসানের মুখে পড়ছেন তারা।
এমনি পরিস্থিতিতে ডলার সঙ্কট মেটাতে গ্রাহকদের রফতানি আয়ের একটি অংশ হাতে রাখার সুযোগ বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে রফতানিকারকরা রিটেইনশন কোটার অর্থ ১৫ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিন নিজেদের কাছে ধরে রাখতে পারবেন। পাশাপাশি আমদানি দায় পরিশোধে এক ব্যাংকের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে অন্য ব্যাংকের আমদানি দায় পরিশোধে সুযোগ দেয়া হয়েছে। প্রচলিত বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের নীতিমালা শিথিল করে গতকাল ব্যাংকগুলোর জন্য এমনই এক নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ দিকে ব্যাংকগুলোর ডলার সঙ্কটের কারণে প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে কিছু ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দেয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে গতকাল পর্যন্ত এভাবে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের জোগান দেয়া হয়েছে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে শুরু করেছে। আজ বুধবার এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় পরিশোধ করতে হবে ১৭৩ কোটি ১০ লাখ ডলার। আর এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাড়ে ৩৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে যেতে পারে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলো বিদেশ থেকে রেমিট্যাান্স আহরণ করতে প্রতি ডলারের জন্য ১০৫ টাকা থেকে ১১২ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করছে। কিন্তু রফতানিকারকদের কাছ থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে অর্থাৎ প্রতি ডলার ১০০ টাকার নিচে সংগ্রহ করছে। বৈদেশিক বিভিন্ন দরে ডলার কিনে ব্যাংকগুলো সমন্বয় করছে। ফলে আমদানিকারকদের কাছে ব্যাংকগুলো নগদ ডলার বিক্রি করছে ১১০ টাকা থেকে ১১৫ টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো যে ব্যাংকের মাধ্যমে পণ্য রফতানি করবে ওই ব্যাংকের কাছেই ডলার বিক্রি করতে হবে। অন্য ব্যাংকের মাধ্যমে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুললে এলসির দায় ডলার কিনে মেটাতে হবে। এক দিকে রফতানি আয় কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে, অপর দিকে পণ্য আমদানির জন্য বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। এভাবে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়জনিত লোকসান গুনতে হচ্ছে রফতানিকারকদের।
ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বিদ্যমান বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের নীতিমালা শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, রফতানিকারকরা এক ব্যাংকের মাধ্যমে পণ্য রফতানি করে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে অন্য ব্যাংকের মাধ্যমে পণ্য আমদানির জন্য এলসির দায় পরিশোধ করতে পারবেন। এর ফলে ব্যবসায়ীদের নিজস্ব তহবিল দিয়েই আমদানি বিল পরিশোধ করতে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়জনিত লোকসানের মুখে পড়তে হবে না।
অপর দিকে রফতানিকারকরা রফতানির মাধ্যমে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করে তার পুরোটাই বিক্রি করে না বা ব্যবহার করে না। বিদেশে পণ্য পরিবহনের জন্য জাহাজ ভাড়া, পরামর্শক ব্যয় ইত্যাদি মেটানোর জন্য রফতানি আয়ের ১০ শতাংশ নিজেদের কাছে ধরে রাখতে পারে। এটাকে ব্যাংকিং ভাষায় রিটেইনশন কোটা বলে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান নির্দেশনায় শর্ত ছিল, এ অর্থ রফতানিকারকরা ১৫ দিনের বেশি নিজেদের কাছে ধরে রাখতে পারবেন না। এর মধ্যে নিজেরা ব্যবহার করতে না পারলে দেশে আনতে হবে। কিন্তু এ অর্থ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যবহার করতে না পারলে অপেক্ষাকৃত কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু ২০ দিনের মাথায় নিজেদের পণ্য আমদানি দায় পরিশোধ করতে হলে বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিদ্যমান নীতিমালাও শিথিল করেছে। এখন রিটেইনশন কোটা বৈদেশিক মুদ্রা ১৫ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিন পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা নিজেদের কাছে ধরে রাখতে পারবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ডলার সঙ্কট মেটাতে ও এর সরবরাহ বাড়াতে যতগুলো উৎস ছিল সবগুলোই ব্যবহার করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। এ কারণে রিটেইনশন কোটার ডলার দেশে আনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কড়াকড়ি করেছিল। এখন তা আবার শিথিল করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনেই এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এর ফলে কিছু কিছু ব্যাংকের ডলার সঙ্কট আরো বেড়ে যাবে। কারণ রফতানিকারকরা ইচ্ছামাফিক এক ব্যাংকের মাধ্যমে পণ্য রফতানি করবেন, আর অন্য ব্যাংকের মাধ্যমে পণ্য আমদানির জন্য ডলার ব্যবহার করবেন। এতে ব্যাংকগুলোর আয় হাতছাড়া হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা।