ঐতিহ্যে ফিরছে রাজশাহীর রেশম
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : রাজশাহীর রেশম মানেই ঐতিহ্য। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে পছন্দের শীর্ষে এই রেশমপণ্য। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন তৈরি হচ্ছে রেশমের নানা পণ্যও।
বিশ্বের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া রাজশাহী রেশম কাপড়ের ওপর অ্যামব্রয়ডারি ও হাতের কাজের শাড়ি, থ্রিপিস, শার্ট এবং পাঞ্জাবি তৈরি করা হচ্ছে। বাদ যায়নি শিশুদের পোশাকও। এখন রেশম কাপড়ে তৈরি শিশুদের পোশাক-কাপড় ও ডিজাইনের মান উন্নয়নে কাজ করছে রেশম বোর্ডও।
কর্তৃপক্ষ বলছে, রাজশাহী তথা দেশের ঐতিহ্য রেশম। এটাকে ধরে রাখাসহ এর প্রসারে সবারই আগ্রহ থাকা দরকার। বিদেশি পণ্যের চেয়ে রাজশাহী রেশমের মান অনেক উন্নত, অনেক সুন্দর। তাই ক্রেতাদেরও রেশমের পোশাক পরার আগ্রহ বাড়াতে হবে।
রাজশাহী রেশম বোর্ডের সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ও রেশম কারখানার ইনচার্জ কাজী মাসুদ রেজা জানান, ১৬ বছর বন্ধ থাকার পর গত দুই বছর ধরে পুরোদমে চলছে রাজশাহীতে অবস্থিত দেশের একমাত্র সরকারি রেশম কারখানা। কারখানার ৪২টি লুমের মধ্যে বর্তমানে ২১টি চালু আছে। প্রয়োজনীয় সুতা উৎপাদন না হওয়ায় এখনো বন্ধ রাখা রয়েছে ২১টি লুম। বর্তমানে কারখানায় প্রতি মাসে প্রায় দেড় হাজার মিটার কাপড় উৎপাদন হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘কারখানায় এখন উৎপাদিত হচ্ছে নানা ডিজাইনের পোশাক। প্রতিনিয়ত বাড়ছে উৎপাদন। সুতার উৎপাদন বাড়াতে সম্প্রতি কারখানায় চালু করা হয়েছে রেশম গুটি প্রক্রিয়াজাত প্রকল্প। খুব শিগগিরই আরও লুম চালু করতে পারব।’
রাজশাহী রেশম বোডের্র পরিচালক এমদাদুল বারী বলেন, দেশে রেশম সুতার চাহিদা ৫০০ টন। উৎপাদিত হয় মাত্র ৪১ টন। তিনি বলেন, ‘আগামী ২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে ১০০ টন সুতা উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ জন্য বেশকিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ১০০ কোটি টাকার ওই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে চাহিদার চেয়ে বেশি সুতা উৎপাদন করা সম্ভব হবে। তখন হয়তো বিদেশেও আমরা সুতা রপ্তানি করতে পারব।’
এমদাদুল বারী বলেন, ‘আমাদের দেশে যে সুতা উৎপাদন হয় তার বৈশিষ্ট্য অনন্য। অন্য কোনো দেশের রেশমের সঙ্গে এটার কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের রেশম সুতার মান অন্য দেশের চেয়ে অনেক উন্নত।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে যে রেশম উৎপাদন হয় তা রাজশাহী রেশম হিসেবে ভৌগোলিক নিদর্শনের সনদ পেয়েছি আমরা। রাজশাহী রেশম বিশ্বে অনন্য রেশম হিসেবে পরিচিত। ফলে রাজশাহীর রেশম সুতা বিদেশে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হয়েছে। আশা করছি আগামীতে আমরাও রেশম সুতা বিদেশে রপ্তানি করব।’
প্রসঙ্গত ১৯৫২ সালে সরকারিভাবে রাজশাহীতে রেশম উৎপাদন শুরু হয়। কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬১ সালে। ১৯৭৮ সালে কারখানাটি বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের হাতে হস্তান্তরিত হয়। এরপর লোকসানের মুখে ২০০২ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে নতুন করে চালু হয় ২০১৮ সালে। ২০২১ সালে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় রাজশাহী রেশম।