পাবনা মানসিক হাসপাতালে রোগী ভর্তি বন্ধ!
নিজস্ব প্রতিনিধি : ১২৫ টাকায় তিন বেলা খাওয়া ! তাও আবার বাঁকিতে। মামলা জটিলতায় টেন্ডার না হওয়ায় খাবার সরবরাহের অনিশ্চয়তার কারণে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত রোগী ভর্তি বন্ধ করেছে হাসপাতাল কর্তপক্ষ। রোগীদের পর্যায়ক্রমে বাড়ীতে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কনসালটেন্ট ও ওয়ার্ড ডাক্তারদের নির্দেশ।
আজ রবিবার ১১ সেপ্টেম্বর পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা : রতন কুমার রায় স্বাক্ষরিত এক আদেশে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রোগী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।
অফিস আদেশে বলা হয়েছে আদালত কর্তৃক অত্র হাসপাতালের টেন্ডার কার্যক্রমের উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারী করায় টেন্ডার কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হয় নাই। যাহার দরুন রোগীদের পথ্য সরবরাহের জন্য ঠিকাদার নিযুক্ত হয় নাই। ভর্তি রোগীদের পথ্য/খাবার সরবরাহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একাধিকবার বার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পত্র মারফত এবং সরাসরি অবহিত করা হইয়াছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ভর্তি রোগীদের পথ্য/খাবার সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ বা নির্দেশনা প্রদান না করায়, রোগীদের পথ্য/খাবার সরবরাহ চলামান রাখা সম্ভব হইতেছে না। পূনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত অত্র হাসপাতাল বহি: বিভাগে রোগী ভর্তি বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করা হইল। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের পর্যায়ক্রমে বাড়ীতে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কনসালটেন্ট ও ওয়ার্ড ডাক্তারদের নির্দেশ প্রদান করা হইল।
উল্লেখ গত ১৪ জুন ২০২১ রোজ এন্টারপ্রাইজ নামে পাবনা মানসিক হাসপাতালে রোগীদের খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে দ্রব্যের নাম উল্লেখ করা জটিলতা নিয়ে পাবনা জজ কোর্টে একটি মামলা দায়ের করলে আদালত ২৯ জুন ২০২১ আদালত সার্বিক বিবেচনায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিবাদীর বিরুদ্ধে অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা জারী করলে শুরু হয় জটিলতা।
তখনকার বিবাদী হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা: আবুল বাসার মো : আসাদুজ্জামান আদালতের নিষেধাজ্ঞার একদিন আগে ২৮ জুন উক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কে নিয়ম বহির্ভূতভাবে খাবার সরবরাহ বর্ধিত করেন যা কার্যকর হয় ০১/০৭/২০২১ ইং তারিখ থেকে ৩০ জুন ২০২২ পর্যন্ত। যা তিনি আদালতের নিষেধাজ্ঞার আগে কোনভাবেই পারেন না। জনমনে প্রশ্ন তাহলে কি তিনি আগে জানতেন আদালত নিষেধাজ্ঞা দেবেন।
মামলার বিষয়ে জানতে রোজ এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকার এ.এইচ.এম ফয়সাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোন কল গ্রহণ না করার জন্য মন্তব্য জানা সম্ভব হয় নাই ।
এ বিষয়ে হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা: আবুল বাসার মো : আসাদুজ্জামান বলেন আমি এখন অবসরে আছি আগে কি হয়েছে বলতে পারব না বলে ফোন কেটে দেন ।
হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা: রতন কুমার রায় বলেন বিষয়টি সমাধানের জন্য আমরা বার বার উধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্নভাবে জানানোর পরও কোন সমাধান হচ্ছে না। বিধায় কঠিন সিদ্ধান্ত হলেও আমরা ১১ সেপ্টেম্বর থেকে বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নতুন রোগী ভর্তি করা বন্ধ রাখছি। আমরা চাই দ্রুত বিষয়টি সমাধান হোক।
৩০ জুন ২০২২ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বর্ধিত খাবার সরবরাহের মেয়াদ শেষ হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডা: এ কে এম শফিউল আযম কে স্থানীয় ক্রয় ও বাজার দর যাচাই কমিটির সভাপতি করে ৭ সদস্যের কমিটি করে রোগীদের খাবার সরবারহ করার আদেশ দেন ২৯ জুন ২০২২ যা কার্যকর হয় পহেলা জুলাই ২০২২ তারিখ থেকে। যা চলমান এখন পর্যন্ত রয়েছে।
ডা: এ কে এম শফিউল আযম জানান সরকারী বিধি অনুযায়ী নগদ ক্রয়ের ক্ষেত্রে অনধিক ২৫ হাজার টাকা, বছরে অনধিক ১০ লাখ টাকার বেশি খরচ করা যাবে না, সেখানে প্রতি মাসে ৫০০ রোগীকে খাওয়াতে খরচ হচ্ছে প্রায় ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। তাও আবার বাঁকিতে , যদি বাঁকি প্রদান করা প্রতিষ্ঠান/দোকানদারেরা বাঁকি দেওয়া বন্ধ করে দেয় তাহলে কি হবে, কিভাবে খাওয়াব রোগীদের প্রশ্ন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে । আমরা দ্রুত এই জটিলতা থেকে বের হতে চাই, আশা করি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সমাধান করবেন ।
সরেজমিনে হাসপাতালের আউটডোরে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন জেলা থেকে মানসিক রোগী নিয়ে আসা মানুষের ভোগান্তির চিত্র ।
কুষ্টিায়ার কুমারখালী থেকে মো: মোবারক হোসেন জানান তার মেয়ে রেয়া (২০) কে হাসপাতালে ভর্তি করতে এসে জানতে পারেন রোগী ভর্তি বন্ধ রয়েছে । তিনি জানান এত কষ্ট করে এসে যদি রোগী ভর্তি করতে না পারি তাহলে এর চেয়ে কষ্টের আর কি থাকতে পারে ।
গাজিপুর জেলার শ্রীপুর থানার নালিয়াটেকি গ্রামের সিরাজ উদ্দিন তার ছেলে খোকন মিয়া (২৫) কে নিয়ে আসেন ১০ হাজার টাকা দিয়ে মাইক্রোবাস ভাড়া করে এসে জানতে পারলাম রোগী ভতি বন্ধ আছে, অনকে চেষ্টা করে রোগী ভর্তি করতে পারলাম না, কি করব এখন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি ।
গ্রামের মানুষের কাছে অনুদান নিয়ে ছেলেকে ভর্তি করতে ময়মনসিংহ থেকে এসেছেন আবুল হোসেন তার ছেলে সাদ্দাম হোসেন (৩২) কে নিয়ে, এসে দেখেন রোগী ভর্তি বন্ধ তাই হতাশা নিয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে বলে জানান।