বঙ্গবন্ধু টানেলে গাড়ি চলবে জানুয়ারিতে

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব বলেন, ‘এই টানেলের কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ হয়ে গেছে। শুধু এখন ফিনিশিং ওয়ার্ক চলছে। আমরা এই বছরের মধ্যে চেয়েছিলাম একটা আনন্দ দিয়ে শুরু করা যাক। আর যেহেতু একটা টিউবের পূর্ত কাজ শেষ হয়েছে, এখন আমরা সেটার উদযাপন করছি। ঈদের আগে যেমন চাঁদরাত উদযাপন করি, এখন সেই চাঁদরাত এখানে।’

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে আগামী বছরের জানুয়ারিতে গাড়ি চলাচল করবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস। টানেলের দক্ষিণ টিউবের পূর্তকাজ সমাপ্তি উদ্বোধনের আগের দিন শুক্রবার প্রকল্প এলাকায় গিয়ে এ কথা জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে টানেলের ওই টিউবের পূর্তকাজ সমাপ্তির উদ্বোধন করবেন।

ঢাকা থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে এ টানেল। এর মধ্য দিয়ে ৫ মিনিটেই চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে যাওয়া যাবে আনোয়ারায়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে একটা নতুন দিগন্ত সূচনা করেছি। আমরা খুব আনন্দিত ও উদ্ভাসিত।’

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শনিবার দক্ষিণ টিউবের পূর্তকাজ শেষ হওয়ার বিষয়টি উদ্বোধন করবেন। নির্মাণকাজ শেষ হলে টানেলের চূড়ান্ত উদ্বোধন করবেন সরকারপ্রধান। সচিব বলেন, ‘এই টানেলের কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ হয়ে গেছে। শুধু এখন ফিনিশিং ওয়ার্ক চলছে। আমরা এই বছরের মধ্যে চেয়েছিলাম একটা আনন্দ দিয়ে শুরু করা যাক।

‘আর যেহেতু একটা টিউবের পূর্ত কাজ শেষ হয়েছে, এখন আমরা সেটার উদযাপন করছি। ঈদের আগে যেমন চাঁদরাত উদযাপন করি, এখন সেই চাঁদরাত এখানে।’ জানুয়ারিতে কাজ পুরোপুরি শেষ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটার দুইটা টিউব আছে। একটার পূর্ত কাজ শেষ হয়েছে পুরোপুরি।’

প্রকল্পের মেয়াদ ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘দুনিয়ার ভেতরে সব কি দাঁড়ি, কমা দিয়ে চলে? একটা বাস্তবতার ভিত্তিতে চলছে। যেটা ডিসেম্বরে শেষ করার কথা, সেটা জানুয়ারিতে শেষ হবে। এক-দুই মাসে তেমন কিছু হবে না।’

প্রকল্পটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব বলেন, ‘এটা বাংলাদেশের জাতীয় বীরত্বের কাহিনী। একটা সবসময় নদী নিয়ে দুঃখের গান গাওয়া হতো। এখন সেই নদীর তলদেশ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছি।

‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলতে অবকাঠামো উন্নয়ন বোঝানো হয়। আর সেটার চূড়ান্ত হচ্ছে কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে টানেল।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছেন। সেখানে যেমন দেশীয় বিনিয়োগ থাকবে, তেমন থাকবে বিদেশি বিনিয়োগ। আর তার জন্য দরকার রাস্তাঘাট, ব্রিজ আর বন্দর। এর সঙ্গে মাতারবাড়ীর একটা সম্পর্ক আছে। এ ছাড়া ঢাকার সঙ্গে কক্সবাজার যাওয়ার দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমে যাচ্ছে।’ সচিব আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি আল্লাহর রহমতে প্রধানমন্ত্রী ভালো জায়গায় নিয়ে গেছেন। কোনোভাবে এটা দমানো সম্ভব না।’

একটা উদাহরণ দিয়ে সরকারপ্রধানের মুখ্যসচিব বলেন, ‘আপনাদের পত্রপত্রিকায় অনেকেই উদ্বিগ্ন ছিল যে, বাংলাদেশের কী হবে। বাংলাদেশ যখন আইএমএফ আসছে, তখন তারা বাংলাদেশের প্রতিটা সেক্টর পর্যালোচনা করে দেখেছে। যদি মার্কিং করা হয় তাহলে বাংলাদেশ পাবে এ প্লাস। আর এটা এক দিনে পায়নি। বিভিন্ন নীতি ও উন্নয়ন থেকে হয়েছে। আর তারা এতে ইমপ্রেসড হয়েছে।’

সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন বলেন, ‘আগামীকাল আমাদের জন্য একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল যেটা নদীর নিচ দিয়ে গিয়েছে এবং এক প্রান্তে পতঙ্গো ও আরেক প্রান্তে আনোয়ারাকে সংযুক্ত করেছে, সেই টানেলের দুটো টিউবের দক্ষিণ টিউব যেটি, সেটির পূর্ত কাজের সমাপনী উদযাপন করব আমরা।

‘এখনো ইলেকট্রো মেকানিক্যাল কাজগুলো বাকি রয়েছে। সেই সঙ্গে উত্তর টিউবের পূর্তকাজ কিছুটা বাকি আছে। আমরা জানুয়ারি মাসে যান চলাচলের জন্য খুলে দেব।’ তিনি বলেন, ‘টোটাল কাজ হয়েছে ৯৪ শতাংশের বেশি। এই টানেল উদ্বোধনে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে ০.১৬৬ ভাগ।’

প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ বলেন, ‘এখন প্রতিটি সিস্টেম কাজ করছে আলাদাভাবে। তারপর এগুলো আমাদের কন্ট্রোল সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত হবে।

‘সব মিলিয়ে জানুয়ারির শেষ দিকে (কাজ) শেষ হবে বলে আশা করছি।’ প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, ‘আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। আর সেগুলো আমরা ওভারকাম করেছি। ‘প্রথম টিউব ১৭ মাস লাগলেও পরেরটা ১০ মাসে সম্পন্ন হয়েছে। করোনার জন্য আমরা এক মাস কাজ করতে পারি নাই।’

টানেল নিয়ে যত তথ্য : নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল এটি। কর্ণফুলী নদীর দুই তীরকে সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেল প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেতু বিভাগ।

সেতু বিভাগ থেকে জানা যায়, দুই টিউব সংবলিত মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার। এই দুই টিউব তিনটি সংযোগপথের (ক্রস প্যাসেজ) মাধ্যমে যুক্ত থাকবে। বিপদের সময়ে অন্য টিউবে গমনের জন্য এই ক্রস প্যাসেজগুলো ব্যবহার হবে। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২.৪৫ কিলোমিটার এবং ভেতরের ব্যাস ১০.৮০ মিটার।

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং টানেল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন। ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন।

সেতু বিভাগ বলছে, চীনের এক্সিম ব্যাংক এই প্রকল্পের জন্য ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দেয়। বাকি টাকার জোগান দেয় বাংলাদেশ সরকার। চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি টানেলটি নির্মাণ করছে। ৩.৩২ কিলোমিটার টানেলটি কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছে পশ্চিম প্রান্তে পতেঙ্গা নেভাল একাডেমির কাছ থেকে শুরু হয়ে পূর্ব প্রান্তে চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা (সিইউএফএল) এবং কর্ণফুলী সার কারখানার (কাফকো) মাঝখান দিয়ে আনোয়ারা প্রান্তে পৌঁছেছে।

মূল টানেলের সঙ্গে পশ্চিম প্রান্তে (পতেঙ্গা) দশমিক ৫৫০ কিলোমিটার ও পূর্ব প্রান্তে (আনোয়ার) ৪.৮ কিলোমিটারসহ মোট ৫.৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক রয়েছে। এ ছাড়াও আনোয়ারা প্রান্তে সংযোগ সড়কের সঙ্গে ৭২৭ মিটার ভায়াডাক্ট (উড়ালসড়ক) রয়েছে।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.