লোডশেডিং কমেছে, শীতে আরো কমার আশা
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : অসহনীয় লোডশেডিং পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধীরে ধীরে লোডশেডিং আরো কমে আসবে। শীতে লোডশেডিং পরিস্থিতির উন্নতি হবে। গত ২ সপ্তাহ আগেও রাজধানীতে ৫ ঘণ্টার বেশি এবং সারাদেশে ৮ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং করা হচ্ছিল। ঘাটতি ছিলো দেড় হাজার মেগাওয়াটের বেশি, সেখানে গত ২১ অক্টোবর থেকে ঘাটতি গড়ে ৫০০ মেগাওয়াটের নেমে এসেছে।
বিপিডিবির ওয়েব সাইটে দেয়া তথ্যানুযায়ী, গত ১৯ অক্টোবর ঘাটতি ছিলো ১৪৭৫ মেগাওয়াট, ২০ অক্টোবর ঘাটতি ছিলো ১০৩৯ মেগাওয়াট, ২১ অক্টোবর ঘাটতি ছিলো ১৮৪ মেগাওয়াট, ২২ অক্টোবর ঘাটতি ছিলো ৫১৩ মেগাওয়াট আর গত বৃহস্পতিবার ঘাটতি ছিলো ৪৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
পিডিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গত ২ সপ্তাহের পরিসংখ্যানই বলে দেয় দেশে এখন অসহনীয় লোডশেডিং পরিস্থিতি নেই।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম ঊর্ধ্বমুখী। সরকার এ খাতে বহু বছর ভর্তুকি দিয়েছে। সাশ্রয়ের জন্য এখন আমরা কিছুটা লোডশেডিং দিচ্ছি। তবে আমরা আশাবাদী, শীত এলে চাহিদা কমে গেলে লোডশেডিং ঠিক হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করার পরও আমাদের পরিস্থিতি ভালো ছিল। কিন্তু জ্বালানি সংকটে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছি না। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আনতে অতিরিক্ত ব্যয়ের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এখন যদি এক জাহাজ গ্যাস আনা হয় তাহলে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। কিন্তু ওই গ্যাস বিক্রি করে ৫৮ কোটি টাকা পাওয়া যাবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিকল্প জ্বালানির বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসতে শুরু করেছে। কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে আগামী গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। কিন্তু কয়লার দামও বেড়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি এর চাইতে যেন খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেছেন, বিদ্যুতের বর্তমান পরিস্থিতি সাময়িক। খুব দ্রুত সমস্যা কেটে যাবে। শীত এলে বিদ্যুতের চাহিদা কমে আসবে। আগামী ডিসেম্বর থেকে এক এক করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চচালু হবে। একই সময়ে সঞ্চালন লাইনের কাজও শেষ হবে। সব মিলিয়ে আমরা আশা করছি, আগামী ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী সময়ে আমাদের লোডশেডিং থাকবে না।
তিনি বলেন, ‘দেশে যত শিল্পকারখানা বাড়বে, বিদ্যুতের চাহিদা তত বাড়বে। সেই বিষয়টি বিবেচনা করেই মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সোলার হতে পারে বড় সমাধান। সোলার দিয়ে চাহিদার বড় একটি অংশ মোকাবিলা করার চেষ্টা চলছে।’
পিডিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘বৈশ্বিক অস্থিরতা, ডলার ও জ্বালানি সংকট থেকে তো আমরা বিচ্ছিন্ন নই। যার কারণে জ্বালানি সাপ্লাই চেইনের ক্ষেত্রে কিছু বিঘ্ন হয় এবং হচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে সহসাই আমরা হয়তো এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ করতে পারবো বলে আশা করছি।’
ডিপিডিসির বিকাশ দেওয়ান সময়ের আলোকে বলেন, সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় লোডশেডিং পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী কোনো কোনো এলাকায় ১ ঘণ্টা এবং কোনো কোনো এলাকায় ২ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
এ ছাড়া চাহিদার সঙ্গে উৎপাদন বাড়লেও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বেশি। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ করা হয়েছে। দেশীয় গ্যাসের উৎপাদনও কমছে। এদিকে, দেশে রিজার্ভ সংকট রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল তেল ও গ্যাসের সংগ্রহ না করতে পারলে আসন্ন গরমে লোডশেডিং পরিস্থিতির আবারো অবনতি হতে পারে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো যত তাড়াতাড়ি উৎপাদনে আসবে পরিস্থিতির তত তাড়াতাড়ি উন্নতি হবে।
চলমান বিদ্যুৎ-জ্বালানি পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, ‘দেশের বিদ্যুৎ খাত চরম সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অবস্থা খুবই শোচনীয়। এখন খুব বেশি কিছু করার নেই।’
তিনি বলেন, শীতে বিদ্যুতে চাহিদা কিছুটা কমে, তখন লোডশেডিং পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হবে। কিন্তু এটা সমাধান নয়। জ্বালানির সংকট নিরসনের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো দ্রুত উৎপাদনে আনার চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ ব্যবহারে কৃচ্ছ্রসাধন চালিয়ে যেতেই হবে।