বিদ্যুতে স্মার্ট গ্রিড ব্যবস্থা গড়ে তুলছে সরকার
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : লো-ভোল্টেজ, গ্রিড বিপর্যয়, ম্যানুয়াল ন্যাশনাল লোডডেসপাস সেন্টার (এনএলডিসি), ভুতুরে বিল, বকেয়া বিল ও বিদ্যুৎ চুরিসহ নানা জটিলতায় ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণব্যবস্থা। সেবা ও সরবরাহব্যবস্থা নিয়েও আছে বিস্তর অভিযোগ। এখনো শিল্পমালিকরা গ্রিডের বিদ্যুতে নির্ভরশীল হতে পারছেন না। এখনো তারা নিজস্ব বিদ্যুৎব্যবস্থায় (ক্যাপটিভ) নির্ভরশীল। বিতরণ কোম্পানিগুলো এখনো গ্রাহকদের ‘রিয়েল টাইম’ বিদ্যুৎ বিল দিতে পারছে না। সব কিছু মিলিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সবরাহব্যবস্থা বাড়লেও গ্রাহকসেবার মান এবং বিদ্যুতের শতভাগ সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়নি এখনো। ফলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়নের লক্ষ্যে স্মার্ট গ্রিড ব্যবস্থা বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের পরার্মশক প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন আমাদের সময়কে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউএস ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (ইউএসটিডিএ)’ ও ‘বোস্টন কনসাল্টিং
গ্রুপ (বিসিজি)’ স্মার্ট গ্রিড বাস্তবায়নের একটি কারিগরি (টেকনিক্যাল) প্রতিবেদন বানিয়ে সরকারকে দিয়েছে। স্মার্ট গ্রিড বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ বিভাগকে কী কী করতে হবে, সে বিষয়ে ওই প্রতিবেদনে পরামর্শ রয়েছে।
মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘ইউএসটিডিএ এবং বিসিজি একটি রোডম্যাপ দিয়েছে। আমরা তাদের বলেছি স্মার্ট গ্রিড ব্যবস্থায় যেতে সার্বিক সহায়তা করতে। এমনকি অর্থায়নের বিষয়ে তাদের বলা হয়েছে।’ বিদ্যুৎ বিভাগের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা প্রথমে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) সামগ্রিক ব্যবস্থা স্মার্ট গ্রিডের আওতায় আনতে কাজ করব।’
বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, ‘উন্নত দেশগুলো স্মার্ট গ্রিড ব্যবস্থাপনার মধ্যে আছে। এই ব্যবস্থাপনায় কোনো গ্রাহক তার ঘরের একটি লাইটও বন্ধ কিংবা চালু করলে সেটা সরাসরি গ্রিডে প্রভাব ফেলবে। প্রতি সেকেন্ডে রিয়েল টাইম বিদ্যুতের চাহিদা এবং সরবরাহব্যবস্থা মনিটরিং করা সম্ভব। এলাকাভিত্তিক বিদ্যুতের চাহিদা ও ব্যবহার বিশ্লেষণ করা যাবে। সার্ভাররুম বা মনিটরিং সেন্টার থেকে অনলাইনে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু বা বন্ধ করা যাবে।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এখন এলএলডিসিকে নির্দেশ দেওয়া রয়েছে যাতে তারা খরচের হিসাব করে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু বা বন্ধ রাখে। অর্থাৎ যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনখরচ সবচেয়ে কম, সেই বিদ্যুৎকেন্দ্র যাতে আগে চালু রাখে। পিক টাইমে যদি বেশি চাহিদা থাকে, তখন প্রয়োজনে বেশি উৎপাদনখরচের বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করতে; কিন্তু সব ক্ষেত্রে এটা করে না এলএনডিসি। স্মার্ট গ্রিড ব্যবস্থায় সেটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় হবে। এ ছাড়া মিশ্র জ্বালানির বিদ্যুৎ উৎপাদনব্যবস্থায় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ক্রমান্বয়ে পরিবর্তনশীল বিশ্বে স্মার্ট গ্রিডে যাওয়ার বিকল্প দেখছে না বিদ্যুৎ বিভাগ। কারণ আমদানিনির্ভর বিদ্যুৎতের বিভিন্ন মেশিনারিজ বা ইকুইপমেন্ট অব্যাহতভাবে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার নির্ভর বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠছে। বাংলাদেশও বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিদ্যুৎব্যবস্থার আধুনিকায়নে কাজ করছে। সরকার ইতোমধ্যে জিআইএস বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ করছে। গ্রাহকদের স্মার্ট মিটারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। স্মার্ট মিটারের কারণে গ্রাহক স্মার্ট ফোন থেকে সার্বক্ষণিক তার বিদ্যুৎ ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারে। ম্যানুয়ালি মিটারিং ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া বিদ্যুতের দৈনন্দিন ব্যবহার্য লাইট, ফ্যান বা অন্যান্য ইকুপমেন্ট সেন্সোরাইজড করারও পরিকল্পনা রয়েছে।
ইউএসটিডিএ ও বিসিজির রোডম্যাপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখন ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। তবে ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি হলেও এখনো গ্রাহকের জন্য স্থিতিশীল বিদ্যুৎব্যবস্থা তৈরি করতে পারেনি। ফলে স্মার্ট গ্রিড ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি।
অন্যদিকে কারিগরি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্মার্ট গ্রিড ব্যবস্থায় স্থিতিশীল বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। উচ্চতর ফ্রিকুয়েন্সি সংকট, ট্রান্সমিশন লসসহ লোড ব্যবস্থা হবে সর্বাধুনিক। সাইবার সিকিউরিটি ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল তৈরি করা যাবে অনলাইনে। ‘নন টেকনিক্যাল’ লোকসান বন্ধ হয়ে যাবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, স্মার্ট গ্রিড ও জিআইএস প্রযুক্তি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করবে। স্মার্ট গ্রিড ও স্মার্ট মিটার বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে সহায়তা করবে। আমরা স্মার্ট গ্রিড ব্যবস্থাপনায় যাওয়ার কাজ শুরু করেছি। এখন দুই-একটি জায়গায় কাজ চলছে। ক্রমান্বয়ে সারাদেশ স্মার্ট গ্রিডের আওতায় আনা হবে।
প্রচলিত বিদ্যুৎ বিতরণব্যবস্থার সঙ্গে ডিজিটাল ও তথ্যপ্রযুক্তির সংযোগ ঘটিয়েই গড়ে তোলা হবে স্মার্ট গ্রিড ব্যবস্থা। এটা বিদ্যুৎ বিতরণব্যবস্থার সর্বশেষ প্রযুক্তি। বিতরণব্যবস্থায় ত্রুটি থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চিহ্নিত করার পাশাপাশি সম্ভাব্য সমাধানও জানিয়ে দেয় স্মার্ট গ্রিড।