বিদ্যালয়ে ঢুকে ছাত্র-শিক্ষককে পেটালো সন্ত্রাসীরা !

0

পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার ভাঙ্গুড়ায় বিদ্যালয়ে ঢুকে সজিব হোসেন (১৪) নামে দশম নামে শ্রেনীর এক ছাত্রকে সন্ত্রাসী কায়দায় তুলে নিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ সময় দুইজন শিক্ষক বাধা দেয়ার চেষ্টাকালে তাদেরও মারধর ও লাঞ্ছিত করা হয়।

পরে স্কুলের প্রধান শিক্ষক থানায় ফোন দিলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফোন না ধরায় জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ কল দিয়ে সাহায্য চান। পরে ভাঙ্গুড়া থানা পুলিশ এসে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন। ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে তাৎক্ষনিক বিদ্যালয়ের পাঠদান সাময়িক বন্ধ ঘোষণ করা হয়েছে।

বুধবার (১৯ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার ভেড়ামারা উদয়ন একাডেমীতে সংঘঠিত এ ঘটনায় সন্ত্রাসী দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য ওমর ফারুক।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুইদিন আগে বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সজিবের সঙ্গে নবম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর বাগবিতণ্ডা হয়। বুধবার সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে দশম শ্রেনীর শিক্ষক ক্লাস শেষে শ্রেনীকক্ষ থেকে বের হয়ে যান।

এরপর বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য ওমর ফারুকের নেতৃত্বে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়ে ভেড়ামারা গ্রামের পারভেজ, গোলাম ফারুক, আকাশ, রনি, মাইনুল ও বাবুসহ দশ বারো জনের একটি সন্ত্রাসী দল দশম শ্রেণীতে প্রবেশ করে শিক্ষার্থী সজিবকে মারধোর করতে করতে বিদ্যালয়ের বাইরে নিয়ে যাওয়া চেষ্টা করে।

এসময় বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক আব্দুস সালাম ও বিজ্ঞান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম এগিয়ে এলে তাদেরকেও মারধর করে ঐ সন্ত্রাসীরা। এরপর সজিব কে তারা তুলে নিয়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনের বাইরে সড়কের উপর বেধরক মারধর করতে থাকলে এলাকার লোকজন তাকে উদ্ধার করে বিদ্যালয়ে ফেরত নিয়ে যায়।

ম্যনেজিং কমিটির সদস্য ওমর ফারুক এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। এরপরে বিদ্যালয়ের ছাত্ররা একজোট হয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বাজার এলাকায় ময়নুলের দোকান ঘর ভাঙচুর করে।

হামলার নেতৃত্ব দেওয়া গোলাম ফারুক স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলামের ছেলে ও রনি স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি টুকু আহমেদের ভাতিজা।

এদিকে এই ঘটনায় বিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক বারবার থানার ওসিকে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। পরে শিক্ষকরা ৯৯৯ এ কল করে বিষয়টি জানালে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক শামীম আহমেদ বলেন, দীর্ঘক্ষণ থানার ওসিকে ফোন দিয়ে পাওয়া যায়নি। পরে ৯৯৯ এ ফোন দেওয়া হয়। একইসাথে ইউনিয়নের বিট অফিসার এসআই তাহেরকে ফোন দেওয়া হয়। এরপর প্রায় পৌনে এক ঘন্টা পরে পুলিশ আসলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পুলিশ আগে আসলে এমন বড় দুর্ঘটনা ঘটতো না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব হেদায়েতুল হক জানান, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনা করে বিদ্যালয়ের পাঠদান সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত বহিরাগতদের বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ওমর ফারুক বলেন, দুইদিন আগের ঘটনাটি শোনার জন্য তিনি বিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। তিনি দুইতলায় শিক্ষকদের সাথে কথা বলার সময় তার সাথে থাকা ছেলেরা সজিবকে মারধর করে। বিষয়টি খুবই খারাপ করেছে। আমাকে দোষারোপ করা ভুল হচ্ছে।

পাবনা জজকোর্টে একটি কাজে ব্যাস্ত থাকায় কল দিতে একটু দেরি হয়েছে স্বীকার করে ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে বিট অফিসার এসআই তাহেরকে পাঠানো হয়েছে। বিদ্যালয় কর্তপক্ষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন, এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। খোঁজ খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.